স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে কতশত আশার বাণীই না শুনিয়েছে বাংলাদেশ দলের সদস্যরা। ‘এবার আমরা জিতবই, গত ২৬ ম্যাচে যা হয়নি তাই হবে এবার। ঘুরে আমরা দাঁড়াবই।’ কেউ বলেছেন, ‘শুরুটা দুর্দান্ত করতে হবে এবং সেজন্য আমাদের সব প্রস্তুতি আছে।’ কিন্তু হায়! সবই যে কথার ফুলঝুরি! প্রায় ২০ দিনের প্রস্তুতির পরেও ডমিঙ্গো শিষ্যদের শুরুটা হলো নিদারুণ শোচনীয়! ব্যাটিং যেমন অমানিষা বোলিংয়ের হালও তথৈবচ। তাতে ফলও এলো প্রত্যাশিত ঢঙেই। ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেল অতিথিরা! অবশ্য হেরে গেল না বলে উড়ে গেল বলাটাই বোধ হয় অধিক যুক্তিযুক্ত হবে।
ডানেডিনের রান প্রসবা উইকেটে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে কিউই বোলিং তোপে থরহরিকম্প হয়ে মাত্র ১৩১ রানে গুটিয়ে যায় তামিম ইকবাল অ্যান্ড কোং। ১৩২ রানের লক্ষ্য টম লাথামরা ছুঁয়ে ফেলে মাত্র ২ উইকেটের খরচায়। ব্যাটিং কিংবা বোলিং কোনো বিভাগেই ব্ল্যাকক্যাপসদের কাছে পাত্তা পায়নি লাল সবুজের দল!
অথচ শনিবার (২০ মার্চ) টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ট্রেন্ট বোল্টের তৃতীয় বলটি কাভার পয়েন্টের ওপর দিয়ে স্ল্যাশ করে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে তামিম ইকবাল যখন রানের খাতা খুললেন তখন অনেকেই নিউজিল্যান্ডে অন্য এক বাংলাদেশের ছবি এঁকেছিলেন। এবার বুঝি হবে! জয় না হোক অন্তত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই! কিন্তু না, তেমন কিছুই হয়নি শেষ পর্যন্ত। বরংচ আরও একটি শোচনীয় পরজায়ই এসেছে দিন শেষে। এবং লাল সবুজের ভক্তদের সেই ছবিও যেন অপূর্ণই থেকে গেল যখন মাত্র ১৩ রানে সেই বোল্টের বলেই এলবি’র ফাঁদে পড়ে নিজের ইনিংসের এপিটাফ লিখে দিলেন দেশ সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল।
এবারের গল্পটা অবশ্য সবারই ড্রেসিং রুম থেকে পপিং ক্রিজে আসা-যাওয়ার। সৌম্য সরকারের কথাই ধরুন না। তামিম ফেরার পরে তিনি উইকেটে এলেন বটে। কিন্তু খেললেন মোটে তিনটি বল। এবারও সেই বোল্টের বলে স্ল্যাশ করতে গিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই কাভারে ধরা পড়লেন অভিষিক্ত ডেভন কনওয়ের হাতে।
মোহাম্মদ মিঠুন অবশ্য দুর্ভাগা ছিলেন, ২৭ বল খেলে ৯ রানে ফিরে যান রান আউট হয়ে তাও যদি নিজের ভুলে হত! জিমি নিশামের বল ড্রাইভ করেন ক্রিজের অপর প্রান্তে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ততক্ষণে মিঠুন পপিং ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। বোলার নিশাম বলটি ছুঁয়ে দিলে তা সোজা গিয়ে মিঠুনের স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। তাতেই ফিরতে হয় মিঠুনকে।
মেহেদি হাসান মিরাজ ১০ বল খেলে নামের পাশে মাত্র ১ রান যোগ করে মিচেল স্যান্টনারের বলে হন বোল্ড। আরেক মেহেদি অবশ্য জ্বলে উঠতে গিয়েও পারেননি। ১৪ রানে তাকে দপ করে নিভিয়ে দেন ওই স্যান্টনারই। টেল এন্ডার তাসকিন আহমেদের ব্যাট থেকে এসেছে ১০ রান। তবে তার থেকে বড় বিষয় এই তাসকিন খেলেছেন মোট ৩২টি বল। যা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকারের চেয়েও ঢের বেশি। এরপর হাসান মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান সংগ্রহ করেছেন ১ রানে করে।
তবে এখানে মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যে কিছুটা ব্যতিক্রম থেকেছেন একথা বলতেই হবে। ব্যতিক্রম কিভাবে? উইকেটে টিকে থাকার ক্ষেত্রে। অবশ্য তাতে কাজের কাজ হয়নি কিছুই। হয়তো স্রেফ গল্প করার জন্যই তা কাজে আসবে। উত্তরসূরি কিংবা ক্রিকেট থেকে অবসরে গেলে স্বজনদের কাছে গল্প করতে পারবেন, নিউজিল্যান্ডের ওই কন্ডিশন ও বোলিং আক্রমণের মুখেও আমি এতগুলো বল মোকাবিলা করেছি!
৩৬ বল খেলে লিটন দাস জিমি নিশামের বলে ১৯ রানে মিড অনে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দিয়ে দায়িত্বহীনের পরিচয় দিয়েছেন। এই নিশামই মুশফিকুর রহিমকে গালিতে তুলে দিয়েছেন মার্টিন গাপটিলের নিরাপদ তালুতে (৪৯ বলে ২৩ রান)। আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ম্যাট হেনরির বলে তালুবন্দি করেছেন মিচেল স্যান্টনার (৫৪ বলে ২৭)।
এতে করে ৪১.৫ ওভারেই সবক’টি উইকেটের বিনিময়ে টিম বাংলাদেশের ১৩১ রানের মামুলি সংগ্রহ দাঁড়ায়।
জয়ের জন্য ১৩২ রানের সহজ লক্ষ্য কিউইরা ছুঁয়েছে ২১.২ ওভারে, মাত্র ২ উইকেটের খরচায়। হেনরি নিকলসের অপরাজিত ৪৯, মার্টিন গাপটিলের ৩৮ ও ডেভন কনওয়ের ২৭ রানে হেসে খেলে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে স্বাগতিক দল। উইল ইয়াংও অপরাজিত থেকেছেন। তার উইলো থেকে এসেছে ১১ রান।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে দুই উইকেট শিকারি হলেন; তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।
এই হারে ৩ ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডেতে ১-০ তে পিছিয়ে গেল সফরকারি বাংলাদেশ।
সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ২৩ মার্চ, ক্রাইস্টচার্চে। শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায়।