অস্ট্রেলিয়ার ৮ উইকেটের জবাব ৮ উইকেটেই দিল ভারত

ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়। না, অস্ট্রেলিয়াকে ইটের জবাবটা পাটকেল দিয়ে দেয়নি ভারত। ইটের জবাবটা ইট দিয়েই দিল ভারত। অ্যাডিলেডের প্রথম টেস্টে ভারতকে ‘৩৬’-এর লজ্জা উপহার দিয়ে অস্ট্রেলিয়া তুলে নিয়েছিল ৮ উইকেটের জয়। অজিঙ্কা রাহানের তার জবাবটা দিল মেলবোর্নে সেই ৮ উইকেটেই জিতে।

হ্যাঁ, মেলবো্র্নের বক্সিং ডে টেস্টে ৮ উইকেটে তুলে নিয়েছে সফরকারী ভারত। দারুণ এই জয়ে পিছিয়ে পড়া ৪ ম্যাচের টেস্ট সিরিজটিতে ১-১ সমতা ফেরাল সফরকারী দলটি। চতুর্থ ইনিংসে ভারতকে মাত্র ৭০ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। সহজ এই লক্ষ্যটা মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই ছুঁয়ে ফেলেছে ভারত।

অ্যাডিলেডের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৬ রানে অলআউট হয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ নিম্ন রানের লজ্জার রেকর্ড গড়ে ভারত। ওই ‘৩৬’ বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল ভারত। কঠিন এই অবস্থার মধ্যেই আবার নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ফিরে যান বাড়ি। প্রথম সন্তান জন্মের সময়টা স্ত্রীর পাশে থাকবেন বলেই কোহলি ফিরে আসেন ভারতে। কোহলির মতো ব্যাটসম্যানকে হারানোটা ভারতকে আরও চাপে ফেলে দেয়।

কিন্তু সেই চাপকে কি দুর্দান্তভাবেই না শক্তিতে রূপান্তর করে মেলবোর্নে জয় তুলে নিল রাহানের ভারত! ৮ উইকেটের জয়টাও দাপটের সঙ্গেই। টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল ভারতের হাতে। দ্বিতীয়, তৃতীয় দিনে সেই নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত হয়েছে। যার ফসল হিসেবে চতুর্থ দিনের দেড় সেশনেই ভারত ভাসল জয় আনন্দে।

ভারত জয় দেখছিল তৃতীয় দিন শেষেই। আজ চতুর্থ দিনে সেই দেখা জয়টাকে দ্রুতই তরান্বিত করেছে ভারত। আগের দিনের ৬ উইকেটে ১৩৩ রান নিয়ে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া আজ শেষ ৪ উইকেটে আর ৬৭ রান যোগ করে অলআউট হয় ২০০ রানে। প্রথম ইনিংসের ১৩১ রানের ঋণ শুধিয়ে অসিরা লিড পায় মাত্র ৬৯ রানের। চতুর্থ ইনিংসে তাই ভারতের জয় লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭০। এ আর এমন কি! লক্ষ্যটা খুবই সহজ। ভারত কাজটা সেরেছেও সহজেই। তবে তার আগে একটু ভয় তো ছিলই! অ্যাডিলেডের ওই ‘৩৬’ লজ্জার স্মৃতি যে টাটকা।

অ্যাডিলেডের ওই ‘৩৬’ লজ্জার মনের ভয়টা আজ সকালে ক্ষণিকের জন্য বাইরেও টেনে এনেছিলেন মিচেল স্টা্র্ক ও প্যাট কামিন্স। ৭০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা ভারতের দুই ওপেনারকেই তারা ফিরিয়ে দেন ১৯ রানের মধ্যে। স্বাভাবিকভাবেই অ্যাডিলেডের ‘৩৬’ ধাক্কার ভয়টা আজ মেলবোর্নেও চেপে ধরে ভারতকে! তবে সুবনম গিল ও অধিনায়ক রাহানে মিলে দ্রুতই সেই ভয় কাটিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে। ভারতীয়দের ভয়ার্ত মুখে দ্রুতই ফুটিয়ে তুলেন বিজয়ানন্দের চওড়া হাসি! দলকে জয় পাইয়ে দিতে সুবনম গিল খেলেছেন অপরাজিত ৩৬ রানের ইনিংস। রাহানে খেলেছেন অপরাজিত ২৭ রানের ইনিংস। এই দুজনের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে মাত্র ১৫.৫ ওভারেই ৭০-এর লক্ষ্য ছুঁয়েছে ভারত।

এর আগে আগের দিনের ৬ উইকেটে ১৩৩ রান নিয়ে দিন শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ক্যামেরন গ্রিন ও প্যাট কামিন্স জুটি আরও ২৩ রান করে দলকে পেঁছে দেন ১৫৬ রানে। আরও বিপদজনক হয়ে উঠার আগেই গ্রিন-কামিন্স জুটিটা ভেঙে দেন বুমরাহ। ফিরিয়ে দেন ২২ রান করা প্যাট কামিন্সকে। এরপর দলীয় ১৭৭ রানের মাথায় ক্যামেরন গ্রিনকে বিদায় করেন মোহাম্মদ সিরাজ।

গ্রিন ফিরে যান দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রানের ইনিংস খেলে। এর একটু পর এই সিরাজই ফিরিয়ে দেন নাথান লায়নকে। অস্ট্রেলিয়া পরিণত হয় ৯ উইকেটে ১৮৫ রানের দলে। সেখান থেকে দলকে ঠিক ২০০-তে নিয়ে যান মিচেল স্টার্ক ও হেজলউড জুটি। তারা হয়তো দলকে আরও উপরেই তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন তাদের সেই চাওয়া পূরণ হতে দেননি। হেজলউডের স্টাম্প উপড়ে ফেলার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াকেও উপড়ে ফেলেন তিনি!

ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন সিরাজ। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ, অশ্বিন ও রবিন্দ্র জাদেজা। একটি উইকেট নিয়েছেন উমেশ যাদব।

প্রথম ইনিংসে ১১২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা অজিঙ্কা রাহানে দ্বিতীয় ইনিংসেও করেছেন অপরাজিত ২৭ রান। দলকে দাপুটে জয়ের মূল নায়ক তিনিই। ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটিও উঠেছে তার পকেটেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া ১৯৫ ও ২০০
ভারত ৩২৬ ও ৭০/২
ফল : ভারত ৮ উইকেটে জয়।
ম্যাচসেরা : অজিঙ্কা রাহানে (ভারত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *