1. hmgrobbani@yahoo.com : admin :
  2. news@soroborno.com : Md. Rabbani : Md. Rabbani
  3. sayefrahman7@gmail.com : Sayef Rahman : Sayef Rahman
বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন

‘অর্থসম্পদের দিকে দৃষ্টি ছিল না কামালের’

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১

ঢাকা: ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক চক্রান্ত করে শেখ কামালকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাবা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি বা জাতির পিতার হলেও অর্থসম্পদের দিকে তার কোনো দৃষ্টি ছিল না। ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে তার কোনো দৃষ্টি ছিল না। দেশকে গড়ে তোলা, দেশের মানুষের পাশে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অঙ্গণ বা ক্রীড়া অঙ্গণের উন্নতি করাই ছিল তার কাছে সব থেকে বড় কথা।

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সকালে ‘শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ এবং শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শহিদ শেখ কামাল অডিটরিয়ামে যুক্ত ছিলেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শহিদ শেখ কামালের বহুমাত্রিক প্রতিভার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে স্মৃতিচারণ করেন তার বড় বোন শেখ হাসিনা। কামাল বেঁচে থাকলে দেশকে আরও অনেক কিছু দিতে পারত বলেও আক্ষেপ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু লেখাপড়া না, তখন একটা যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে তুলতে যেখানে যখন যতটুকু কাজ করার, কামাল খুব আন্তরিকার সাথেই সেই কাজগুলো করত। ক্রীড়াঙ্গণকে নতুনভাবে ঢেলে সাজায়। সংস্কৃতি জগতেও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটা চক্রান্ত করে কামালকে গুলি করা হয়। তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সে যখন বেঁচে যায়, তখন তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়।

শেখ কামাল অত্যন্ত সাদাসিধা জীবনযাপন করতেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবুল ফজল সাহেব একটা লেখা লিখেছিলেন, সেটা যদি কেউ পড়েন তাহলে দেখবেন কিভাবে কামালের অমায়িকতা, সাদাসিধা জীবনযাপন চলাফেরা করতো, সেটাই তিনি তুলে ধরেছেন।

বড় বোন হিসাবে আরও স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি ১৯৭৫ সালে যখন জার্মানিতে যাই তখন কামালের বিয়ে হয়েছে। ১৪ জুলাই কামালের বিয়ে হয়। আর ১৭ জুলাই জামালের বিয়ে হয়। তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমরা যাচ্ছি বাইরে তোর জন্য কী নিয়ে আসব? ও কিন্তু নিজের জন্য কিচ্ছু চায়নি। আমাকে বলল তুমি আমার আবাহনী ক্লাবের ফুটবল খেলোয়াড়দের জন্য বুট নিয়ে এসো এবং সে নামও বলে দিল। আমি আমার ডায়েরি বের করে বললাম, তুমি আমাকে লিখে দাও কী বুট? লিখল এডিডাস বুট, তার লেখা আছে।

‘নিজের জন্য চাওয়া বা নতুন বিয়ে হয়েছে তার বউয়ের জন্য কিছু চাওয়া, সেটা না। ওই খেলোয়াড়দের জন্য কী দরকার, ওইটাই তার কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেখান থেকে তার মানসিকতাটা বোঝা যায়।- বলেন শেখ হাসিনা।

১৫ আগস্টের নির্মম নৃশংসতার কথা স্মরণ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া পড়েন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, যে জাতির জন্য আমার বাবা এতো ত্যাগ স্বীকার করলেন। বছরের পর বছর জেল খাটলেন। বারবার যাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হল। নিজের জীবনকে তিনি তুচ্ছ জ্ঞান করে এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করে এদেশকে স্বাধীন করলেন। এই বাঙালি জাতিকে একটা পতাকা দিলেন। একটা স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিলেন। একটা জাতি হিসাবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিলেন। যাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করলেন, যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ তিনি গড়ে তুলছেন। সেখানে এই দেশের কিছু সংখ্যক মানুষ ষড়যন্ত্র করে কী নির্মমভাবে হত্যা করল।

১৫ আগস্ট হামলার বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব থেকে ট্রাজেডি কামালের জন্য। নূর আর কামাল একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসাবে কাজ করেছে। যখন বাসায় আক্রমণ হয় তখন কামাল নিচের বারান্দায় চলে যায়। ও যখন দেখে নূর হুদা ঢুকছে, ও তাদেরকে বলেছিল আপনারা এসে গেছেন, খুব ভালো হয়েছে। দেখেন বাসায় কারা আক্রমণ করেছে; এই কথা শেষ করতেও পারেনি। নূরের হাতের অস্ত্রই গর্জে ওঠে। ওরা ওখানেই কামালকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা এই বাংলাদেশে ঘটে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট যদি বাঙালির জীবনে না ঘটত তাহলে এই বাঙালি অনেক আগেই বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলত। এই হত্যার পর বাংলাদেশকে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা টিকে নাই। কাজেই চক্রান্তটা কোথায় কিভাবে ছিল সেটা নিশ্চয়ই দেশের মানুষ এখন এতোদিনে উপলব্ধি করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার আব্বা (বঙ্গবন্ধু) যেমন সারাজীবন এদেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন সন্তান হিসাবে আমরাও একদিকে যেমন পিতৃস্নেহ বঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু আমরা কখনো সেই কষ্টকে কষ্ট মনে করিনি। আমার মা সেটা করতে দেননি বা কোনো হাহুতাশ, কোনো অতিরিক্ত কিছু চাওয়া; সেগুলো আমাদের ছিল না। সাধারণভাবে জীবনযাপন করা, একটা আদর্শ নিয়ে চলা এবং দেশকে ভালবাসা, দেশের মানুষকে ভালোবাসা, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা, এটাই আমাদের শিক্ষা। সেই শিক্ষাই কামাল সবসময় অনুসরণ করেছে।

ছোট ভাই কামালের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বড় বোন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আর রেহানা দুইজন বিদেশে ছিলাম বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু হারিয়েছি আমাদের সবাইকে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের জন্য যদি কিছু করে যেতে পারি সেটাই সব থেকে বড়।

ক্রীড়া অঙ্গণে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ যারা পুরষ্কার পেয়েছে তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক সেটাই আমি চাই। কারণ যেকোনো একটা জাতির জন্য শিক্ষা, ক্রীড়া সংস্কৃতি চর্চা; এগুলো অপরিহার্য একটি জাতিকে গড়ার জন্য। এই পুরষ্কারের মধ্য দিয়ে শেখ কামালের প্রতি সম্মান দেখানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি