ভারতকে ‘৩৬’-এর লজ্জায় ডুবিয়ে জিতল অস্ট্রেলিয়া

ভারত এর আগে মাত্র একটি দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলেছিল। সেটিও এক বছর আগে নিজেদের ঘরের মাঠে, বাংলাদেশের বিপক্ষে। এই কিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে বিদেশের মাটিতে প্রথম বারের মতো গোলাপি বলের দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে নামা। সেটিও ভয়ঙ্কর সহ পেসারদের সমন্বয়ে গড়া দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অ্যাডিলেড টেস্ট নিয়ে তাই ভারতীয়দের ভয় ছিল অনেক। শেষ পর্যন্ত সেই ভয়ই কাল হলো কোহলিদের। কোহলির ভারত টেস্টটা হেরে গেছে আড়াই দিনেরও কম সময়ে!

ম্যাচের বয়স আড়াই দিন হতে হলে আজ তৃতীয় দিনে অন্তত ৪৫ ওভার খেলা হতে হতো। কিন্তু আজ খেলা হয়েছে মাত্র ৩৬,২ ওভার। এর মধ্যেই ৮ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সহজ এই জয় তুলে নেওয়ার পথে টিম পেইনের অস্ট্রেলিয়া বিরাট কোহলির ভারতকে ডুবিয়েছে দুদুটি ঐতিহাসিক লজ্জায়। ইতিহাস ছোঁয়া লজ্জা তো ঐতিহাসিকই।

প্রথমত, জয়ের পথে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে গুড়িয়ে দিয়েছে মাত্র ৩৬ রানে! নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্টে এটাই ভারতের সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। মানে কোহলির ভারত গড়েছে নিজেদের ইতিহাসে টেস্টে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার লজ্জার রেকর্ড। এই ৩৬-এর লজ্জার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ৯৬ বছরের পুরোনো এক লজ্জাও। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ১১ ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। সবাই আউট হয়েছেন নিজেদের রানের হিসাবটা এক অঙ্কে রেখে।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন লজ্জাজনক ঘটনা আর মাত্র একবারই ঘটেছিল। সেটা সেই ১৯২৪ সালে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বার্মিংহাম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকান ১১ ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হন। দলের ১১ জনের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে না পারার প্রথম এবং একমাত্র ঘটনা ছিল সেটিই। অবশেষে দীর্ঘ ৯৬ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকানদের সেই লজ্জায় ভাগ বসালো কোহলির ভারত!

অ্যাডিলেড টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ১১ ব্যাটসম্যানের রানের হিসাবটা এ রকম-৪, ৯, ২, ০, ৪, ০,৮, ৪, ০, ৪*,১। সবগুলো সংখ্যার যোগফল ৩৬। যার অর্থ, চরম এই ব্যর্থতার দিনে ভারত অতিরিক্ত খাত থেকেও কোনো রান পায়নি। দুর্ভাগ্য যখন আসে, সব দিক থেকেই আসে!

ভারতকে এমন দুটো লজ্জা উপহার দেওয়ার নায়ক অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার প্যাট কামিন্স ও জস হাজলউড। কামিন্স ২১ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। হাজলউড ছাপিয়ে গেছেন তাকেও। তিনি মাত্র ৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট।

নিজেদের এই ‘৩৬’ লজ্জা্ই মূলত ভারতীয়দের জন্য দ্রুত হার ডেকে এনেছে। অথচ শঙ্কা মাথায় নিয়ে নামলেও অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথম ইনিংস লিড পেয়েছিল কোহলির ভারতই। প্রথমে ব্যাট করে ভারত করেছিল ২৪৪ রান। জবাবে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে করতে পারে ১৯১ রান। ফলে প্রথম ইনিংসে ভারত পেয়ে যায় ৫৩ রানের লিড। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসের ‘৩৬’ লজ্জায় সেই লিড নেওয়অর আনন্দ-স্বস্তি ভেস্তে গেছে। পরিণত হয়েছে বিষাদে!

প্রথম ইনিংসে পাওয়া ৫৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ভারতের দ্বিতীয় দিন শেষে সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৯ রান। ৪ রান করে আউট হন পৃথ্বি শ। ৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। তখন কেই বা ভেবেছিল, রাত পোহালেই এমন করুণ দশা হবে ভারতের! ১ উইকেটে ৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা ভারত আজ তৃতীয় দিনে শেষ ৯ উইকেটে যোগ করতে পেরেছে মাত্র ২৭ রান! অবশ্য এর মধ্যে ৮ জন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন। একজন হয়েছেন রিটায়ার্ড হার্ট। প্যাট কামিন্সের বলে কনুইয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ১ রান করা মোহাম্মদ সামি। তার বিদায়ের মধ্যদিয়েই শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস। সঙ্গে নিশ্চিত হয়ে যায় হারও।

কারণ. ৩৬-এর লজ্জায় ডোবায় ভারত লিড পায় মাত্র ৮৯ রানের। ৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিনিয়ে আনা, অস্ট্রেলিয়ার জন্য এ আর এমন কি! অসিরা সহজ কাজটা সেরেছেও সহজেই। ২১ ওভার ব্যাট করে মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই পৌঁছে গেছে লক্ষ্যে (৯৩/২)। দলকে সহজ জয় এনে দিতে ওপেনার জো বার্নস খেলেছেন অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংস। অন্য ওপেনার ম্যাথু ওয়েড করেছেন ৩৩, মার্নাস লাবুসাঙ্গে ৬ ও স্টিভেন স্মিথ অপরাজিত ছিলেন ১ রান করে।

৮ উইকেটের এই জয়ে ৪ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ২৬ ডিসেম্বর থেকে, মেলবোর্নে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *