বহুল প্রত্যাশিত আইফোন ১৫ সিরিজের স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে অ্যাপল। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাপল সদরদফতরে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ওয়ান্ডারলাস্ট বা লঞ্চ ইভেন্টে আইফোন ১৫ এর চারটি ডিভাইস উন্মোচন করা হয়।
নতুন মডেলের আইফোনের সবচেয়ে আলোচিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে টাইপ সি চার্জার পোর্ট। এখন থেকে টাইপ সি ক্যাবল ব্যবহার করে আইফোন চার্জ দেওয়া যাবে। এছাড়া আইফোনের প্রো মডেলে ব্যবহার করা হয়েছে টাইটানিয়াম কেস এবং আরও গতিশীল নতুন চিপ। রয়েছে নতুন উদ্ভাবন অ্যাকশন বাটন।
আইফোন ১৫ এবং ১৫ প্রো স্মার্টফোনে ৬.১ ইঞ্চি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। আইফোন ১৫ প্লাস এবং ১৫ প্রো ম্যাক্সে ব্যবহার করা হয়েছে ৬.৭ ইঞ্চি ডিসপ্লে।
আইফোন ১৫ এবং ১৫ প্লাস
এতদিন আইফোনে চার্জ দিতে হতো লাইটনিং পোর্টের মাধ্যমে। কিন্তু নতুন চারটি মডেলেই টাইপ সি চার্জার পোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে। টাইপ সি চার্জার পোর্ট জনপ্রিয় কেননা বেশিরভাগ ডিভাইসেই এই পোর্ট ব্যবহার করা হয়। এবার আইফোনও টাইপ সি চ চার্জিং ক্যাবলের ব্যবহার করা যাবে।
অ্যাপলের দাবি, আইফোন ১৫ তে আগের মডেলগুলোর চেয়ে অন্তত ২০ গুণ দ্রুত চার্জ হবে। মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নতুন একটি আইন মানতে টাইপ সি পোর্ট ব্যবহার করছে আইফোন। আইন অনুযায়ী, প্রতিটি স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং ক্যামেরায় ২০২৪ সালের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে ইউএসবি সি পোর্ট ব্যবহার করতে হবে। অ্যাপলের এই সিদ্ধান্তে আইফোন ব্যবহারকারীরাও অনেকটা স্বস্তি পেয়েছেন।
আইফোন ১৫তে ওলইডি (অর্গানিক লাইট-ইমিটিং) প্রযুক্তি সমন্বিত একটি সুপার রেটিনা এক্সডিআর স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে স্ক্রিন হবে আরও উজ্জ্বল। নতুন আইফোন যখন সূর্যের আলোতে ব্যবহার করা হবে তখন স্ক্রিন ২০০০ নিট পর্যন্ত উজ্জ্বলতা দিতে সক্ষম, যা আইফোন ১৪ এর চেয়ে দ্বিগুণ। উল্লেখ্য, আলোর উজ্জ্বলতা পরিমাপের একটি একক হলো নিট। অ্যাপল জানিয়েছে, নতুন মডেলে এইচডিআর ছবি আগের চেয়ে আরও ভালো দেখা যাবে।
নতুন আইফোনে থাকছে ৪৮ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরা। এই ক্যামেরার প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এতে অটো পোট্রেট মোড আছে যার ফলে ব্যবহারকারীরা ম্যানুয়ালি মুড চ্যাঞ্জ না করেই পোট্রেট ছবি তুলতে পারবেন।
আইফোন ১৫ এবং ১৫ প্লাসে আইফোন ১৪ মডেলের এ১৬ বায়োনিক চিপ ব্যবহার করা হয়েছে। আইফোন ১৫তে আরও বেশি চার্জধারণ সক্ষমতার বড় ব্যাটারি থাকছে বলে জানিয়েছে অ্যাপল।
এ বছর বাজারে আসা আইফোনের সব মডেলেই আছে ডায়নামিক আইল্যান্ড, যা আইফোন ১৪ প্রো এবং প্রো ম্যাক্সে প্রথমবার আনা হয়েছিল।
আইফোন ১৫ গোলাপি, হলুদ, সবুজ, নীল এবং কালো রঙের পাওয়া যাবে। চারটি মডেলেরই পেছনে আছে ম্যাট গ্লাস।আইফোন ১৫ এর দাম ধরা হয়েছে ৭৯৯ ডলার। আইফোন ১৫ প্লাসের দাম পড়বে ৮০০ ডলার।
