1. hmgrobbani@yahoo.com : admin :
  2. news@soroborno.com : Md. Rabbani : Md. Rabbani
  3. sayefrahman7@gmail.com : Sayef Rahman : Sayef Rahman
রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ১১:২০ অপরাহ্ন

দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দিচ্ছে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে। সম্প্রতি একটি চলমান গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের অ্যান্টিবডি লেভেল পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অন্যান্য ভ্যাকসিনের তুলনায় এটি দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা দিচ্ছে। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চলমান এই গবেষণায় প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ জনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে এমন ফলাফল পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলছে, এটি একটি চলমান গবেষণা আর তাই চূড়ান্ত কিছু এখনই বলা ঠিক হবে না। তবে প্রাথমিকভাবে যে তিন মাসের ফলোআপের পরে ফলাফল দেখা যাচ্ছে তা চমকপ্রদ। আরও বিস্তারিত আকারে এই গবেষণার কাজ শেষ করে দ্রুতই জার্নালে তা প্রকাশ করা হবে।

সিনোফার্ম ভ্যাকসিন কী?

১৯ জুন থেকে দেশে চীনের সিনোফার্মের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি- সিওআরভি (ইইওইচ-ঈড়ৎঠ) ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। পরবর্তীতে আরও বিস্তৃত আকারে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু করা হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

সিনোফার্মের ভ্যাকসিন মানবদেহে কাজ করে কীভাবে?

চীনের সিনোফার্মের এই ভ্যাকসিনটি মূলত একটি নিষ্ক্রিয় বা ইনেক্টিভেটেড ভ্যাকসিন যা ইনফ্লুয়েঞ্জা, ইনেক্টিভেটেড পোলিও বা র‍্যাবিস ভ্যাকসিনের অনুরূপ বহুল প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণে তৈরি। এই পদ্ধতিতে ভাইরাসকে কেমিক্যালের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে ভ্যাকসিন হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেহেতু ভ্যাকসিনটি নিষ্ক্রিয় বা ইনেক্টিভেটেড ভাইরাস থেকে তৈরি তাই মানব দেহে আশানুরূপ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আটাশ দিন ব্যবধানে দুই ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করা প্রয়োজন।

চলমান গবেষণা ফলাফলে কী বলছে?

দেশে বিভিন্ন ধাপে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরে মানবশরীরে কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য গবেষণা চালানো হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। গবেষণাটি করেন প্রতিষ্টানটির সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দেখার জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রথম গবেষণা ফলাফলে জানানো হয়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড নামের ভ্যাকসিনের দুই ডোজ গ্রহণের পরে গ্রহীতাদের মাঝে তৈরি হচ্ছে শতভাগ অ্যান্টিবডি।
বিজ্ঞাপন

সর্বমোট ৫০০ জন ভ্যাকসিন গ্রহীতার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের পরে অ্যালাইজা পদ্ধতিতে এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয় বলে জানায় ডা. আশরাফুল হক।

জানতে চাইলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের গবেষক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এর আগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দেখেছিলাম। একই ভাবে আমরা সিনোফার্মের কার্যকারিতাও পরীক্ষা করছি।

তিনি বলেন, ‘কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন তাদের মাঝে অ্যান্টিবডির মাত্রা খুব ভালো পাওয়া গেছে। ঠিক একই ভাবে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নিয়েছেন এমন ৫০ জনের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে আমাদের গবেষণায়। এই ৫০ জনের অ্যান্টিবডি লেভেল আমরা তিনমাস পর্যন্ত ফলোআপ করেছি। এই ফলোআপের ফলাফল অনেকটাই চমকপ্রদ।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোভিশল্ড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছিলাম এর দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হওয়ার ১৪দিন পর থেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে আসে। এটি খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। তবে সিনোফার্মের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অ্যান্টিবডি লেভেল অন্যান্য ভ্যাকসিনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায় কমছে। এর মানে হচ্ছে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন যারা নিচ্ছে তাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে তা দীর্ঘ মেয়াদে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ডা. আশরাফুল বলেন, ‘কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে অপটিক্যাল ডেনসিটি বিবেচনা করে আমরা দেখেছিলাম অপেক্ষাকৃত তরুণদের মাঝে ভালো মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গড়ে অ্যান্টিবডি টাইটার লেভেল ছিল ৮। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ টাইটার হিসেবে আমরা ১১ও পেয়েছিলাম। তবে যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তাদের মাঝে অপেক্ষাকৃত কম অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। তবে সবারই যে কম বিষয়টি তাও নয়। এক্ষেত্রে আমরা সেই সময় সর্বনিম্ন টাইটার লেভেল পেয়েছিলাম ৩।’

তিনি বলেন, ‘কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিন গ্রহণ শেষে আমরা গড়ে যাদের অ্যান্টিবডি টাইটার লেভেল ৮ পেয়েছিলাম তাদের যখন তার কার্যকারিতা কমতে শুরু করে তখন তা দ্রুতই কমে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ৮ থেকে ৭ বা ৬ হয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুতই। তবে সিনোফার্মের ক্ষেত্রে দেখা যায় এটি এত দ্রুত কমছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিনোফার্মের ভ্যাকসিন গ্রহণের পরে যদি কারো টাইটার লেভেল ৬ হয়ে থাকে তবে কমছে অল্প মাত্রায়। অনেকটা এভাবে বলা যেতে পারে যে, দশমিক ১ বা কিছু ক্ষেত্রে দশমিক ২ থেকে দশমিক ৩ করে কমছে। অর্থাৎ যার টাইটার লেভেল ৬ ছিল সেটি একটি সময় পরে ৫ দশমিক ৯ বা ৫ দশমিক ৮ আকারে কমছে। এর মানে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন যারা নিচ্ছে তারা দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা পাচ্ছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা খুবই আশাব্যঞ্জক।

তবে এই গবেষণাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে যার অনেক কাজ বাকি। একই সঙ্গে চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়ার জন্য আরও অনেক তথ্য এখানে যুক্ত হবে। আমরা ৫০ জনের উপরে এই গবেষণার ফলাফল এখন দেখছি যা আরও বড় আকারে করে জার্নালে আমরা চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের চেষ্টা করবো— যোগ করেন ডা. আশরাফুল।

তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশে সবাইকে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা গবেষণায় দেখেছি যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করছেন তাদের মাঝে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকি থাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে। তাই কোন ভ্যাকসিন ভালো বা বেশি কাজ করে তা বিবেচনা না করে সবারই ভ্যাকসিন নেওয়া প্রয়োজন। এর কোনো বিকল্প নেই এখন পৃথিবী জুড়েই।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু এ বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত এত অল্প সময়ে এবং অল্প নমুনায় কোনো সিদ্ধান্ত জানানো ঠিক হবে না। তবে আমরা থিউরেটিক্যালি যে জানি তা হলো, ইনেক্টিভেটেড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি ধীরে কমে। অক্সফোর্ড ও মডার্না স্পাইক প্রোটিনের বিপক্ষে তাই সে তুলনায় কমপ্লিট ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইনেক্টিভেটেড ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বা অ্যান্টিবডি দীর্ঘসময় থাকবে। কারণ এটা শুধুমাত্র এস-প্রোটিন না, এখানে অন্যগুলোও আছে।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘সিনোফার্মের ভ্যাকসিন আসলে ইনেক্টিভেটেড ভ্যাকসিন। এই প্রযুক্তি পৃথিবীতে অনেক দিন থেকেই চলে। অন্যান্য ভ্যাকসিনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি নিরাপদ এটা। একই সঙ্গে এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অন্যান্যদের তুলনায় কম। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা একটি প্রযুক্তির মাধ্যমে সিনোফার্মের এই ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে গবেষণা বিষয়ে তা নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে আসলে এক বছর বা একটা বড় সময় পার না করলে আমরা আসলে কোনো ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বিষয়ে মন্তব্য করতে পারি না। আর কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত বিশ্বে যত নতুন ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হচ্ছে তার কোনোটাই কিন্তু দীর্ঘ সময় পার করে নি। তাই এখনই কার্যকারিতা বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করাই শ্রেয়। তবে যদি মৃত্যুঝুঁকি কমাতে হবে অবশ্যই সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবারই যখন যে ভ্যাকসিন গ্রহণের সুযোগ আসে তা নিতে হবে। কারণ এটি সংক্রমণের তীব্রতা ঝুঁকি কমায়। আর তাই ভ্যাকসিন গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।’

এর আগে, দেশে গত ২৭ জানুয়ারি প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। এই কার্যক্রম শুরু হয় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড নামের ভ্যাকসিন দিয়ে। পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। ভ্যাকসিন সরবরাহে ঘাটতি থাকায় পরবর্তীতে কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচিতে ভাটা পড়লেও পরবর্তীতে এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয় ফাইজার বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার ভ্যাকসিন ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন।

দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন কর্মসূচির আওতায় সরকারিভাবে চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন ক্রয় করা হয়। একই সঙ্গে চীন সরকারের পক্ষ থেকেও উপহার হিসেবে ভ্যাকসিন পাঠানো হয় বাংলাদেশে। ১৯ জুন থেকে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

উল্লেখ্য, দেশে সর্বশেষ ৩০ আগস্ট চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের ৫৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়।

এর আগে কোভ্যাক্সের আওতায় তিন চালানে সিনোফার্ম থেকে দেশে আসে ৩৪ লাখ ৬১ হাজার ৮০১ ডোজ টিকা। একই সঙ্গে চীন থেকে বাংলাদেশ সরকারের কেনা সিনোফার্মের ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসে।

এছাড়াও, ১২ মে প্রথমবার সিনোফার্মের তৈরি পাঁচ লাখ ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে বাংলাদেশে পাঠায় চীন। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ১৩ জুন আরও ছয় লাখ উপহারের ভ্যাকসিন আসে। সবশেষ ১৩ আগস্ট সিনোফার্ম থেকে আরও ১০ লাখ ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে পাঠায় চীন।

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি