সবকিছু কেমন থমকে গেছে। দোকানপাট, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, যানবাহন, উৎসব-আনন্দ সব বন্ধ। সেই সাথে আটকে গেছে বহু মানুষের উপার্জন। দিনমজুর, গার্মেন্টস শ্রমিক, বিভিন্ন ব্যবসায়ী, গৃহকর্মীসহ আরো অনেক পেশার মানুষের উপার্জন একেবারেই বন্ধ।
জীবিকার সন্ধানে নিজ এলাকা ছেড়ে শহরে এসে বেশিরভাগ মানুষই ভাড়া বাড়িতে থাকেন। মাসিক খরচের একটা বড় অংশ চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়। হঠাৎ করে উপার্জন থেমে যাওয়া এই মানুষগুলোর জন্য বাড়ি ভাড়ার টাকা দেওয়াটা একটা বিশাল চাপ।
এই দিকে এই মড়ক কবে শেষ হবে আমরা কেউই জানি না।
সরকার যদি এই মহামারীর সময়ে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করে। যেসব বাড়িওয়ালার হাউজ লোন আছে সেটার কিস্তি এই কয় মাসের জন্য মওকুফ করে তাহলে বাড়িওয়ালারা সহজেই ভাড়াটিয়াদের থেকে বাড়ি ভাড়ার বিশাল বোঝা হালকা করে দিতে পারবেন।
অনেকেই সরকারের কাছে বিল মওকুফ এর দাবি না তুলে বাড়িওয়ালার কাছে ভাড়া না নেয়ার দাবি তুলছেন।
এদিকে অনেক বাড়িওয়ালার ঘর ভাড়ার টাকায় সংসার চলে। এই সময়ে যখন ভাড়াটিয়ারা ভাড়া দিতে পারছে না, তাই হঠাৎ করে বাড়িওয়ালারও ইনকাম বন্ধ হয়ে গেল। এরমধ্যে হোম লোন আর বিলের বিশাল চাপ তার মাথার উপর অনেক বড় বোঝা।
যেসব বাড়িওয়ালার ব্যাংক লোন নেই এবং যাদের বাড়ি ভাড়া ছাড়াও অন্য আয়ের উৎস আছে তারা মানবিকতার খাতিরে আপনার ভাড়াটিয়াদের এ সময়ে বাড়ি ভাড়ার জন্য চাপ দেবেন না। অবস্থা অনুযায়ী ভাড়া পঞ্চাশ থেকে শতভাগ পর্যন্ত মওকুফ করার চেষ্টা করুন। সরকার যতদিন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ততদিন অন্তত বিলটা নিয়ে বাকি ভাড়া মওকুফ করার চেষ্টা করুন। ভাড়াটিয়রা ভাড়া দিতে টানাটানি হলেও অন্তত বিলটা পরিষদের চেষ্টা করুন।
আপনার ভাড়াটিয়া নিন্মবিত্ত হলে তাদের ভাড়া মওকুফ করে আপনি ত্রাণ দেয়ার মতই একটা মহৎ কাজ করলেন। আর আপনার ভাড়াটিয়া যদি মধ্যবিত্ত হয়, তারা আরো বেশি করুন অবস্থায় আছে, তারা কারো সাহায্য পাচ্ছে না, আবার কারো কাছে চাইতেও পারছে না। আপনি ভাড়া মওকুফ করলে তাদের কাধ থেকে বিশাল একটা বোঝা সরে যাবে।
আবার সরকারি বেসরকারি বেশিরভাগ চাকুরীজীবি ঠিক মতই বেতন পাচ্ছেন।
ভাড়াটিয়া যারা এমন চাকুরে সে অফিস থেকে পুরো বেতনই পাচ্ছেন। তাহলে বাড়িওয়ালাকেও তার ভাড়া পরিশোধ করুন। বে ইনসাফ করবেন না। গরিবের টাকা মেরে দেয়া যেমন গুনাহর বড় লোকের টাকা মেরে দিলেও তেমন গুনাহই হবে।
বেশিভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ তার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটা বাড়ি বানায়। ঢাকা শহরে জমির দাম কোটি টাকা। চার পাঁচ তলা বাড়ি বানাতে লাগে আরো কোটি টাকা। তারপরে মাসে মাসে চওড়া সুদে ব্যাংক লোনের বোঝা, জমির ট্যাক্স, বাড়ির ট্যাক্স, মেইটেনেন্স কস্ট আরো কতকি। বাড়িওয়ালা যদি শুধু নিজে থাকার জন্য বাড়ি বানাতো তাহলে নিশ্চয় এতো বড় করে বানাতো না, এতো লোন নিতো না। নেয় কারণ এ থেকে তার ইনকাম আসবে। এটা একটা ব্যবসা। সে হিসাবে ইনকাম বন্ধের পেশার তালিকায় যারা বাসা ভাড়া দিয়ে খায় তাদের নামও রাখতে পারি।
এই সময়ে আমরা সবাই কেমন একটা ভয়ের মধ্যে আছি, স্ট্রেসের মধ্যে আছি। কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ অন্য সব কিছুর মত বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া সম্পর্কে একটা ঝামেলা পাকাতে চাচ্ছে। বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া একে অপরের প্রতিবেশী। সময়টা খারাপ, এখন পারষ্পরিক দ্বন্দ্বের সময় না। আসুন দূরে থেকেও আমরা মানবিক ভাবে একে অপরের পাশে থাকি৷ বিশেষত বাড়িওয়ালারা আরো সহানুভূতিশীল হই।