মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) তৃতীয় ঢেউ ইউরোপে শুরু করেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে কারণে ফ্রান্স, পোল্যান্ড এবং ইউক্রেনে লাখ লাখ মানুষের ওপর নতুন করে লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। শনিবার থেকে পোল্যান্ড, প্যারিসসহ ফ্রান্সের কিছু অংশ এবং ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
সেখানকার বেশিরভাগ দোকান-পাট বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া লোকজনকে বাড়ি থেকেই কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফ্রান্সে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী প্যারিস এবং উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ।
কড়াকড়ির আওতায় প্যারিসে সব ধরনের অনাবশ্যক ব্যবসা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে স্কুল এখনও খোলাই আছে। এছাড়া বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বের মতে হাঁটাচলা এবং ব্যায়ামের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে।
নতুন কড়াকড়িতেও আগের মতোই নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হতে হলেও কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় কারণ দেখাতে হবে। অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে না।
সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ফ্রান্সের ১৬টি এলাকার ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের ওপর শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আংশিক লকডাউন আরোপ করা হয়। প্যারিসের স্টেশনগুলো থেকে রেল বোঝাই লোকজনকে লকডাউন শুরুর আগেই শহর ত্যাগ করতে দেখা গেছে। যেসব জায়গায় সংক্রমণ কম বেশিরভাগ লোকজন সেখানে চলে যাচ্ছেন।
তবে ফ্রান্সের এই নতুন বিধিনিষেধ আগের লকডাউনের মতো অতোটা কঠোর নয় বলে জানানো হয়েছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রাঁ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, শুধুমাত্র ‘লকডাউন’ শব্দটি সরকারের কৌশল ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা যা চাই তা হচ্ছে নিজেদের সবকিছু বন্ধ করে না দিয়ে বরং ভাইরাস সংক্রমণ কমানোর চেষ্টা করা।’
এদিকে, পোল্যান্ডে শনিবার থেকে জরুরি নয় এমন সব দোকানপাট, হোটেল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া ক্ষেত্রগুলো তিন সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার ব্রিটিশ ধরনটি খুবই সংক্রামক বলে লকডাউন দিতে হচ্ছে। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, মোট সংক্রমিত লোকের শতকরা ৬০ ভাগ এই নতুন ধরনের করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
জার্মানিতেও সংক্রমণ দ্রুতহারে বাড়ছে। চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে লকডাউন আরোপের কথা বলেছেন। বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ডে করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্রিটেন, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসহ একাধিক দেশে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভও হচ্ছে।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী রোববার (২১ মার্চ) সকাল পর্যন্ত বিশ্বেজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ কোটি ৩৪ লাখ ৩৭ হাজার ২৩৩ জনের বেশি মানুষ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭ লাখ ২২ হাজার ১১১ জনের।
এছাড়া মহামারি করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯ কোটি ৯৪ লাখ ২১ হাজার ৬১৫ জনের বেশি মানুষ।