‘ইমেজ সংকট’ কাটাতে মরিয়া ছাত্রলীগ

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক ‘ইমেজ সংকট’ মোকাবিলা করতে হচ্ছে ছাত্রলীগকে। বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা করতে যেয়ে তুমুল বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এই ছাত্র সংগঠনটিকে।

বিশেষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার হত্যাকাণ্ডে কিছু নেতাকর্মীদের জড়িয়ে পড়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর পদত্যাগ, সর্বশেষ সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সাথে বেড়াতে যাওয়া তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় সারা দেশব্যাপীই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে।

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেও কম চাপ সহ্য করতে হয়নি। সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়ার পরই বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ শেরে বাংলা হলে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুবরণ করেন। সেই ঘটনা সামলে উঠতে না উঠতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর কিছু ছাত্রলীগ কর্মীর হামলার শিকার হন। সর্বশেষ এমসি কলেজে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা -সবমিলিয়ে ‘ইমেজ সংকট’ সামাল দিতে হয় সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের।

সূত্র বলছে, এই ইমেজ সংকট মোকাবিলায় হার্ড লাইনে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। ইতোমধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এ বছর ১৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও সংগঠনে ‘অনুপ্রবেশকারী’দেরকে চিহ্নিত করতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠন। সারা দেশে আমাদের লক্ষ লক্ষ কর্মী রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যেকের সম্পর্কে ধরে ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য নেওয়া সম্ভব নয়। তবে যারা পদধারী রয়েছেন, তাদের আদ্যপান্ত-পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য আমরা নিয়ে থাকি। পাশাপাশি তৃণমূলের প্রত্যেকটি কমিটিকে আমরা বলে দিয়েছি যেন নেতাকর্মীদের শিষ্টাচার, শৃঙ্খলা এবং আদর্শের দিকটিতে কঠোর নজরদারি করা হয়’।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো কর্মী দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। এবং দলীয় শৃঙ্খলা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা প্রতি শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম পরিচালনা করছি’।

করোনাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ব্যাপক সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে উল্লেখ করে সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘করোনাকালীন সময়টাতে আামাদের সংগঠন সামাজিক কার্যক্রমেই ব্যস্ত ছিল বলা যায়। আমাদের নেতাকর্মীরা বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে, এখনো করছে’।

অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একজন অপরাধীর পরিচয় শুধুই অপরাধী। তাই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা তো আমরা নিচ্ছিই, পাশাপাশি অপরাধীর যাতে শাস্তি নিশ্চিত হয়, সে জন্য প্রশাসনকেও আমরা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করছি। আমরা এমন ভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে অনুপ্রবেশকারীরা ভয়ে চুপ হয়ে যায়’।

দলীয় শৃঙ্খলা উন্নয়ন সম্পর্কে ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. ইমরান শেখ বলেন, ‘যেহেতু আমাদের সংগঠনটি উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন, সুতরাং আমাদের দায়িত্বটাও কিন্তু বেশি। তাই আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের আরও দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিয়মিত ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করছি। পরীক্ষা নেওয়ার পর এদেরকে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে অভিজ্ঞতা শেয়ারের জন্য পাঠাবো। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামটি আয়োজন করার লক্ষ্যে আমরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *