কানাডার সাসকাচুয়ান প্রদেশে একটি আদিবাসী স্কুলে সাড়ে সাতশ’র বেশি অচিহ্নিত কবর শনাক্ত হয়েছে। এটিকে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ‘উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার’ হিসেবে উল্লেখ করেছে কাউয়েসেস ফার্স্ট ন্যাশন নামে একটি স্থানীয় আদিবাসী সংগঠন। বৃহস্পতিবার বিবিসির এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
এ ঘটনার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় একই ধরনের একটি স্কুলে ২১৫টি শিশুর দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।
কাউয়েসেস প্রধান ক্যাডমাস ডেলোরমে বলেছেন, এগুলো কোনো গণকবর নয়। এগুলো মূলত নাম-নিশানাবিহীন কবর।
বিবিসির খবর অনুসারে, ম্যারিয়েভাল ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ১৮৯৯ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। রোমান ক্যাথলিক চার্চ এটি পরিচালনা করত। সেসময় এ ধরনের অন্তত ১৩০টি বোর্ডিং স্কুল চালু করেছিল কানাডা সরকার। আদিবাসীদের অঙ্গীভূত করার লক্ষ্যে ধর্মীয় সংগঠন দিয়ে চালানো হতো সেগুলো।
কয়েক সপ্তাহ আগে দেশটির ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় কামলুপস ইন্ডিয়ান রেসিডেনসিয়াল স্কুল নামের এক পরিত্যক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণকবরের সন্ধান মেলে। সেখানে পাওয়া যায় ২১৫ শিশুর দেহাবশেষ। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে কানাডার আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাধ্যতামূলক বোর্ডিং স্কুল ছিল। সরকার ও ধর্মবিষয়ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত এসব স্কুলে জোর করে আদিবাসী শিশুদের এনে রাখা হতো।
গত মাসে কাউএসেস সাসকাচুয়ান প্রদেশের ম্যারিভাল ইন্ডিয়ান রেসিডেনসিয়াল স্কুলের সমাধি সৌধে গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডারের (ভূপৃষ্ঠের নিচে কী আছে তা পরীক্ষা করে জানার যন্ত্র) সাহায্যে অচিহ্নিত কবর খুঁজে বের করার কাজ শুরু করে।
ধারণা করা হয়, ওইসব আবাসিক স্কুলে ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। এর জন্য সেখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে দায়ী করা হয়। এছাড়া, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে অনেক শিক্ষার্থীই পালিয়ে গিয়েছিল।
গত মাসে বিশেষ ধরনের রাডার ব্যবহার করে অচিহ্নিত কবর খোঁজা শুরু করে কাউয়েসেস। গত বৃহস্পতিবার তারা প্রধম ধাপে অনুসন্ধানের ফলাফল ঘোষণা করেছে।
ডেলোরমে জানিয়েছেন, কোনো একসময় হয়তো এসব কবরের ওপর চিহ্ন ছিল, কিন্তু রোমান ক্যাথলিক চার্চ সেগুলো সরিয়ে ফেলতে পারে। ঘটনা তদন্তে চার্চ কর্তৃপক্ষ তাদের সহযোগিতা করবে বলে আশাবাদী কাউয়েসেস।
এক বিবৃতিতে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তিনি সাসকাচেওয়ানে আবিষ্কার নিয়ে গভীরভাবে দুঃখিত। তার মতে, আদিবাসীরা যে পদ্ধতিগত বর্ণবাদ, বৈষম্য ও অন্যায়ের শিকার হয়েছিল, এগুলো তারই লজ্জাজনক স্মৃতি।