ঢাকা: এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই পরিবেশবান্ধব ইউরিয়া সার উৎপাদন প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ৫ হাজার ৩৯ কোটি টাকা— যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। সেই সঙ্গে মেয়াদও বাড়ছে দুই বছর। ফলে সাড়ে তিন বছরের এ প্রকল্পটিতে সময় লাগছে সাড়ে পাঁচ বছর।
ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)। ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ার কারণে প্রকল্পটি প্রথম সংশোধিনীর জন্য পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের খরচ থেকে ১ হাজার ৮৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং বিডার্স ফাইন্যানন্সিং থেকে ৮ হাজার ৬১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদন পায়।
প্রকল্পটির শুরু থেকে অর্থাৎ, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৪২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, তবে বাস্তব অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) নূরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি একটা জটিল প্রজেক্ট। টাইম লাইন অনুযায়ী কাজ চলছে। আশা করি বাড়তি মেয়াদেই এর কাজ শেষ হবে। জাপানের ঠিকাদাররা কাজ করছে।’ ব্যয় বাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভ্যাট, ট্যাক্স ও গ্যাসের কারণে বেশ কিছু ব্যয় বেড়ে গেছে।’
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত কারণে ঋণচুক্তি বিলম্বিত হওয়ায় বাণিজ্যিক চুক্তির ইফেক্টটিভ কন্টাক্ট বিলম্বে কার্যকর হওয়া, এছাড়া বিডার্স ফাইন্যান্সিং এর ২৭৪ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ২ হাজার ৩০৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা (যা ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি) প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ে অন্তর্ভুক্তি, সিডি ভ্যাট, রেল লাইন স্থাপন, বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন, লোন ব্যবস্থাপনা ফি, ইনসুরেন্স ও রেজিস্ট্রেশন ফি, কেমিক্যাল পণ্য, মেশিনারিজের জন্য লুব্রিকেন্ট ও ট্রায়াল রানের জন্য গ্যাস ক্রয় এবং আবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
নতুন অঙ্গ হিসেবে জেনারেল কন্ট্রাকটারদের আয়কর (চুক্তি অনুসারে), সরকারি বিভিন্ন লাইসেন্স ফি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, অডিট ফি ও অনুষ্ঠান খাত সংযোজন, অর্থ বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে ইকনোমিক কোড বা সাব কোড হালনাগাদকরণ এবং করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কারখানা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিলম্ব হওয়ার কারণেও প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে।
বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের ২৭৪ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সম পরিমাণ ২ হাজার ৩০৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ে অন্তর্ভূক্তকরণ, নতুন অঙ্গ সংযোজন ও ইকনোমিক কোড বা সাব কোড পরিবর্তন, বিদ্যমান খাতগুলোর বরাদ্দ হ্রাস বা বৃদ্ধি, কিছু কাজ ও পণ্য ক্রয়ের পদ্ধতি পুনঃনির্ধারণ এবং কিছু কাজ ও সেবা খাতের পরিমাণ পরিবর্তন ও প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে মোট ১৫ হাজার ৫৪৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়।
এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই পরিবেশবান্ধব সার কারখানাটি চালু হলে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।