২০০৫ থেকে ২০২০ সাল। মাঝখানে কেটেছে ১৫ বছর। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচারকার্যে এই সময় গত হয়েছে সিলেট ও হবিগঞ্জের আদালতে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ৯০ কার্যদিবসে মামলা নিস্পত্তির নিয়ম থাকলেও এখনো নিস্পত্তি হয়নি বিচার কাজ। দীর্ঘ সময়ে মামলার ১৭১ সাক্ষির মধ্যে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে মাত্র ৪৩ জনের। আর হত্যা মামলার সাথে দাখিলকৃত বিস্ফোরক আইনের মামলাটি ১৫ বছরপর গত ২২ অক্টোবর চার্জ গঠন করে বিচর শুরু করেছেন সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শারিয়ার কবির।
ওই ট্রাইব্যুনালে সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলার সাক্ষির জন্য আগামী ২৮ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। আলোচিত এ মামলাটি চলাকালিন সময়ে ছয় বিচারকের হাত বদল হয়েছে। কিন্তু মামলাটি আর কত প্রলম্বিত হবে, সে প্রশ্ন এখন সিলেটের মানুষের মুখে মুখে। বিচার ব্যবস্থায় প্রলম্বিত হওয়ায় খোদ আইনজীবীরাও হতাশ। অপরদিকে, মামলাটি পুনরায় তদন্ত চাচ্ছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত শতাধিক। নিহত অন্যরা হলেন-কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী। দেশ-বিদেশে আলোচিত এই মামলাটি কবে নাগাদ নিষ্পত্তি হতে পারে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না মামলার বাদি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও। ফলে কিবরিয়া পরিবার ও সাধারণ মানুষ এই মামলাটির গতিপ্রকৃতি নিয়ে রয়েছেন হতাশ।
তবে আশার বাণী শুনিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (সাবেক) আইনজীবী কিশোর কুমার কর। তিনি জানান, মামলাটি দ্রুত সময়ে নিস্পত্তি করতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। মামলা নিস্পত্তিতে ধীর গতির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মরহুম কিবরিয়া পরিবারের আবেদনে মামলার তদন্ত বেশ কয়েকবার পিছিয়েছে। সাক্ষিরাও আদালতমুখী হচ্ছেন না। এরই মধ্যে ৪৩ জন সাক্ষি হয়ে গেছে উল্লেখ করেন তিনি আরো বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, কারাগারে আটক থাকা আসামীরা আদালতে আসছেন না। ফলে রাষ্ট্র পক্ষে সাক্ষি এলেও আদালত নিচ্ছেন না। তাই এ মামলাটি দ্রুত শেষ করতে হলে কারাগারে থাকা আসামীদেরকে আধুনিকভাবে ভিডিও কনফারেন্সে রেখে সাক্ষি নিয়ে দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।
আলোচিত এই হত্যা মামলার বাদী হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মজিদ খান এমপি বলেন, মামলায় স্বাক্ষীর সংখ্যা বেশি। ইতোমধ্যে ৪৩ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। এছাড়া আসামীদের অনিয়মিত হাজিরার কারণে অনাকাঙ্খিতভাবে এই মামলার বিচার কার্য বিলম্বিত হচ্ছে। তবে সরকারের চলিত মেয়াদেই এই হত্যা মামলার সুষ্ঠবিচার কাজ সম্পন্ন হবে এবং দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, তিনি বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তিনিসহ তার আত্মীয় বেশ কয়েকজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বার বার বলে আসছি “একটি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া সুষ্ঠু বিচার হবে না” তাই মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। তাই মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও মরহুম আইনজীবী মাহবুবে আলম’র দুটি (পেড) প্রত্যয়ন ও আবেদন আদালতে দেয়া হয়েছে। যা মূল নথিতে সংযুক্ত রয়েছে।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত শতাধিক।নিহত অন্যরা হলেন-কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী।
হত্যাকান্ডের সাড়ে ৯ বছর পর সম্পূরক চার্জশীট দাখিলের মাধ্যমে শুরু হয় বিচার কাজ। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধায্য ছিল। ওই দিনও হাজির হননি সাক্ষিরা। এরইমধ্যে সিলেটের আদালতেই ছয় বিচারকের হাত বদল হয়েছে মামলাটি। তারা হলেন-সিলেট জেলা ও দায়রা জজ মমিনুল্লাহ, মনির আহমদ পাটোয়ারী, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামী, দিলীপ কুমার দেবনাথ, মকবুল আহসান ও শাহরিয়ার কবির। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহরিয়ার কবির মামলাটির বিচার কার্য পরিচালনা করছেন। এরআগে বিচারকের দীর্ঘ ছুটি, আসামি, সাক্ষিদের অনুপস্থিতির কারণে প্রলম্বিত হয়েএই মামলার বিচার কার্য।
হবিগঞ্জ আদালতে জিআর ২৬/২০০৫ মূলে রুজু হয় মামলাটি। ২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল দায়রা ৫০/২০০৫ মূলে মামলাটি প্রথম হবিগঞ্জের আদালতে বিচার শুরু হয়। হবিগঞ্জ দায়রা জজ আজিজুল ইসলামের আদালতে নিন্ম আদালত থেকে আসে ২০০৫ সালের ১১ মে। ওই বছরের ২৫ মে বিচার নিস্পত্তির জন্য সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয় মামলাটি। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারক ছিলেন বিপ্লব গোস্বামী। ওই সময় আসামি ছিল মোট ১০ জন। মামলার স্বাক্ষি ছিল ৬৬ জন। আসামি ছিলেন, একেএম আবদুল কাইয়ুম, জয়নাল আবেদীন, জালাল, জমির আলী মুমিন, ওরফে মুমিন আলী, তাজুল ইসলাম, সাহেদ আলী ওরফে ছন্দু মিয়া, সেলিম মিয়া, আয়াত আলী, মুহিবুর রহমান ও কাজল মিয়া। এরমধ্যে মুহিব ও কাজল ছাড়া অন্যরা কারাগারে ছিলেন।
এরআগে ২০০৫ সালের ১৯ মার্চ তদন্তের দায়িত্বে থাকা মুন্সি আতিকুর রহমান আদালতে প্রথম অভিযোগ পত্র (নং-৪১) দাখিল করেন। অভিযোগপত্রের বিপরীতে বাদি আবদুল মজিদ খান নারাজি দিলে তা খারিজ করা হয়। ২০০৫ সালের ৩১ মে হবিগঞ্জের ১০ নং লস্করপুর ইউনিয়নের আদ্যপাশা গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মো. আবদুল মতিনের দাখিল করা একটি দরখাস্তে সিআইডি কর্তৃক দাখিলকৃত ফৌজদারী কার্যবিধি ১৭৩ ধারা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ্যে না আসায় আপত্তি ও নারাজি প্রার্থনা করেন। খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল রিভিশন মামলা (নং-৮৫/২০০৫) দাখিল করণে তাও খারিজ করেন দায়রা জজ আদালত।
পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে ক্রিমিনাল মিসকেস (নং-৬০০৮/০৫) দাখিল করেন মামলার বাদি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান। ওই বছরের ২১ নভেম্বর উচ্চ আদালত রুল খারিজ করেন। পরবর্তীতে ওই আদেশের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল পিটিশন লিভ টু আপীল (নং-১০০/০৬) দাখিল করলে ওই বছরের ২১ মার্চ তা খারিজ করে কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের আদেশে ফের বিচার কাজ শুরু হয়। ১/১১‘র সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠার নির্দেশে মামলার পূণ:তদন্ত শুরু হয়। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে ২০০৭ সালের ৬ মে অপরাধ তদন্ত বিভাগ দসিআইডি’র এএসপি রফিকুল ইসলামের উপর ন্যাস্ত হয়। এই কর্মকর্তার দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন মেজর জেনারেল সাদেক হাসান রুমিসহ উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের বক্তব্য পর্যালোচনা ও কোনো কোনো আসামির ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে মামলার ক্লু পেয়েছেন। তার যথাযথ মূল্যায়ন না করে কেবল একজন প্রতিমন্ত্রী বাবরকে আসামি শ্রেনীভূক্ত করা হয়েছে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বাবর ছাড়াও চার দলীয় জোট সরকারের অন্য মন্ত্রী নেতাকর্মীরে পরস্পর যোগসাজসে হরকাতুল জিহাদ সদস্যদের সহায়তায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ এবং বৈদ্যের বাজার জনসভায় মামলার ঘটনা সংগঠিত করেছেন। দরখাস্তের পক্ষে আরো বক্তব্য দেওয়া হয় ভিকটিমের স্ত্রী ও ছেলেকে তদন্ত কর্মকর্তা গুরুত্বসহকারে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। তাদের পরিবারের কারো নাম সাক্ষী কলামে নেই। সিআইডি’র তৎকালিন সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২০ জুন লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নানসহ আরও ১৪ জনকে যুক্ত করে ২৪ আসামির বিরুদ্ধে আলোচিত মামলার অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি মামলাটি আবারো হবিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গ্রহণ করে।
সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল (দায়রা ১১/০৬) মূলে মামলাটি ২০১২ সাল পর্যন্ত ১০৫টি শোনানীর আদেশ হয়। ওই বছরের ৫ জানুয়ারি আদালতের পিপি কিশোর কুমার কর সম্পূরক অভিযোগ পত্রে অভিযুক্তদের নাম স্পষ্ট করে উল্লেখের নিমিত্তে আইনগত জটিলতা নিরসনের জন্য অধিকতর তদন্তের জন্য প্রার্থনা করেন। ২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া চার্জশীটের উপর হবিগঞ্জ জুডিসিয়াল আদালতে নারাজি আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার মুল নথি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে থাকায় বিচারক রাজিব কুমার বিশ্বাস উপ-নথির মাধ্যমে আবেদনটি সিলেটে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি হত্যাকান্ডের অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্রের নারাজি আবেদন গ্রহণ করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার দেবনাথ। তিনি সিনিয়র পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর সিআইডির এএসপি মেহেরুন নেছা দীর্ঘ তদন্ত শেষে সাড়ে ৯ বছর পর ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তারের আদালতে কিবরিয়া হত্যা মামলার নতুন ১১ জনকে অন্তর্ভূক্ত করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ৩য় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অন্তর্ভুক্ত আসামীরা হলেন- সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জি কে গউছ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি তাজ উদ্দিন, মুফতি সফিকুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, বদরুল, মহিবুর রহমান, কাজল আহমেদ, হাফেজ ইয়াহিয়া। একই সাথে পূর্বের চার্জশীটভূক্ত ইউসুফ বিন শরীফ, আবু বক্কর আবদুল করিম ও মরহুম আহছান উল্লাহকে চার্জশীট থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন।
হবিগঞ্জ আদালতে ২০১৫ সালের ১৪ মে পর্যন্ত মামলাটির শোনানী চলে। এরপর ২০১৫ সালের জুনে মামলাটি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ৭ জুন হবিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলা যায় জেলা ও দায়রা জজ হবিগঞ্জ আদালতে। ওই বছরের ১০ জুন ওই আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ১৮০ নং আদেশে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন বিচারক আতাব উল্লাহ। এরপর ১১ জুন শোনানীর দিন ধার্য্য করে দেন। এরপর ২১ জুন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মনির আহমদ পাটোয়ারির আদালতে আসে। মামলায় ২১ আসামি ও ১৭১ সাক্ষি বর্ধিত হয়ে আসে। সে সময় আসামিদের ১০ জন পলাতক ছিল। ১৪ আসামি ছিল কারাগারে। ৮জন উচ্চ আদালতের জামিনে ছিলেন। এরই মধ্যে সিলেট কোর্টে শোনানী আদেশ হয় ১০৫টি। বদলীর পর হবিগঞ্জ আদালতে আদেশ গয় ৭৪টি। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় মোট ৩২১টি তারিখ গত হয়েছে। আগামি সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য্য রয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি।
শাহএএমএস কিবরিয়া ১৯৩১ সালের ১ মে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার জালালশাপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শাহ ইমতিয়াজ আলী শিক্ষা কর্মকর্তা ছিলেন। মেধাবী ছাত্র কিবরিয়া ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৫৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৫৩ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি একজন সফল কুটনৈতিক হিসেবে বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারিও ছিলেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তার ক্যারিয়ারকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশে জনমত গঠন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুনর্গঠনের কাজে যোগ দেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মনোনীত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই) আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হন।