আসন্ন বাজেটে করোনা অভিঘাত দিয়ে করোনা মোকাবিলার বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। করোনার কারণে রাজস্ব কমে গেছে। আগামী অর্থবছরেও এ অবস্থা চলতে থাকবে। এরই মধ্যে সরকারকে করোনা মোকাবিলার জন্য বাড়তি খরচের ঘাটতি মোকাবিলার বাজেট প্রণয়ন করতে হচ্ছে। সরকারের পরিমিত দেশি-বিদেশি ঋণ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা এবং কৃষি, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের মতো সক্ষমতা করোনা মহামারীর মধ্যেও বাজেট প্রণয়নে সহায়তা করবে।
করোনা মহামারি রোধে টিকা কেনার জন্য আগামী বাজেটে সরকারকে সর্বোচ্চ ব্যয় করতে হবে। গত বছর টিকা কেনার জন্য প্রয়োজন থাকলেও টিকার অপ্রতুলতা এবং সরকারের তাগিদও কম ছিল। একমাত্র ভারতের ওপর ভরসা করে বসে থাকার কারণে টাকা দিয়েও টিকা পায়নি।
এ কারণে করোনা মোকাবিলায় টাকা রাখলেও খরচ করা যায়নি। এবার টিকা নিশ্চিত করা ও একই সঙ্গে বেশি পরিমাণ টিকা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে। যা আগামী বছরের বাজেট থেকে নির্বাহ করতে হবে। ফলে এবার টিকাসহ করোনা মোকাবিলা করার জন্য বড় ধরনের ব্যয় হবে। এতে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বরাবরের মতো ৫ শতাংশ থাকছে না; সাত শতাংশ ছুঁয়ে যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেট বাড়তে পারে।
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আছে তিন লাখ এক হাজার কোটি টাকা। এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে রাজস্ব আহরণ রয়েছে এক লাখ ৯৫ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। বাকি দুই মাসে লক্ষ্য পূরণ হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নয়, বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাবে। একই অবস্থা হবে আগামী বছরে। করোনার যে অভিঘাত তা সামাল দিয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যপূরণ অনেকটা অসম্ভব হবে। এ অবস্থায় দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেট আরও বড় হবে। যদিও চলতি বছরের ৬ শতাংশ ঘাটতি বাজেট খরচ করা সম্ভব হয়নি। যে কোনোভাবেই হোক করোনা মোকাবিলা করার জন্য গৃহিত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলা করার জন্য স্বাস্থ্য খাতে খরচ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে অন্য যে উনুৎপাদনশীল এবং ভিশনারী যে সব কার্যক্রম আছে সেগুলো কমিয়ে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের প্রায় এক লাক কোটি টাকার ঋণের কথা ভাবছে। কম সুদের এ সব সহজ শর্তের ঋণ নিতে হবে। ঘাটতি বাজেট পূরণে এ ঋণ ব্যবহার করা হবে। এছাড়া বাজটে বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও ঋণ নিতে পারে। ব্যাংকিং খাত থেকেও ঋণ নিতে পারে। ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য থাকার কারণে ঋণ নিলেও বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। ফলে করোনা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাজস্ব কম আদায় হলেও অর্থ সমস্যা হবে না।
করোনা অভিঘাত মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আগামী বাজেটে সরকার ওই সব খাতগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সেক্ষেত্রে কৃষি, কৃষি বহির্ভূত গ্রামীণ কর্মকাণ্ড এবং কর্মহারা শ্রমিকের কর্ম সৃজন ও খাদ্য সরবারহ কর্মসূচি বেগবান করতে হবে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেগবান আছে-সেদিকেও বাজেটে উদ্যোগ থাকতে হবে।
সামাজিক নিরাপত্তার যে সব কর্মসূচি আছে সেগুলো আরও বেগবান করার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি পরিবর্তনকে বলেন, যে কৃষক বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের উৎপাদিত ফসলের দাম নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার যে ধান ক্রয় করেব তা যেনো কৃষকের ধানের দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। ভুল প্রক্রিয়ার কারণে কৃষক যেনো সর্বশান্ত না হয়। করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেটও বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। দেশি-বিদেশি ঋণ নিলেও তা আগের পরিমিত ঋণ থাকার কারণে ঋণ নেওয়া সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। ঘাটতি বাজেট হলো বেশি ব্যয় কম আয় দিয়ে পূরণ না হওয়ার অবস্থা। যে পরিমাণ আয় দ্বারা পূরণ হবে না তাইই ঘাটতি।
দেশে বাজেট প্রণয়নে সাধারণত ৫ শতাংশ ঘাটতি বাজেট থাকে। চলতি ২০২০-২১ বছরে এ ঘাটতির পরিমাণ হলো ৬ শতাংশ। করোনা মোকাবেলা করার জন্য আগামী বছর এ হার কিছুটা বাড়তে পারে। তারপরও বাংলাদেশের জন্য এ ঘাটতি সমস্যা হবে না বলে মনে করেন ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৪০ শতাংশ। এটা ঋণের বোঝার পর্যায়ে পড়ে না। এবং পরিশোধের হারও সন্তোষজনক। আসন্ন বাজেটে ৬ শতাংশের ঘাটতি বাজেট হলেও মোট ঋণের হার জিডিপির ৪৬ শতাংশ। দেশের চলমান রেমিট্যান্স প্রবাহ, কৃষির উৎপাদন অব্যাহত ও রপ্তানি আয় অব্যাহত থাকলে ঘাটতিপূরণে ঋণ নেওয়া দোষের কিছু হবে না। তবে ঋণ নিয়ে তা সঠিক জায়গায় খরচ নিশ্চিত করতে হবে। ঋণ নিয়ে যেন বিলাসিতা না করা হয়-এয়ারকন্ডিশন্ড গাড়ি কেনা, সরকারি অফিসের শোভা বর্ধণ করা, বিদেশ সফর বা জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রপাতি আমদানি করে তা যেন বিমানবন্দরে পড়ে না থাকে।