প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমাজে নারীদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে, ‘নারী নেতৃত্ব তৈরি করতে এবং নারী শিক্ষার প্রসারে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে যাতে তারা সমানভাবে এগিয়ে যেতে পারে।’
বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান এবং বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর ইউএনবির
গণভবন থেকে অনলাইনে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজে বিশেষ অবদান রাখায় এবারও বিশিষ্ট পাঁচ নারীকে রোকেয়া পদক দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই দেশের নারীরা সমানভাবে এগিয়ে আসুক। এই সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী এবং নারীরা যদি সমানভাবে নিজেদের প্রস্তুত না করতে পারেন … তবে এই সমাজ কীভাবে তৈরি হবে?’
তিনি বলেন, ‘সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, তবে সমাজের অর্ধেক যদি পিছিয়ে থাকে তবে সমাজ কীভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার নারী শিক্ষা ও তাদের কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দিয়েছে। সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি চায় এবং এ জন্য ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।’
এই প্রসঙ্গে তিনি নারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
‘এটি সমাজ ও দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে এবং দেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত। আমরা এ লক্ষ্য সামনে রেখেই ব্যাপকভাবে কাজ করছি,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার সারাদেশে এমনকি কর্মজীবী নারীদের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হোস্টেল নির্মাণ করছে যাতে তারা ভালো আবাসন পেতে পারে। এর মাধ্যমে, নারীরা সুরক্ষিত স্থানে থেকে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।’
নারী ও শিশু নির্যাতনকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে অভিহিত করে তিনি দেশে এই সামাজিক সমস্যাগুলো বন্ধে দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করে বলেন, ইতিমধ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নারী, পুরুষসহ সবাইকে সমানভাবে অংশ নিতে হবে।’
বেগম রোকেয়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মহিয়সী নারী চেয়েছিলেন যাতে নারীরা যথাযথ শিক্ষা অর্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ এখন এমন একটি অবস্থানে পৌঁছেছে যেখানে নারীরা মর্যাদাপূর্ণ পদে অবস্থান করে নিয়েছে এবং তারা এখন প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় পদে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়াও সংসদ নেতা, স্পিকার ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, বাংলাদেশে সবাই নারী, যা বিশ্বের এক উদাহরণ।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার যা প্রথমবারের মতো নারী কর্মকর্তাদের সচিব, বিচারক, ডিসি, এসপি এবং ওসি পদে নিয়োগ দিয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বছর বেগম রোকেয়া পদকের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত নারীরা হলেন- নারী শিক্ষায় অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কর্নেল (ডা.) নাজমা বেগম, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মঞ্জুলিকা চাকমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেগম মুশতারী শফি (বীর মুক্তিযোদ্ধা) এবং নারী অধিকারে অবদানের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোকেয়া পদক-২০২০ প্রদান করেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ও সচিব কাজী রওশন আক্তার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বেগম মুশতারী শফি পদপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন।