একবার প্রতারণার জালে আটকা পড়েও শিক্ষা হয়নি ‘প্রতারক’ স্টিভেন স্মিথের! ২০১৮ সালে কেপটাউন টেস্টে স্যান্ডপেপার বা সিরিজ-কাগজ দিয়ে বল ঘষার কাণ্ডে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। তিন বছরের মাথায়ই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান বেমালুম ভুলে গেলেন সেই কথা? নয়তো আবারও প্রতারণায় পা দেবেন কেন ‘প্রতারক’ স্মিথ?
উপরের উপমাটা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি। গতকাল সিডনি টেস্টে নিজের ‘পা’ ব্যবহার করেই প্রতারণা করেছেন স্মিথ। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং গার্ড (ব্যাটিং গার্ডের জন্য ক্রিজে ব্যাটসম্যানের চিহ্নিত করে নেওয়া দাগ) মুছে ফেলেছেন পা দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানের এবারের প্রতারণা কর্মটি ধরা পড়েছে স্টাম্প ক্যামেরায়।
ঘটনাটা গতকাল সিডনি টেস্টের শেষ দিনের। কাল শেষ দিনে জয়ের জন্য অস্ট্রেলীয়দের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৮ উইকেট। ভারতের দরকার ছিল ৩০৯ রান। স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পাল্লাটাই ভারি ছিল। কিন্তু আগের দিনের চিত্রপটটা কাল পাল্টে দিতে শুরু করেন ভারতীয়রা। বিশেষ করে ভারতের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ঋষভ পান্ত ছিলেন আগ্রাসী।
তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং হারের শঙ্কা ভুলে ভারতীয়দের উল্টো জয়ের অসম্ভব স্বপ্নই দেখাতে শুরু করেছিল। অস্ট্রেলিয়ানদের মনে ধরিয়েছিল কাঁপন। এই ভয়ার্ত ঋষভ পান্তকে আউট করতে কতভাবেই চেষ্টা করেছেন অস্ট্রেলিয়ান বোলার-ফিল্ডাররা। কিন্তু কিছুতেই যখন কিছু হচ্ছিল না, ঠিক তখনই ‘প্রতারণা’র ভূত চাপে ‘প্রতারক’ স্মিথের মাথায়! পানি পানের বিরতির সময় উইকেটে থাকা ভারতের দুই ব্যাটসম্যান মাঠের এক প্রান্ত গিয়ে পানি পান করছিলেন। ঠিক তখনই হাঁটার বান করে উইকেটে হাজির হন স্মিথ।
‘প্রতারক’ স্মিথ সোজা গিয়ে দাঁড়ান পপিং ক্রিজে। ঠিক যেখানে নিজের ব্যাটিং গার্ড চিহ্নিত করেছিলেন ঋষভ পান্ত। কয়েক সেকেণ্ড দাঁড়িয়ে থেকে উল্টো ঘুরার ভান করে স্মিথ পা দিয়ে ঘষে ঘষে ঋষভ পান্তের ব্যাটিং গার্ড বা দাগ মুছে ফেলেন। পানি পান শেষে ঋষভ পান্ত আবার ব্যাটিং পজিশন নিতে গিয়ে তো অবাক! পরে তিনি আম্পায়ারের দিক নির্দেশনায় আবার নিজের ব্যাটিং গার্ড ঠিক করে ব্যাটিং শুরু করেন।
ততক্ষণে স্মিথের পা-প্রতারণার দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওতে অবশ্য স্মিথের মুখ দেখা যায়নি। তবে পা দিয়ে দাগ মুছে ফেলার প্রতারণার কাণ্ড ঘটানো ক্রিকেটারটি যে স্মিথই, সেটি বুঝতে সমস্যা হয়নি কারো। কারণ, মুখ না দেখা গেলেও শরীরের অবয়বে স্পষ্টই বোঝা গেছে এই প্রতারক স্মিথই। তাছাড়া উক্ত খেলোয়াড়ের জার্সি নম্বরটিও স্পষ্টই দেখা গেছে-৪৯। যেটি স্মিথেরই জার্সি নম্বর।
স্মিথের এই নতুন প্রতারণার কাণ্ডটি ভাইরাল হওয়ার পরই শুরু হয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। পাশাপাশি এই প্রশ্নটিও উঠছে, এবার কি হবে স্মিথের? ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে সিরিজ-কাগজ প্রতারণা কাণ্ডে স্মিথ সরাসরি জড়িত ছিলেন না। বল চকচকে রাখতে গোপনে সিরিজ-কাগজ দিয়ে বল ঘষার কাণ্ডটা করেছিলেন ব্যানক্রফট। তাকে কুবুদ্ধিটা দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন সহঅধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। আর তৎকালীন অধিনায়ক স্মিথ ঘটনা জেনেও না জানার ভান করেছিলেন।
যে ঘটনা টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ার ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। ব্যানক্রফট, ওয়ার্নার, স্মিথের কপালে নেমে আসে নিষেধাজ্ঞার শাস্তি। এবার স্মিথ সরাসরিই প্রতারণাটা করেছেন। যদিও এবারের অপরাধটি অতটা গুরুতর নয়। তবে অপরাধ অবশ্যই। ক্রিকেট আইনের একটি ধারায় স্পষ্টভাবেই লেখা আছে, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ক্রিজে ফিল্ডারদের উপস্থিতি অবৈধ। সেখানে স্মিথ খেলা বন্ধ থাকা অবস্থায় বেশ চালাকির সঙ্গে ক্রিজে গিয়ে হেঁটেছেন। শুধু তাই নয়, চালাকির মাধ্যমে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং গার্ডও পা দিয়ে মুছে ফেলেছেন। যে দৃশ্য স্পষ্টই দেখা গেছে স্টাম্প ক্যামেরায়!
এই প্রতারণা কাণ্ডে স্মিথের কি শাস্তি হয়, কে জানে! তবে এরই মধ্যে সমালোচনার ঝড়টা প্রকট। সাবেক ক্রিকেটাররা রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছেন স্মিথকে। ভারতের সাবেক ওপেনার বিরেন্দর শেবাগ ওই ভিডিও ফুটেজটি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে রটুইট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘জেতার জন্য কত চালই না চালা হয়েছে। স্টিভ স্মিথ তো পান্তের ব্যাটিং গার্ডের দাগও ক্রিজ থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করল।’
শেবাগের এই টুইটের কিছুক্ষণ পরই টুইটারে একটা স্লোগান ট্রেডিং হয়ে যায়, ‘ওয়ানস আ চিট অলওয়েজ আ চিট।’ যার সরল বাংলা, ‘যে প্রতারক সে সব সময়ই প্রতারক।’ ২০১৮ সালের সেই বল টেম্পারিং কাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শুরু হয় স্মিথের মুণ্ডুপাতের করার পালা। ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রিকেট পণ্ডিত ডেভিড লয়েড টুইটারে লিখেছেন, ‘বোকার মতো আচরণ করেছেন স্মিথ!’ ইংল্যান্ডের আরেক সাবেক ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক মাইকেল ভন লিখেছেন, ‘খুবই বাজে কাজ করেছেন স্টিভ স্মিথ!!’ লয়েড-ভন দুজনেই আবার শেবাগেরর টুইটটি রিটুইট করেছেন।
ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান আকাশ চোপড়া আবার ব্যঙ্গ করে একটা খোঁচাও মেরেছেন অস্ট্রেলীয়দের, ‘কত রকমভাবেই না জুতা কাজে লাগে! প্রতিপক্ষের ব্যাটং গার্ডের দাগ মুছে দেওয়া যায়। যদিও (জুতা দিয়ে) ভালো ক্যাচ নেওয়া সম্ভব নয়।’ কাল শেষ দিনেই চার চারটি সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডাররা। সমালোচনার ফুসরত পেয়ে আকাশ চোপড়া অস্ট্রেলীয়দের ক্যাচ মিসের খোঁচাটা মারতেও ছাড়েননি! কিন্তু মূল প্রশ্ন হলো, এই প্রতারণায় স্মিথের কোনো শাস্তি কি হবে?
উল্লেখ্য, স্মিথদের এমন চেষ্টার পরও ধৈর্যের চরম পরীক্ষা দিয়ে সিডনি টেস্টটা ড্র করতে সক্ষম হয়েছে ভারত।