ব্রাজিলের ফুটবলে রোনালদো নাজারিও ডি লামা নামটি সব সময়ই শ্রদ্ধার জন্ম দেয়। আধুনিক ফুটবলে তার আক্রমণের ধার আকৃষ্ট করে এই প্রজন্মের ফুটবলারদের। চার বিশ্বকাপ মিলিয়ে করেছেন ১৫ গোল। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। পরে তার ঘরের মাঠের আসরে জার্মানির মিরাস্লোভ ক্লোসা তা টপকে যান। তবে নতুন প্রজন্মের ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের কাছে এখনও আদর্শ।
সেটাই আরও একবার দৃশ্যমান হলো রদ্রিগোকে দেখে। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী রোনালদো যে পথ পাড়ি দিয়েছেন, রদ্রিগো এখন সেই পথেরই পথিক। কাতার বিশ্বকাপে সাড়াও ফেলেছেন রদ্রিগো। যিনি মূলত উইঙ্গার, কখনো আবার সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবেও খেলেন।
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে যেমন তাকে সেন্টার ফরোয়ার্ডে খেলতে দেখা গেছে। আবার ম্যাচের ৮৩ মিনিটে কাসেমিরোর গোলটি যেমন এসেছে তার পাস থেকে। নেইমারহীন ম্যাচে জয় শেষে রদ্রিগো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রোনালদোকে। সেখানে তাকে দেখেই বোঝা গেছে একদম ‘ফ্যানবয়’ হয়ে বসে আছেন।
সেই সাক্ষাৎকারে অদ্ভুত এক কাণ্ডও করে বসলেন তিনি। ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি রোনালদোকে রদ্রিগো যে ভক্তিটুকু করলেন, তা দেখে কারও এমন মনে হলে দোষ দেওয়া যায় না। সাক্ষাৎকার শেষে রোনালদোর পা দুটো ছুঁয়ে দেখেন রদ্রিগো। তারপর এমনভাবে নিজের পা দুটো মালিশ করলেন যে, দেখে মনে হবে, রোনালদোর পায়ের ‘জাদু’ নিজের মাখিয়ে নিলেন!
ফুটবল পরিবারে জন্ম রদ্রিগোর। বাবা এরিক বাতিস্তা দে গোস ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। রাইট বেকে খেলতেন। যদিও জাতীয় দলে খেলা হয়নি। কিন্তু বাবার অপূর্ণতা পূরণ করেছেন ছেলে। হয়ে উঠেছেন ব্রাজিলের অন্যতম ভরসার নাম। তাই তো কিংবদন্তী ফুটবলার রোনালদোকে কাছে পেয়ে এমন উচ্ছাস তারা।
ফিফার ওয়েবসাইটে রোনালদোকে দেওয়া রদ্রিগোর সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে। কাল রাতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিতের পর ম্যাচের জার্সি ও বুট পরেই রোনালদোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বসেন ২১ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। রদ্রিগোর ক্যারিয়ারে এটাই প্রথম বিশ্বকাপ আর এই টুর্নামেন্টে আগের ম্যাচেই তাঁর অভিষেক হয়েছে।
রদ্রিগোর মনের অবস্থা বুঝতে পেরেই হয়তো রোনালদো নিজের প্রসঙ্গ টানলেন। শোনালেন, মাত্র ১৮ ছুঁই ছুঁই বয়সে ’৯৪ বিশ্বকাপে খেলার স্মৃতি। সেবার রোনালদো ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকলেও তাকে খেলানো হয়নি। জাতীয় দলের সঙ্গে রেখে তাঁকে পরিণত করে তোলাই ছিল ব্রাজিলিয়ান টিম ম্যানেজমেন্টের লক্ষ্য।
ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে রোনালদোকে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে সবার আগে মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন রদ্রিগো, ‘আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারাটা আমার জন্য আনন্দের। দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে। প্রতিদিনই শিখছি।’
সাক্ষাৎকারের শেষে রদ্রিগোকে শুভকামনা জানিয়ে তাঁর সঙ্গে হাত মেলান রোনালদো। রদ্রিগো এরপর ওই কাণ্ডটি করে বসেন। দুটি হাত দিয়ে রোনালদোর দুই পায়ের হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখেন এবং তারপর হাত দুটো নিজের পায়ে মালিশ করেন।
খেলোয়াড়ি জীবনে স্টেপ ওভার ও ড্রিবলিংয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে দুই পা ছুরির মতো চালানো রোনালদো এ সময় হো হো করে হেসে ওঠেন। রদ্রিগোর আচরণে কিংবদন্তি যে মজা পেয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য।