ইরানের সবচেয়ে প্রবীণ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিযাদে রাজধানী তেহরানের কাছে আততায়ীর হামলায় মারা গেছেন। দামাভান্দ এলাকায় হামলার পর ফখরিযাদে হাসপাতালে তিনি মারা যান।
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) তেহরানের কাছে এক চোরাগোপ্তা হামলায় মোহসেন নিহত হন। এ ঘটনায় ইরান বদলা নেয়ার অঙ্গীকার করেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, দামাভান্দ এলাকার আবজার্দে ইরানি এ পরমাণু বিজ্ঞানীর গাড়ি লক্ষ্য করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলার পর আহত মোহসেনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি।
এ হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বজ্রের মতো আঘাত হানার অঙ্গীকার করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেগান।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলের দিকে আঙুল তুলে ‘রাষ্ট্রীয় এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা’ জানাতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পশ্চিমা গোয়েন্দাদের ধারণা, মোহসেন ফখরিযাদে ছিলেন ইরানের গোপন পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির প্রধান।
তেহরান অবশ্য সবসময়ই তাদের পরমাণু কর্মসূচির উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ বলেই দাবি করে আসছে।
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তখত রাভাঞ্চিও হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিদেশি শক্তি বিশেষ করে ইসরায়েলের জড়িত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বলেছেন, মহসেনের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লংঘন। মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিতিশীল করতেই এ কাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলেও মত তার।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যায় ইসরায়েলের হাত আছে বলে অভিযোগ তুললেও এখন পর্যন্ত এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০১৮ সালের মে মাসে ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে অভিযোগ করতে গিয়ে মোহসেন ফখরিযাদের নাম বলেছিলেন।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্পগুলোতে মহসেন কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সে সময় এই নামটি ‘মনে করে রাখতেও’ বলেছিলেন নেতানিয়াহু।
২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চার পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ইরান এসব হত্যাকাণ্ডেও ইসরায়েল জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মহসেনের উপর হামলার জন্য যে-ই দায়ী হোক না কেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের আগে আগে এমন ঘটনায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা নিশ্চিতভাবেই বাড়বে।
তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা নিয়ে পশ্চিমাদের নতুন উদ্বেগের মধ্যেই ইরানের এ শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী খুন হলেন। বেসামরিক পরমাণু শক্তি উৎপাদন কিংবা অস্ত্র কর্মসূচি- দুই ক্ষেত্রেই এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।