সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: দেশে আগামী ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা বাংলাদেশে আসবে। এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেশে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন নিবন্ধনের জন্য ২৬ জানুয়ারি থেকে ‘সুরক্ষা’ নামের একটি মোবাইল ও ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হতে পারে।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) দেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানোর জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, “দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরুর জন্য সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে একটি অ্যাপ্লিকেশন চালুর সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। ‘সুরক্ষা’ নামের একটি মোবাইল ও ওয়েবভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীরা নিবন্ধন করতে পারবেন।”
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বয়ে এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন পেতে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে অনলাইন নিবন্ধন সম্পাদন করতে হবে। নিবন্ধন করতে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট সময় লাগতে পারে।’
ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘জনগণ সরাসরি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে এ নিয়ে কাজ করা হবে। নিবন্ধনের সঙ্গে এনআইডি নম্বর প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে বিধবা বা বয়স্কভাতা পান এমন তালিকাও সংগ্রহ করে দেখা হবে।’
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাদ পড়ার কোনো শঙ্কা নেই জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘যদি কেউ নিবন্ধন না করে, তাকে টিকা দেওয়া হবে না। কারণ আমরা নিবন্ধন তালিকার বাহিরে কাউকেই টিকা দিতে পারব না। টিকা দেওয়ার আগে নিবন্ধন করা জন্য সারাদেশে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘নিরক্ষরদের জন্যও আমাদের ব্যবস্থা থাকবে। তারা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। গ্রাম পর্যায়ে এখন ডিজিটাল সেবা কার্যক্রম চলে গেছে। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ আমাদের সহযোগিতা করতে পারবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ্লিকেশন কিভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে একটি স্লাইড উপস্থাপন করা হয়।
এ সময় দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন বিতরণ কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে অথবা ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে। সেখানে থাকা প্রায় ১৯টি পেশার মধ্যে নিজের বিভাগ বেছে নিতে হবে। এরপর ভ্যাকসিন গ্রহীতাকে এনআইডি নম্বর এবং জন্মতারিখ দিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওয়েবপোর্টাল থেকে ভ্যাকসিন কার্ড প্রদান করা হবে। এরপর সেখান থেকে একটি খুদে বার্তা পাঠানো হবে। যেখানে ভ্যাকসিন দেওয়ার তারিখ উল্লেখ থাকবে। একইসঙ্গে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার বিষয়ে তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হবে। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় ডোজের বিষয়েও একইভাবে তারিখ ও সময় উল্লেখ করে এসএমএস পাঠানো হবে। দুটি ডোজ সংগ্রহ শেষে গ্রহীতা ওয়েবসাইট থেকে ভ্যাকসিন সনদ সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।’
অ্যাপটি যেভাবে কাজ করবে
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুরক্ষা অ্যাপলিকেশনে কেউ প্রবেশ করলে তাকে জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্মতারিখ উল্লেখ করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এ সময় জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দেখে অ্যাপ্লিকেশনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনআইডি ডাটাবেজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বাকি তথ্য পূরণ করে নেবে। এ সময় ভ্যাকসিন গ্রহীতাকে আরও কিছু তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন করার সময়েই ভ্যাকসিন গ্রহীতাকে তার ডায়াবেটিস, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্যান্য রোগ আছে কিনা সেই তথ্যগুলো জানাতে হবে।
পরবর্তীতে নিবন্ধনের জন্য ভ্যাকসিন গ্রহীতাকে তার বর্তমান ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিতে হবে। এ সময় অ্যাপ্লিকেশন থেকে নিবন্ধনকারীর দেওয়া মোবাইল নম্বরে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পৌঁছে যাবে। এই ওটিপি দিয়ে অ্যাপ্লিকেশনটিতে প্রবেশ করতে হবে। সেখান থেকে গ্রহীতার দেওয়া তথ্যানুযায়ী একটি ভ্যাকসিন কার্ড তৈরি করে দেওয়া হবে। সেই কার্ডেই উল্লেখ থাকবে ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ কবে, কখন ও কোন সময়ে দেওয়া হবে।
দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া শেষ হলে গ্রহীতা এই অ্যাপ্লিকেশন থেকেই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র বা সনদ ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এছাড়া যদি কখনও বিশ্বের কোনো দূতাবাস বা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কারও ভ্যাকসিন পাওয়াবিষয়ক তথ্য জানতে চায় তবে সেটি ওয়েবপোর্টালের সাহায্যে জেনে নিতে পারবে।