চীনের নাম না নিয়েই দেশটিকে ইঙ্গিত করে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চার দেশের কৌশলগত জোট কোয়াড (কোয়াড্রিলিটারেল সিকিউরিটি ডায়ালগ)। মঙ্গলবার (২৪ মে) জোটটির শীর্ষ সম্মেলনে নেতারা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে চীনের জবরদস্তিমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চলে চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চার দেশের নেতারা।
মঙ্গলবার (২৪ মে) জাপানের টোকিওতে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টোনি আলবানেজ কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনে চার নেতা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি ইউক্রেনের রুশ আগ্রাসন, জলবায়ু সংকট, করোনাভাইরাস, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়েও আলোচনা করেন।
সম্মেলন শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে চার নেতা বলেন, কোয়াডের সর্বশেষ পদক্ষেপগুলো মঙ্গলের জন্য নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ গভীর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের এই সময়ে অত্র অঞ্চলের সুবিধার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
চীনের নাম উচ্চারণ না করেই দেশটিকে ইঙ্গিত দিয়ে বিবৃতিতে নেতারা বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার জন্য যেকোনো জবরদস্তিমূলক, উস্কানিমূলক বা একতরফাভাবে নেওয়া পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে কোয়াড।
কোয়াড নেতারা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলে জবরদস্তিমূলক কর্মকাণ্ড রুখতে ইন্দো-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ ফর মেরিটাইম ডোমেন অ্যাওয়ারনেস (আইপিএমডিএ)-এর আওতায় সামুদ্রিক নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। এ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ,চোরাচালান, অবৈধ মাছ ধরা মোকাবিলায় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে কোয়াড।
কোয়াড নেতারা সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করলেও মস্কোর সরাসরি নিন্দা করেননি। উল্লেখ্য যে, কোয়াডের সদস্য ভারত রাশিয়া ইস্যুতে শুরু থেকেই নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে। দিল্লি এখনও মস্কোর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনো নিন্দা জানায়নি। তবে কোয়াডের যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে একটি দুঃখজনক সংকট বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এর আগে, গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে কোয়াডের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতেও চার দেশের নেতারা সরাসরি যোগ দিয়েছিলেন। এবার কোয়াডের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে নেতারা টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চার দেশের নেতারা সরাসরি উপস্থিত থেকে বৈঠক করেছেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, “আমরা গত সেপ্টেম্বরে শেষবার বৈঠক করেছি, এর পরে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে— ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ— যা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে পাল্টে দিয়েছে। এই আগ্রাসন জাতিসংঘের সনদের নীতিগুলোর প্রতি সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ। আমাদের ইন্দো-প্রশান্তীয় মহাসাগর অঞ্চলে একই ঘটনা ঘটতে দেওয়া উচিত নয়।”
এর পরেই অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী আলবেনিজকে বক্তব্য প্রদানের আহ্বান জানান কিশিদা। আলবেনিজ তার বক্তব্যে বলেন, “আমার সরকার কোয়াড সদস্যদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অস্ট্রেলিয়ার নতুন সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর সঙ্গে কোয়াড এজেন্ডার মিল রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, উন্নত পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাধ্যমে আরও স্থিতিস্থাপক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তোলা কোয়াড ও অস্ট্রেলিয়া সরকারের লক্ষ্য।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার বক্তব্যে বলেন, “ইউক্রেন যুদ্ধ শুধুমাত্র একটি ইউরোপীয় সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। যতদিন রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবে।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বক্তব্যে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন সরবরাহ এবং জলবায়ু ইস্যু মতো ক্ষেত্রগুলোতে জোটের সমন্বয়ের প্রশংসা করেন।