1. hmgrobbani@yahoo.com : admin :
  2. news@soroborno.com : Md. Rabbani : Md. Rabbani
  3. sayefrahman7@gmail.com : Sayef Rahman : Sayef Rahman
বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

‘টিকটকে’ আসক্ত নতুন প্রজন্ম, বাড়ছে অপরাধ

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১

সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক অ্যাপস ‘টিকটক’ সমাজে যৌন নিপীড়ন, নারী পাচার, অশ্লীলতা ও কিশোর অপরাধ উসকে দিচ্ছে বলে মত দিয়েছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, করোনায় দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোর-কিশোরীরা তাদের এনার্জি লেখাপড়ার বদলে টিকটকের মতো অ্যাপে খরচ করছে। এর মাধ্যমে তারা বিনোদন ও উত্তেজনা খুঁজে নিচ্ছে। এতে নতুন প্রজন্মের নৈতিকতা ধ্বংস হচ্ছে। এখনই এগুলো নিয়ন্ত্রণ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।সম্প্রতি ভারতে এক তরুণীকে নিপীড়নের ভাইরাল ভিডিওর বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর নারী পাচারকারী চক্রের সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন পর্যন্ত ভারতে এই চক্রের ১০ জন এবং বাংলাদেশে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চক্রটি টিকটক তারকা বানানোর কথা বলে অসংখ্য তরুণীকে পাচার করেছে।

টিকটক স্টার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর কিশোররাও দিন দিন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ভিডিও কন্টেন্টে লাইক, কমেন্ট পাওয়ার জন্য মরিয়া কিশোর গ্রুপগুলো মুহূর্তেই নিজেদের মধ্যেই ভার্চুয়াল বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে। পরে মারামারি-খুনোখুনিও ঘটছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ‘টিকটক প্রযুক্তি আমাদের তরুণদের স্থিরতার চেয়ে অস্থিরতা ও উত্তেজনায় ভরিয়েছে বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপসনির্ভর বিনোদন উৎসগুলো মানুষের অন্তর্নিহিত বাস্তবতা তুলে ধরছে। একটি জাতির সামাজিক প্রস্তুতি ও শিক্ষণ কতটা দুর্বল হলে অবক্ষয় ধরে চিন্তায়, মননে ও প্রকাশে। মানুষের মনে আকাশের ব্যাপ্তির চেয়েও বেশি ভাবনা ভর করতে পারে। তবে প্রকাশ্যে পরিমার্জন প্রয়োজন। আমাদের তরুণ সমাজের একটি অংশ উদ্ভট সংস্কৃতির আয়োজনে সাময়িক উত্তেজনায় যেসমস্ত কর্মে লিপ্ত হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
সমাজের মধ্যকার পচন, চিন্তার বিকৃতিপনা, মনুষ্য সংযুক্তির শরীরবৃত্তীয় চাহিদা টিকটকের মূল উপজীব্য। এর মধ্য দিয়ে দুই ধরনের আসক্ত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। যারা তৈরি করছে তারা নির্মাতা আসক্ত, অন্য পক্ষটি দর্শক আসক্ত। ফলে সমাজে নৈতিকতা গঠনে ও অনুশীলনে সমাজ গৃহীত রূপ পরিত্যাজ্য হচ্ছে। প্রয়োজন সম্মিলিত প্রতিরোধ পদক্ষেপ।
তিনি আরও বলেন, অনুভূতিপ্রবণ জাতি হিসেবে আমাদের উপলব্ধি দেরিতে আসে। টিকটক প্রতিরাধে গৃহীতব্য ব্যবস্থাটি কঠিন ও কঠোরভাবে নেওয়া উচিত। অন্যথায় প্রতিটি ঘরের পাশে একটি করে থানা বসাতে হবে। এখনই সময় জেগে ওঠার, নিজেদের তৈরি করার। সমাজ রূপান্তরের সময় চলছে। ঠিক না হলে পস্তাতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মাহফুজা খানম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোর-কিশোরীরা তাদের এনার্জি লেখাপড়ার বদলে টিকটকের মতো অ্যাপে খরচ করছে। এর মাধ্যমে তারা বিনোদন ও উত্তেজনা খুঁজে নিচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয়ে সেন্সরশিপের প্রয়োজন আছে। টিকটক কিশোর অপরাধের মতো ঘটনা উসকে দিচ্ছে। কিশোরদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তারা যে অপরাধগুলো করে তা একাকী নয়, দলগতভাবে করে থাকে। এক্ষেত্রে যেসব কিশোর-কিশোরীর চিন্তাভাবনা একই ধরনের, তারা যখন কোনো নেতিবাচক কাজ করে তা দলগতভাবেই করে। ফলে এই কম বয়সীদের মাদক গ্রহণ ও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। যদি সরকারিভাবে এ ধরনের অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করা হতো তাহলে এর এত অবাধ ব্যবহার হতো না।’
নজরদারিতে টিকটকঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘টিকটকের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে নারী পাচার কেন্দ্রিক অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। উঠতি বয়সী কিশোরী ও তরুণীদের মডেল বা স্টার বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে পাচার করছে একটি চক্র। এজন্য আমরা টিকটককে নেগেটিভলি দেখছি। টিকটক কেন্দ্রিক অপচেষ্টা বন্ধে আমরা জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
টিকটকের আড়ালে নারীপাচারভারতে পাচার হওয়ার ৭৭ দিন পর কৌশলে এক তরুণী সেখান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তিনি গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। পালিয়ে আসা তরুণী পুলিশকে জানান, টিকটক স্টার বানানোর কথা বলে রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে তাকে ভারতে পাচার করে দেওয়া হয়। সেখানে ধারাবাহিক শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার ৭৭ দিন পর তিনি কৌশলে দেশে পালিয়ে আসেন। ভারতে অবস্থান করার সময় তিনি আরও অনেক বাংলাদেশি তরুণীকে দেখেছেন। যারা বিভিন্ন সময়ে এ চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়েছেন।
অশ্লীলতা-ধর্ষণএছাড়া টিকটকে অশ্লীল ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করছে অনেকেই। গত বুধবার অশ্লীল টিকটক ভিডিও তৈরির অভিযোগে রাজশাহীতে নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, টিকটকাররা দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের প্রলোভন দেখিয়ে ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে ছেড়ে দিয়ে আসক্ত করছে। টিকটকারদের শক্তিশালী গ্রুপ রয়েছে যারা প্রলোভন দেখিয়ে ভিডিও বানিয়ে দেশের বাইরেও মেয়েদের পাঠানোর চেষ্টা করছে।
এ ছাড়া গত বছরের শেষ দিকে টিকটক করতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই কিশোরীকে তিন দিন একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। গণধর্ষণের পর নির্যাতিতাকে পুলিশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ঢাকার পৃথক দুটি স্থান থেকে দুই কিশোরকে আটক করে পুলিশ।
কিশোর অপরাধটিকটকে আসক্ত হয়ে পড়া কিশোররা বিভিন্ন পার্ক, খোলা জায়গায়, ফুটপাতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে একত্রিত হয়ে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির নামে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, ইভ টিজিং, পথচারীদের গতিরোধ, বাইক মহড়াসহ বিভিন্ন অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকে। এসব কন্টেন্ট তারা নিজেদের টিকটক আইডিতে আপলোড দেওয়ার পর লাইক-কমেন্ট পেতে রীতিমতো জোর-জবরদস্তি শুরু করে। গ্রুপগুলো একে অপরের ভিডিও কন্টেন্টে ‘লাইক’ ও ‘কমেন্ট’ করার আহ্বান জানায়। এক গ্রুপ লাইক বা কমেন্ট করার পর অপর গ্রুপটি যদি না করে এ নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যা হাতাহাতি, মারামারিতেও গড়ায়।
গত বছরের আগস্টে এমনই সংঘবদ্ধ একটি গ্রুপের কথিত দলনেতা অপু ভাই-খ্যাত কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অপু ও তার গ্রুপের সদস্যরা সড়কে টিকটক করার সময় এক পথচারী হাঁটার জন্য জায়গা চাওয়ায় তাকে মারধর করে। পরে ওই কিশোর জামিন পায়। তবে উত্তরায় তার গ্রুপ এখনো সক্রিয় রয়েছে।
তিন নারীপাচারকারী রিমান্ডেভারতে পাচার হওয়ার ৭৭ দিন পর কৌশল দেশে ফিরে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় এক কিশোরীর মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনের করা মামলায় গ্রেফতার তিন নারী পাচারকারীকে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- মেহেদি হাসান, মহিউদ্দিন ও আবদুল কাদের। গতকাল বৃহস্পতিবার আসামিদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে আবেদন করেন পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি