বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াবে

বিশ্বজুড়ে সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। খুব কম খাত রয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সাইবার হামলার শিকার হয়নি। সাইবার অপরাধীরা মূলত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা পরিচালনা করলেও অন্যান্য খাত যে তাদের হাত থেকে নিরাপদ রয়েছে, তা নয়। সাইবার অপরাধ এতটাই ক্রমবর্ধমান যে চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতির অংক ১ ট্রিলিয়ন (১ লাখ কোটি) ডলার ছাড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা ২০১৮ সালে সাইবার হামলার কারণে হওয়া ক্ষতির তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। খবর এএফপি।

গত সোমবার সাইবার হামলার বৈশ্বিক ক্ষতি বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ম্যাকাফি করপোরেশন। এ প্রতিবেদন তৈরিতে ম্যাকাফি করপোরেশনকে সহায়তা করেছে ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস)’। যেখানে উল্লেখ করা হয়, অনলাইন অপরাধ ক্রমে বাড়ছে। শুধু অনলাইন অপরাধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির মোট আউটপুটের ১ শতাংশের বেশি ক্ষতি হবে।

গবেষকদের দাবি, বিশ্বজুড়ে এখন র্যানসমওয়্যার, ফিশিং, বিজনেস ই-মেইল টেকওভার, স্পাইওয়্যার এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি হামলা বাড়ছে। এন্টারপ্রাইজ ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার অপরাধ দমনে প্রতিনিয়ত সক্ষমতা জোরদার করছে। সাইবার অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় টুল উন্নততর করা হচ্ছে। তার পরও অনেক সময় সাইবার হামলা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। সাইবার অপরাধীরা এতটাই সুসংগঠিত যে অনেক সময় আগাম বার্তা দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হচ্ছে। সিস্টেম পুনরুদ্ধারে অনেক সময় সাইবার অপরাধীদের অর্থ দিতে বাধ্য হচ্ছে ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলো।

ম্যাকাফি করপোরেশনের দাবি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দুর্বলতার কারণে সাইবার অপরাধ ক্রমে বাড়ছে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে রিমোট ওয়ার্কের সুবিধা চালু করেছে। রিমোট ওয়ার্ক সংস্কৃতি চলতি বছর সাইবার হামলার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতির অংক বেড়ে যাওয়ার দ্বিতীয় প্রধান কারণ।

উত্পত্তিস্থল চীনে কমতে শুরু করলেও গত মার্চের দিকে বিশ্বের অনেক দেশে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা তীব্র আকারে বাড়তে থাকে। ভাইরাসটিতে বহুজাতিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক কর্মী সংক্রমিত হতে থাকেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে কর্মীদের বাড়িতে বসে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে অনেক এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠান। যে কারণে কর্মীরা বাড়িতে বসে কাজ করার জন্য সঙ্গে নিয়ে যান কর্মক্ষেত্রের ল্যাপটপ ও প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ ডাটা, যা সাইবার অপরাধীদের দৃষ্টিতে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে আগাম সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরও সাইবার হামলার কারণে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়নি। অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাড়িতে বসে কাজ করায় সাইবার হামলার ঝুঁকি বেড়েছে বলে মনে করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।

এন্টারপ্রাইজগুলোর কর্মীদের বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করার সাইবার ঝুঁকি বিষয়ে আগেই সতর্কতা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও আরো কয়েকটি দেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা। কর্মীদের বাসায় থেকে কাজ করার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সাইবার অপরাধীরা প্রাতিষ্ঠানিক ডাটায় প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

ম্যাকাফি করপোরেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাইবার হামলার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে খাতসংশ্লিষ্টরা এবং বিভিন্ন দেশের সরকার সতর্ক অবস্থানে ছিল। সাইবার হামলা ঠেকাতে ব্যয় বাড়াতে উদাসীনতা এবং বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে না নেয়ায় প্রতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতির অংক বড় হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, যে কর্মীরা আগে কখনো বাড়িতে থেকে কাজ করেননি, তারাও এখন এটি করার চেষ্টা করছেন। একটি নির্দিষ্ট মাত্রা মেনে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ওইসব কর্মী। সাইবার দুনিয়া সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা সাইবার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বাসায় থেকে কাজ করার পরিবর্তিত সংস্কৃতির কারণে কর্মীদের আরো বেশি ভুল করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বাড়িতে বসে কাজ করায় কর্মীদের ওপর চাপ বাড়ছে। বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানের পাসওয়ার্ড হাতানোর জন্য এ সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা।

এন্টারপ্রাইজগুলোর পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিতে করোনাভাইরাস থিমের সতর্কবার্তা, অ্যাপস বা বার্তাসহ ম্যালিশাস সফটওয়্যার কর্মীদের সামনে তুলে ধরছে সাইবার অপরাধীরা। মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিভাগ কিছুদিন আগেও এমন সাইবার হামলার মুখে পড়েছিল। যেখানে হামলাকারীদের করোনাভাইরাস মহামারীর সুযোগকে কাজে লাগাতে দেখা গেছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলি সংস্থা চেক পয়েন্টের গবেষকরা জানান, করোনাভাইরাস আপডেটকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে মঙ্গোলিয়ান সরকারের নেটওয়ার্কে সন্দেহভাজন রাষ্ট্র সমর্থিত হ্যাকাররা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে। রিমোট ওয়ার্ক সংস্কৃতি চালুর পর অনেক কর্মীই তাদের নিয়োগকর্তার পেশাদার ডাটা নেটওয়ার্ক থেকে শুধু আসল পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে সুরক্ষিত এমন সব ওয়াইফাই সেটআপ নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার এভাবে ডাটা নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের বিধিনিষেধে শিথিলতা এনেছে। এ প্রক্রিয়ায় সাইবার অপরাধ ছাড়াও ডিভাইস চুরি বা ডাটা হারানোর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *