1. hmgrobbani@yahoo.com : admin :
  2. news@soroborno.com : Md. Rabbani : Md. Rabbani
  3. sayefrahman7@gmail.com : Sayef Rahman : Sayef Rahman
সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

কঠোর লকডাউনে তৎপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১

ঈদের পর কঠোর লকডাউনে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জনসাধারণ যেন বিধিনিষেধ মেনে চলেন এবং অকারণে ঘর থেকে বের না হন সে লক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে চেকপোস্ট ও পাড়া-মহল্লায় টহল অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও তৎপর রয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর প্রায় সব সড়কেই রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট। কঠোর লকডাউন চলায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এদিন সড়কে বের হয়েছেন স্বল্পসংখ্যক মানুষ। পাড়া-মহল্লায় দোকানপাট বন্ধ।

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে ঢাকার প্রবেশ মুখের সড়কে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। কমসংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও সেগুলো চেকপোস্টে থামিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইছেন পুলিশ সদস্যরা।

জরুরি সেবায় নিয়োজিত পরিবহনগুলো ছেড়ে দেওয়া হলেও অকারণে বের হওয়া যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা (মামলা) নিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।

আব্দুল্লাহপুরে পুলিশের চেকপোস্টের দায়িত্বরত পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. জায়েদুল বলেন, ঈদের ছুটির পর প্রথম শুক্রবার। তাই সড়কে অনেক লোকজন কম বের হয়েছেন। যারা অহেতুক কারণে বের হচ্ছেন তাদের আমরা মামলা দিচ্ছি। রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং, আজমপুর, বিমানবন্দর এলাকায় স্থাপিত চেকপোস্টে একইভাবে পুলিশ সদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা গেছে।

কুড়িল, বাড্ডা হয়ে রামপুরা পর্যন্ত সড়কে সকাল থেকে চেকপোস্টগুলোতে তৎপরতা থাকলেও দুপুরে কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব দেখা যায়। তবে জুমার নামাজের পর থেকে আরও তৎপর হতে শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা। তবে এই এলাকায় কোনো দোকানপাট খোলা বা জনসমাগম দেখা যায়নি। রাজধানীর কাঁটাবন এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনকে তল্লাশি ও জবাবদিহির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া যানবাহনে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে।

ব্যাংক চলবে দেড়টা পর্যন্ত

সংক্রমণ প্রতিরোধে শুক্রবার ভোর থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় ‘কঠোরতম’ বিধিনিষেধ। যা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। তবে এই সময়েও ব্যাংক খোলা থাকবে। এই সময়ে ব্যাংক খোলা থাকলেও লেনদেন চলবে সীমিত সময়ের জন্য।

ঈদের ছুটি শেষে ব্যাংকগুলো আগামীকাল রোববার থেকে গ্রাহক চাহিদামতো শাখা খোলা রাখবে। আর লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। কঠোরতম বিধিনিষেধের মধ্যে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখা নিয়ে ১৩ জুলাই এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা জানায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত বিধিনিষেধ চলাকালে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

ঢাকা অনেকটাই জনশূন্য

দেশব্যাপী ডাকা বিধিনিষেধের প্রথমদিনে অনেকটাই জনশূন্য ঢাকা। সরকারি বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এবারের পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের শিল্পকারখানা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। জরুরি সেবা, গণমাধ্যম ও খাদ্য উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট পরিবহন ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহনও বন্ধ থাকবে।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মাঠে নেমেছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। লকডাউন চলাকালে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাঠে নেমেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে রিকশা ও ভ্যানে করে মানুষকে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। তারা গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরেছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা রিকশা ও ভ্যানে করে বাসায় ফিরছেন।

বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখে তারা আপাতত কিছু বলছেন না। আগের তুলনায় এবার কঠোর বিধিনিষেধ হবে। কারণ বারবার বিধিনিষেধ দিয়ে তা কঠোরভাবে পালিত না হলে করোনা পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না বরং অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে।

কঠোর লকডাউনে যা করা যাবে, যা যাবে না

এ সময় কী করা যাবে, কী করা যাবে না তা নিয়ে গত ১৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের এ সময়ে যেসব বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে-

১. সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।

২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহণ (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকবে। শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

৩. সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৪. সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে।

৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক [বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), পিকনিক, জন্মদিন, পার্টি ইত্যাদি], রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৬. বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি থাকবে।

৭. ব্যাংকিং/বীমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৮. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজসমূহ ভার্চুয়ালি সম্পন্ন করবেন।

৯. আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

১০. বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

১১. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ডভ্যান/নৌযান/পণ্যবাহী রেল/ফেরি-এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

১২. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

১৩. কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিক্রয় করা যাবে।

১৪. অতিজরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৫. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকাগ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৬. খাবারের দোকান, হোটেল সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেক ওয়ে) করতে পারবে।

১৭. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।

১৮. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

১৯. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

২০. ম্যাজিস্ট্রেট জেলাপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ এবং টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।

২১. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২২. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।

ঈদ শেষে কঠোর বিধিনিষেধেও ফিরছে মানুষ। যে যেভাবে পারছেন রওনা দিয়েছেন ঢাকার উদ্দেশে। শুক্রবার ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ভোর থেকেই অধিক ভাড়ায় যাত্রীবাহী বাস থেকে শুরু করে ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে।

২৩ জুলাই ভোর ৬টা থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। এ কঠোর লকডাউনের নিয়ম অমান্য করায় রাজধানীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ এ তথ্য জানায়।

ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধের নিয়ম অমান্য করায় শুক্রবার রাজধানী থেকে ৪০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির বিভিন্ন থানা। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০৩ জনকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২৭০ টাকা জরিমানা করা হয়।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই সময়ে সরকারি ও বেসরকারি অফিস, শিল্প-কলকারখানাসহ সারাদেশে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি