পশ্চিমা বিশ্ব যদি ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ অব্যাহত রাখে তাহলে বিপুল অস্ত্রভাণ্ডারের পুরো শক্তি ব্যবহার করে রাশিয়া প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলে হুমকি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বুধবার রুশ জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণের সময় পুতিন এই হুমকি দেওয়ার পর পশ্চিমে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এছাড়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ‘সামরিক সংহতিকরণ’ বা সামরিক বাহিনীর সেনাসংখ্যা বাড়াতে সেনা সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর জন্যও পুতিন বাড়তি অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুতিনের এই ঘোষণায় প্রমাদ গুনছে পশ্চিমা বিশ্ব। আশঙ্কা করা হচ্ছে পুতিন হয়তো সেনা সংখ্যা বাড়িয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ আরো জোরদার করতে পারেন। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন।
সম্প্রতি রাশিয়ার দখলে থাকা একের পর এলাকা পুনরুদ্ধার করার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অব্যাহতভাবে নানা হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই পুতিন এই ঘোষণা দিয়েছেন।
ওদিকে পুতিনের এমন হুঁশিয়ারির পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষকে সংলাপে বসার পাশাপাশি পরামর্শ ও নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলার উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে চীন।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, ইউক্রেন সংকটে চীনের অবস্থান সুসংগঠিত এবং পরিষ্কার।
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো রিজার্ভ সৈন্যদের ফের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, যদি আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখোমুখি হয়, তাহলে আমাদের জনগণকে রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ের ব্যবহার করবো। এটা কোনও ধাপ্পাবাজি নয়।
ইউরোপ রাশিয়াকে পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমারা আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে চায়। রাশিয়ার সঙ্গে ছায়া যুদ্ধ শুরু করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এটি অব্যাহত থাকলে মস্কো তার বিশাল অস্ত্রাগারের সব শক্তি দিয়ে জবাব দেবে। আর জবাব দেয়ার জন্য রাশিয়ার কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র রয়েছে’।
পুতিনের এ ঘোষণার পর রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু জানান, আংশিক সংহতিকরণে প্রাথমিকভাবে সামরিক অভিজ্ঞতা আছে এমন প্রায় তিন লাখ রিজার্ভ সেনাকে ডাকা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এই আংশিক সংহতিকরণের বিষয়টি অস্পষ্ট এক ধারণা। তবে এর অর্থ হতে পারে, রুশ ব্যবসায়ী এবং সাধারণ নাগরিকদের যুদ্ধের প্রচেষ্টায় আরও বেশি অবদান রাখতে হবে।
এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমন করা সত্ত্বেও রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেনি। এ আক্রমণকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলেই অভিহিত করে আসছে মস্কো।
পুতিনের নতুন এ ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের ঘোষণাও আসতে পারে এবং সেক্ষেত্রে সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে পুতিনের এ ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিমারাও। পুতিনের বক্তৃতার পরপরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ মন্ত্রী গিলিয়ান কিগান স্কাই নিউজকে বলেন, ‘পুতিনের মন্তব্যকে হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়। স্পষ্টতই এটি এমন হুমকি যা আমাদের খুব গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত। কারণ, আমরা যেমন নিয়ন্ত্রণে নেই, আমি নিশ্চিত যে তিনিও (পুতিন) নিয়ন্ত্রণে নেই’।
এর আগে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে ১ লাখ ৩৭ হাজার সদস্য বাড়ানোর এক নির্দেশনায় (ডিক্রিতে) সই করেন পুতিন। বর্তমানে রুশ সামরিক বাহিনীতে মোট নিয়মিত সদস্য সংখ্যা ১০ লাখের বেশি রয়েছে। বেসামরিক কর্মী রয়েছে প্রায় ৯ লাখ।
পুতিনের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, ‘রাশিয়ান ফেডারেশনের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২০ লাখ ৩৯ হাজার জনে উন্নীত করার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে, যার মধ্যে সামরিক সদস্য হবে ১১ লাখ ৫০ হাজার ৬২৮ জন’।
এই নির্দেশনার ফলে যারা কোন একসময় রুশ সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন বা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর জন্য সেই সব সংরক্ষিত সৈন্যদের এখন যুদ্ধ করার জন্য ডেকে পাঠানো হবে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রাশিয়ার মাতৃভূমি, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা আর জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য তিনি এই সৈন্য সমাবেশের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ (বুধবার) থেকেই এই সৈন্য সমাবেশ শুরু হয়ে যাবে।
পুতিন বলেন, তার লক্ষ্য পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলকে (লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক) ‘মুক্ত করা’ এবং এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ইউক্রেনের ‘দাস’ হিসাবে আর ফিরে যেতে চায় না। রাশিয়া এখন দোনেৎস্কের প্রায় ৬০ শতাংশ দখল করেছে এবং জুলাইয়ের মধ্যেই প্রায় পুরো লুহানস্ক দখল করে নিয়েছিল।