গত ২৬ জানুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে আইসিবি ও পুঁজিবাজার ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পের পরামর্শক সুইস নাগরিক মি. জুলিয়ানের বৈঠকে বন্ডের বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে দুই মাসেও এই বন্ড আনা যায়নি। এখনও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতিই মেলেনি। তবে আইসিবি, বিএসইসি, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বন্ডটি এলে পুঁজিবাজারে তারল্যসংকট দূর করে ১২ শতাংশ সুদে মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে।
পুঁজিবাজারে তারল্য দূর করতে এক বিলিয়ন ডলারের বন্ড আনার ঘোষণা দেয়ার দুই মাসেও প্রাথমিক কাজগুলো শেষ করা যায়নি।
জানুয়ারির শেষ দিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এই বন্ড আনার কথা জানায়। সে সময় জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (আইসিবি) এই বন্ড নিয়ে আসবে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এই বন্ডে বিনিয়োগ করবে। এই অর্থে পুঁজিবাজারে যেসব ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক মার্জিন ঋণ সুবিধা দিচ্ছে তাদের স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা করা হবে।
এক দশক ধরে পুঁজিবাজারে বারবার তারল্যসংকটের বিষয়টি সামনে এসেছে। তবে যখন এই বন্ড আনার কথা হচ্ছিল, তখন এই তারল্যসংকটের বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় ছিল না; বরং ওই মাসে দেড় থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে।
তবে এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে লেনদেন নেমেছে ৫০০ কোটির নিচে। চাঙা বাজারে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া দুটি কোম্পানির শেয়ারই হাতবদল হয়েছে এর চেয়ে বেশি।
এই অবস্থায় বন্ডের বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে।
পুঁজিবাজারে তারল্য কমে যাওয়ার পর ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মার্জিন ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ বেঁধে দেয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে এই সুদহার কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আবেদনে তা পিছিয়ে জুলাইয়ে নেয়া হয়েছে। আর এখন তারা আরও এক বছর সময় চাইছে।
মার্জিন ঋণদাতাদের দাবি, তারা ৯ শতাংশে টাকা পেলে ১২ শতাংশে ঋণ দিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এই অর্থে তারা টাকা পাচ্ছেন না। ফলে বন্ডের অর্থ এলে স্বল্প সুদে অর্থায়নে কোনো সমস্যা হতো না।
বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ডটি ইস্যু হলে পুঁজিবাজারের যে তারল্য সমস্যা সেটি অনেকটাই কমে আসবে। এ জন্য আমরাও চাচ্ছি যেন দ্রুত বন্ডটি পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা যায়।’
আইসিবির মুখপাত্র বিভাস সাহা বলেন, ‘বন্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পুঁজিবাজারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়া সম্ভব হবে।’
বন্ডের সর্বশেষ অবস্থা
গত ২৬ জানুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে আইসিবি ও পুঁজিবাজার ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পের পরামর্শক সুইস নাগরিক মি. জুলিয়ানের মধ্যে এক বৈঠকে বন্ডের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
এমন আলোচনার দুই মাস পর ফান্ডের কার্যক্রম সম্পর্কে আইসিবির মুখপাত্র বিভাস সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফান্ডের বিষয়ে কয়েকটি মিটিং হয়েছে। আইসিবি ও বিএসইসি এ বিষয়ে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ভালোর জন্যই এ ধরনের বন্ড আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজগুলোকে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে বন্ডের অর্থ ব্যবহার করা হবে।’
বন্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুইজারল্যান্ড ব্যাংকের মাধ্যমে এক বিলিয়ন ডলারের যে বন্ড আনার কথা ছিল, সে কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এ নিয়ে কয়েকটি সভাও আমরা করেছি।
‘এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। সে কমিটি কাজ করছে। তবে যেহেতু এটি বিদেশি ব্যাংক আইসিবির মাধ্যমে ইস্যু করবে, সেহেতু সরকারের অনুমোদনের বিষয় আছে। আমরা কমিটি করে বন্ডের অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। অনুমোদন হয়ে আসার পর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।’
এ জন্য কত সময় প্রয়োজন হবে প্রশ্নে বিএসইসি কমিশনার বলেন, ‘এটা অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে। সুষ্পষ্ট সময় বলা কঠিন।’
কী কাজে ব্যবহার হবে বন্ডের অর্থ
সুইজারল্যান্ড ব্যাংকের এই বন্ডটি ৩ শতাংশ কুপন হারে আইসিবির সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করবে।
প্রতিষ্ঠানটি বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা টাকার মধ্যে আইসিবির নিজেদের তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করবে। বাকি চার হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজগুলোকে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানে ব্যবহার করা হবে।
বাকি দেড় হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে আইসিবি। বন্ডের মেয়াদ হবে সাত বছর।
বিশ্লেষকের বক্তব্য
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি পুঁজিবাজারে কার্যকর হলে একদিকে তারল্য সমস্যা সমাধান হবে, অন্যদিকে মার্জিন ঋণ প্রদানের কার্যক্রমও গতিশীল হবে, এতে পুঁজিবাজারে লেনদেনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে উদ্দেশ্যে বন্ডটি আনার কথা বলা হচ্ছে তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই বন্ডের কারণে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগাকরীরা উপকৃত হবে।
‘মহাধসের পর ৩০০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদান করা হলেও তা দিয়ে খুব বেশি কাজ হয়নি। নীতিমালার জটিলতার কারণে সবাই সে প্রণোদনা ব্যবহারও করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়ানোর জন্য আইসিবিকে আরও শক্তিশালী করা উচিত, এটা সত্য। তবে তার আগে আইসিবি শুধু ঋণ দেয়ার কাজ না করে পুঁজিবাজারে আরও সক্রিয় হওয়া উচিত।’