সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র্যাব) যৌথ অভিযানে রাজধানীর শ্যামলীতে ‘অ্যাস্ট্রেন হেলথ কেয়ার’ নামে একটি কোম্পানির গুদাম থেকে জব্দ করা হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকার নকল ওষুধ। আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে কারখানা তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশি কোম্পানির ওষুধ নকল, উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছিল। অভিযান শেষে প্রতিষ্ঠানটির গুদাম সিলগালা করে দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। এ সময় প্রতিষ্ঠানের মালিককে ছয় মাসের কারাদণ্ডও দেওয়া হয়।
রোববার (২৮ মার্চ) সারাবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান।
অভিযান সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর শ্যামলীতে ‘অ্যাস্ট্রেন হেলথ কেয়ার’ নামের প্রতিষ্ঠানটির মালিক একে এম সিরাজুল হক। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১০ বছর সময় ধরে আবাসিক এলাকায় অবৈধ কারখানা তৈরি করে ৭ প্রকার নকল ওষুধ ও ছয় প্রকার নকল কসমেটিকস পণ্য তৈরি করতো। এরপরে সেগুলো বাজারজাত করে আসছিল।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) এমন অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে রোববার অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান শেষে অ্যাস্ট্রন হেলথ কেয়ারের গুদামটি সিলগালা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে অভিযান শেষে র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট আখতারুজ্জামানের পরিচালনা করা মোবাইল কোর্টে বাড়ির মালিক ও অ্যাস্ট্রন হেলথ কেয়ারের মালিক এ কে এম সিরাজুল হককে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে জব্দকৃত মালামাল ধ্বংসের জন্য ঔষধ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অভিযানের বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মুখপাত্র ও উপপরিচালক আইয়ুব হোসেন জানান, রোববার দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীতে অ্যাস্ট্রেন হেলথ কেয়ার নামের ওষুধ কোম্পানির গুদামে অভিযান শুরু করা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে এই অভিযান। এ সময় দেখা গেছে, ২০১৩ সালে আমদানি করা বিভিন্ন কাঁচামাল ও পণ্য গুদামে পড়ে রয়েছে। অভিযানে ওষুধ তৈরির মেশিনও জব্দ করা হয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন না থাকায় রাতের আঁধারেই তৈরি করা হতো ওষুধ। আর এ কাজে প্রতিষ্ঠানটির মালিককে সহায়তা করে আসছিলেন তার স্ত্রী। চার ঘণ্টা অভিযান শেষে অভিযানের সময় গুদাম থেকে আনুমানিক প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা সমমূল্যের নকল ওষুধ জব্দ করা হয়। অভিযান শেষ প্রতিষ্ঠানের মালিককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ আসার পরে আমরা দীর্ঘদিন এ চক্রকে নজরদারিতে রেখেছিলাম। সত্যতা পাওয়ার পর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাই। সেখানে যেসব ওষুধ পাওয়া যায় তার অধিকাংশ ওষুধেরই বাংলাদেশে আমদানির কোনো বৈধতা নেই। তারপরও তারা নিজেরা সেসব তৈরি করে বিদেশি ওষুধ বলে বাজারে চালিয়ে আসছিল। অভিযানে এমন অনেক অনুমোদনহীন ওষুধ জব্দ করা হয়েছে।’
জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব নকল ওষুধ পাওয়া যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অভিযানে মশা মারার ওষুধ থেকে শুরু করে বিপুল পরিমাণ গ্যাস্ট্রিক, ক্যালসিয়াম ওষুধসহ নানা রকমের আয়ুর্বেদিক ওষুধ পাওয়া গেছে, যেগুলোর আমদানির কোনো অনুমোদন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সবার অগোচরে নিজেরাই সেগুলো তৈরি করতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখান থেকে যেসব পণ্য জব্দ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়েক বস্তা বিভিন্ন কাঁচামাল, মেগা প্লাস-৩, এক্স-ভি, স্টে-অন, হোয়াইট কোড সিনেম, অ্যাস্টন লেজার, অ্যামিনো-১৮সহ বিভিন্ন যৌন উত্তেজক নকল ওষুধ। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোর বেশির ভাগ ইউনারি ওষুধ। এই ওষুধগুলো বিভিন্ন দেশের নামিদামি কোম্পানিতে তৈরি হয়, কিন্তু বাংলাদেশে এগুলো উৎপাদনের কোনো অনুমতি নেই।’ বিজ্ঞাপন
অভিযান বিষয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামান জানান, বাংলাদেশে মানুষের উন্নত জীবনযাত্রায় ফুড সাপ্লিমেন্ট ও যৌন উত্তেজক ওষুধের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে সর্দি-কাশির ওষুধ তৈরির আড়ালে এসব অবৈধ পণ্য তৈরি করে আসছে। এখানে জব্দকৃত প্রতিটি পণ্য ২০১৩ সালের কেনা, যার মেয়াদ অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন সব নকল ওষুধ তৈরি করে আমেরিকা, কানাডা ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে বলে মিথ্যাচার করে আসছিল। যা ভয়াবহ প্রতারণা। আমরা এদের ধরতে সফল হয়েছি। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।