শিরোনামে উল্লেখিত তথ্যই বলে দিচ্ছে, মাউন্ট মাউনগানুইয়ের বক্সিং ডে টেস্টে চয়ের পাল্লা ঝুঁকে রয়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের দিকে। সফরকারী পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে রয়েছে হারের পাল্লা। চতুর্থ দিন শেষের এই সমীকরণ দেখে কেউ কেউ হয়তো ঝুঁকি নিয়ে বলতে চাইবেন, জয় দেখছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু এটা বলাটা আসলেই একটু ঝুঁকি হয়ে যায়!
কারণ, পাকিস্তান জয়ের আশা হয়তো করছে না। জয়ের চেষ্টাও হয়তো তারা করবে না। কিন্তু টেস্টটা ড্রয়ের মোড়ক দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা অবশ্যই চালাতে চাইবে তারা। তাদের হাতে যেহেতু ৭টি উইকেট আছে। তবে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের যে লেজে-গোবরে অবস্থা, তাতে ৭ উইকেটে তারা শেষ দিনটা কাটিয়ে দিতে পারবে, সেই ভরসা-সম্ভাবনা কমই। সব মিলে চতুর্থ দিন শেষে কিউইদের জয়ই উঁকি-ঝুকি দিচ্ছে।
তৃতীয় দিন শেষেই পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস ২৩৯ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে নিউজিল্যান্ড আদায় করে নেয় ১৯২ রানের বিশাল লিড। এই লিড হাতে নিয়ে আজ চতুর্থ দিনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে কিউইরা। হাতে বিশাল লিড থাকায় কিউইরা দ্বিতীয় ইনিংসে চালিয়ে খেলবে, এমনটা প্রত্যাশিতই ছিল। কেন উইলিয়ামসনের দল হেঁটেছে সেই প্রত্যাশিত পথেই। দ্রুত রানের চাকা ঘুরিয়ে লিডটা ফুলিয়ে-ফাপিয়ে তুলতে আজ দিনের শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে থাকে কিউইরা।
লক্ষ্যে সফলও হয়েছে তারা। মাত্র ৪৫.৩ ওভারেই ৫ উইকেট হারিয়ে তুলে ফেলে ১৮০ রান। এরপরই ইনিংস ঘোষণা করে দেন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন। কারণ, ১৮০ এর সঙ্গে প্রথম ইনিংসের ১৯২ রান মিলিয়ে কিউইদের লিডটা দাঁড়িয়ে যায় ৩৭২ রানের। বাউন্সি উইকেটে জয়ের জন্য লিডটা যথেষ্টই। সেটিকে যথেষ্ট প্রমাণ করতে কিউই বোলাররাও ঝাপিয়ে পড়ে।
৩৭৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা পাকিস্তানকে শুরুতেই কাঁপিয়ে দেন টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ড। স্কোরবোর্ডে রান উঠার আগেই তারা সাজঘরে পাঠিয়ে দেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার সান মাসুদ ও আবিদ আলিকে। দুজনেই ডাক মারেন। সান মাসুদকে ফেরান টিম সাউদি। আবিদ আলিকে ট্রেন্ট বোল্ড। শূন্য রাতে ২ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো কাঁপতে থাকে পাকিস্তান। সেই কাঁপন আরও বাড়িয়ে দিয়ে দলীয় ৩৭ রানে ফিরে যান হারিস সোহেলও। টিম সাউদির দ্বিতীয় শিকার হয়ে হারিস সোহেল ফিরেন মাত্র ৯ রান করে। ৩৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন কাঁপে হরিকম্প।
দিন শেষে সেই কাঁপন খানিকটা হালকা করেছেন আজহার আলি ও ফাওয়াদ আলম। দুজনে মিলে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩৪ রানের জুটি গড়ে দিনের বাকি সময়টুকু নিরাপদেই কাটিয়ে দিয়েছেন। দলকে পৌঁছে দিয়েছেন ওই ৩ উইকেটেই ৭১ রানে। দিন শেষে আজহার ৩৪ ও ফাওয়াদ আলম ব্যাট করছেন ২১ রানে।
ফলে এখনো পাকিস্তান ৩০১ রানে পিছিয়ে। জিততে হলে তাদের করতে হবে আরও ৩০২ রান। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে পাকিস্তান জয়ের অলীক স্বপ্ন দেখবে না, এটা নিশ্চিত। কাল শেষ দিনে তাদের একমাত্র লক্ষ্য হবে প্রানপণ লড়াই করে ম্যাচ বাঁচানো। অন্যদিকে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দিয়ে দ্রুতই জয় হাতের মুঠোয় পুরতে চাইবে নিউজিল্যান্ড। সেজন্য টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ডরা হয়তো হাত আরও পাকিয়েই নামবেন। এখন দেখার বিষয়, শেষ দিনে বিপরীতমুখী অসম লড়াইয়ে কারা জয়ী হয়!
এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে দ্রুত ১৮০ রানে পৌঁছে দিতে বড় ভূমিকা রাখেন দুই ওপেনার টম লাথাম ও টম ব্লান্ডেল। দুজনে উদ্বোধনী জুটিতেই তুলে ফেলেন ১১১ রান। এরপর চালিয়ে খেলতে গিয়েই বাকি ৬৯ রানের মধ্যে হারিয়েছে ৫ উইকেট। ওপেনিং জুটির ‘দুই টম’-এর একজন লাথাম করেছেন ৫৩ রান। অন্যজন ব্লান্ডেল করেছেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৪। এছাড়া অধিনায়ক উইলিয়ামসন ২১, রস টেলর অপরাজিত ১২, হেনরি নিকোলস ১১, বিজে ওয়াটলিং ৫ এবং মিচেল সান্তানার করেছেন অপরাজিত ৬ রান। পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে নাসিম শাহ নিয়েছেন ৩টি উইকেট। একটি উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ আব্বাস। অন্যটি রানআউট।