আইফোন ১৫ প্রো ও প্রো ম্যাক্স
আইফোনের অন্য দুই মডেলের সব বৈশিষ্টসহ প্রো এবং প্রো ম্যাক্সে থাকছে আরও কিছু। আইফোন ১৫ প্রো মডেলে গ্রেড-৫ এর টাইটানিয়াম ব্যবহার করেছে অ্যাপল। এর ফলে স্মার্টফোনটি ওজনে হালকা হবে, কিন্তু মজবুত আরও বেশি। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই টাইটানিয়াম উপকরণ মঙ্গল গ্রহে অভিযানের জন্য মার্স রোভারে ব্যবহৃত হয়েছে। আইফোন ১৫ প্রো স্মার্টফোনের ডিসপ্লের আকার ৬.১ ইঞ্চি এবং আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সের ৬.৭ ইঞ্চি।
আইফোন ১৫ সিরিজ উন্মোচন, আছে সি পোর্ট
আইফোন ১৫ প্রো মডেলে যুক্ত করা হয়েছে আরও একটি উদ্ভাবনী ফিচার। থাকছে একটি অ্যাকশন বাটন। এই মডেলের ডান অংশে ভলিউম বাটনের ঠিক উপরে পিল-আকৃতির বাটনটিই হচ্ছে অ্যাকশন বাটন। এই বাটনের সাহায্যে ক্যামেরা চালু করা থেকে ফ্ল্যাশলাইট চালু করা, ভয়েস রেকর্ডিং, ডিভাইসকে সাইলেন্ট মোডে পাঠানোর মতো বেশ কয়েকটি কাজ এক ক্লিকেই করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।
আইফোন ১৫ প্রো মডেলে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন আসা এ১৭ চিপ। এটি ৩ ন্যানোমিটার চিপ যা প্রথমবার ব্যবহার হচ্ছে।
আইফোন প্রোতে গেমের জন্য ৬ কোর এবং হার্ডওয়্যার-অ্যাক্সিলারেটেড রে ট্রেসিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
আইফোন প্রোতে আছে ৪৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। এতে রয়েছে ১০ী অপটিক্যাল জুম। ম্যাক্রো ছাড়াও রয়েছে ১৩ মি.মি. থেকে ১২০ মি.মি. রেঞ্জের ফোকাল লেন্থ। আইফোন প্রোতে আছে ৩ী টেলিফটো ক্যামেরা। অন্যদিকে, প্রো ম্যাক্সে আছে একটি বিশেষ ৫ী টেলিফটো ক্যামেরা।
১২৮ জিবি আইফোন প্রোর দাম ধরা হয়েছে ৯৯৯ ডলার। ২৫৮ জিবি আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সের দাম ধরা হয়েছে ১১৯৯ ডলার।
আইফোন ১৫ সিরিজ উন্মোচন, আছে সি পোর্ট
অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯
মঙ্গলবারের লঞ্চ ইভেন্টে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯ উন্মোচন করা হয়েছে। এটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আলট্রা ওয়াইডব্যান্ড চিপ এবং আরও আধুনিক এস৯ প্রসেসর।
আইফোন ১৫ সিরিজ উন্মোচন, আছে সি পোর্ট
এটিতে ডাবল ট্যাপ নামক বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ব্যবহারকারী তার হাতের দুই আঙুল দুইবার স্পর্শ করলে বা হাতে দুইবার ঠুকা দিলে ফোনকল রিসিভ বা এলার্ম বন্ধ করার মতো কাজ সারতে পারবেন। অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৯ এর দাম ৩৯৯ ডলার থেকে শুরু হয়েছে।
অ্যাপল ওয়াচ আলট্রা ২
অ্যাপল ওয়াচ আলট্রার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বড় ডিসপ্লে। এতে অ্যাপল ওয়াচ ৯-এর মতো একই এস৯ চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে। তাই বেসিক ফোনে থাকা সব ধরনের নতুন সুবিধা আলট্রা ২ এ রয়েছে। অ্যাপল ওয়াচ আলট্রার স্ক্রিনের আলো ৩০০০ হাজার নিট পর্যন্ত। ফলে এই স্মার্টওয়াচের স্ক্রিন অনেক বেশি উজ্জ্বল।