ঢাকা: টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সিরিজের শুরুটাও হলো দারুণ। নিউজিল্যান্ডকে তাদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৬০ রানে গুটিয়ে দিয়ে পরে সহজেই ৭ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাংলাদেশ। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল টাইগাররা। এর মাধ্যমেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জয় এলো বাংলাদেশের।
ছোট লক্ষ্যের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের সূচনাটা অবশ্য ভালো হয়নি। দলীয় সংগ্রহ দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করার আগেই বিদায় নেন দুই তরুণ ওপেনার নাইম শেখ ও লিটন দাস। তবে পরে ঠিকই হাল ধরেন অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের সম্ভাব্য জয়টা নিশ্চিত হয়েছে তাতেই।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলতে নামার আগেই বড় একটা খবর শুনেছে বাংলাদেশ দল। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল। অর্থাৎ বিশ্বকাপে তরুণ ওপেনারদের ওপর ভরসা করতে হবে টাইগারদের। তরুণরা কেমন করেন সেটা দেখার ছিল আজ। প্রথম দফায় পুরোপুরিই ব্যর্থ বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি।
৬০ রানের জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন তরুণ নাইম শেখ (১)। পরের ওভারে অ্যাজাজ প্যাটেলের বল পড়তে না পেরে এলবিডব্লিউ লিটন দাস। তবে শুরুতে দুই ওপেনারকে তুলে নিলেও অল্প রানের পুঁজি নিয়ে নিউজিল্যান্ডের যে চমক ঘটানোর সুযোগ নেই সেটা এরপর অনেকটা নিশ্চিত করেছেন দুই অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।
প্রতিপক্ষের পুঁজি বড় নয় বলে অনেকদিন পর দলে ফেরা মুশফিকুর রহিম তেমন সুযোগ নেননি। উইকেট আঁকড়ে ধরে সাকিবকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন। অন্য দিকে সাকিব খেলেছেন নিজের মতো করেই। দলীয় ৩৭ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে ২৫ রান করেছেন ৩৩ বল খেলে, তার ইনিংসে চারের মার দুটি। এরপর আর উইকেট উল্লাস করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড।
চতুর্থ উইকেটে অপরাজিত ২৫ রানের জুটি গড়ে সাত উইকেটে জয় নিশ্চিত করেছেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ। মুশফিক শেষ পর্যন্ত ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। ২২ বলে ২ চারে ১৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ১৫ ওভারের শেষ বলে জয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
এর আগে বোলিং জাদুতে নিউজিল্যান্ডকে ৬০ রানেই গুটিয়ে দিয়েছে মাহমুদউল্লাহ দল। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া নিউজিল্যান্ডকে শুরুতেই কিউইদের এলোমেলো করে দিয়েছে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ। স্পিন আক্রমণ সফরকারীদের ভুগিয়েছে পুরো ইনিংসেই। পেস আক্রমণে আজও দুর্বার ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। সাইফ উদ্দিনও সঙ্গ দিয়েছেন উইকেট শিকারিদের তালিকায়। সব মিলিয়ে কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর আগেই গুটিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। যৌথভাবে টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ড দলের সর্বনিম্ন স্কোর এটি। আগেও সর্বনিম্নও ছিল ৬০।
ইনিংসের তৃতীয় বলেই নিউজিল্যান্ডের অভিষিক্ত ওপেনার রচিন রবীন্দ্রকে ক্যাচে পরিণত করলেন শেখ মেহেদী। তৃতীয় ওভারে প্রথম বোলিং করতে এসে উইকেট তুলে নেন সাকিব আল হাসান। সাকিবকে কাট খেলতে গিয়ে বল স্ট্যাম্পে টেনে আনেন উইল ইয়ং। পরের ওভারে অপর স্পিনার নাসুম আহমেদের শিকার দুই উইকেট। নাসুমের ওভারের তৃতীয় বলটা তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়েছেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। ওভারের শেষ বলে সরাসরি বোল্ড ব্লান্ডেন্স। নিউজিল্যান্ড তখন ৯/৪।
শুরুর এই ধাক্কাটা আর কাটিয়েই উঠতে পারেনি সফরকারীরা। এরপর পঞ্চম উইকেটে ৩৪ রানের একটা জুটি গড়েছে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার টম লাথাম ও হেনরি নিকোলাস। দুই অঙ্কের পৌঁছা জুটি ছিল এই একটিই। সাইফ উদ্দিন লাথাম ও নিকোলাসকে ফেরালে এরপর মোস্তাফিজুর রহমানের সামনে আর ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়ে পারেননি কিউইরা। লাথাম, নিকোলাস দুজনই করেছেন ১৮ রান করে। নিউজিল্যান্ড ৬০ রানে গুটিয়ে গেছে ১৬.৫ ওভারে।
বাংলাদেশের হয়ে মোস্তাফিজ ২.৫ ওভার বোলিং করে ১৩ রান খরচায় নিয়েছেন তিন উইকেট। সাকিব আল হাসান ৪ ওভারে ১০ রানে দুটি, নাসুম আহমেদ ২ ওভারে ৫ রানে দুই উইকেট নিয়েছেন। সাইফ উদ্দিন ২ ওভারে ৭ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। ৪ ওভারে ১৫ রান খরচ করা মেহেদীর দখলে গেছে বাকি উইকেটটি।