ভিহারি-অশ্বিনের ৪২.৪ ওভারের ধৈর্যের খেলায় ম্যাচ ড্র

দিনের খেলা আরও কয়েক ওভার বাকি ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন নিজ দলের বোলারদের দিয়ে আর অযথা খাটুনিটুকু খাটাতে চাইলেন না। তাই তিনি এগিয়ে গিয়ে ব্যাট করতে থাকা ভারতের দুই ব্যাটসম্যানকে ড্রয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। ম্যাচ বাঁচানোর জন্য মনপ্রান উজাড় করে লড়াই করা ভারতীয়দের সেই প্রস্তাবকে ‘না’ বলার কোনো কারণই ছিল না। টিম পেইনের প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা ধরলেন হনুমা ভিহারি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তাদের মুখে বিজয়ের হাসি!

সিডনি টেস্ট ড্র। তবে নিজেদের লড়াইয়ে অবিশ্বাস্যভাবে বিজয়ী ভিহারি ও অশ্বিন। বিজয়ী ভারতও। চতুর্থ দিন শেষে যে টেস্টে হার দেখছিল ভারত, তাতে ড্র করে মাঠ ছাড়া, সেটাও ৫ উইকেট হাতে রেখে। সিডনি টেস্টের ফল ড্র হলেও ভারত বিজয়ী ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে। আর ভারতের এই লড়াইয়ের বড় দুই নায়ক ভিহারি ও অশ্বিন।

রানের হিসাব করলে চতুর্থ ইনিংসে ভারতের বড় নায়ক ঋষভ পান্ত ও চেতেশ্বর পুজারা। কিন্তু সিডনি টেস্টে আজ শেষ দিনে ভারতের লড়াইটা রানের জন্য ছিল না। তাদের লড়াইটা ছিল উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার। লড়াইটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ছোড়া গতি আর বাউন্সের ছোবলের মুখে ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়ার। সেই লড়াইয়ে ভিহারি ও অশ্বিনই বড় নায়ক। দুজনে মিলে যে ষষ্ঠ উইকেটে কাটিয়ে দিয়েছেন ৪২.৪ ওভার।

আগের দিনের ২ উইকেটে ৯৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে ভারত। জয়ের আশা সিকোয় তুলে তাদের একমাত্র লড়াই ছিল সারাদিন উইকেটে কাটিয়ে দেওয়া। সেই লড়াইয়ে নেমে আজ দিনের শুরুতেই আউট হয়ে যান অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে। আগের দিন করা ৪ রানেই ফিরে যান তিনি। রাহানে আউট হওয়ার পর উইকেটে আসেন ঋষভ পান্ত। তিনি জুটি বাঁধেন পুজারার সঙ্গে। দুজনে মিলে শুরু করেন ধৈর্যের পরীক্ষা। তবে কারো কারো জন্য ধৈর্যের পরীক্ষাটা হয় মেরে খেলা। ঋষভ পান্ত সেই পথই বেছে নেন। ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে নেমে ব্যাট চালাতে থাকেন ওয়ানডে স্টাইলে। ঈশ্বরের আশির্বাদে তাতেও সফল ঋষভ পান্ত। পুজারার সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেন ১৪৮ রানের জুটি। জুটিতে ওভার কাটিয়ে দেন ৪৪.৩টি।

পরীক্ষার এই মেয়াদে ঋষভ পান্ত পৌঁছে যান সেঞ্চুরির কাছে। কিন্তু সেঞ্চুরিটা তিনি শেষ পর্যন্ত পাননি। আউট হয়েছেন সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থাকতে, ৯৭ রানে। এই ৯৭ রান তিনি করেছেন মাত্র ১১৮ বলে। ধৈর্যের পরীক্ষায় বসে ঋষভ পান্তের ব্যাট নামের কলমখানি কত দ্রুত চলেছে, সেটি এই তথ্যেই স্পষ্ট। তবে তার সঙ্গী পুজারা ধৈর্যের নিঁখাদ পরীক্ষাই দিয়েছেন। আউট হয়েছেন ২০৫ বলে ৭৭ রান করে। এই দুজনের বিদায়ের পর জুটি বাঁধেন ভিহারি ও অশ্বিন।

পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে পুজারা যখন আউট হন, দিনের খেলা তখনো ৪৭ ওভরের মতো বাকি। ভারতের হাতে মাত্র ৫ উইকেট। যাদের মধ্যে একমাত্র স্বীকৃতি ব্যাটসম্যান বলতে ভিহারি। বাকিরা বোলার। কিন্তু দলের প্রয়োজনে অশ্বিনরাও নিজেদের ব্যাটসম্যান রূপ দেখাতে পারেন। ভারতের স্পিনার অনেকবারই নিজের ব্যাটসম্যান সত্ত্বা প্রমাণ করেছেন। টেস্টে ৪টি সেঞ্চুরি সে কথাই বলে।

কিন্তু সেসব সেঞ্চুরি তো উপমহাদেশের ব্যাটিং উইকেটে। অস্ট্রেলিয়ার সবুজ উইকেটেও কি একজন বোলারের জন্য ব্যাটসম্যান সত্ত্বা দেখানো সম্ভব? যেখানে আবার ওত পাতা শিকারীর মতো ওত পেতে রয়েছেন প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জস হেজলউডদের মতো অগ্নি-গোলার শিকারীরা। কামিন্স-স্টার্ক-হেজলউডদের তোপের মুখে ৪৭ ওভার টিকে থাকা ভারতের শেষ ৫ ব্যাটসম্যানের জন্য সহজ ছিল না। কিন্তু কঠিন সেই কাজটা ভিহারি-অশ্বিন মিলেই শেষ করেছেন। বাকি ৪ ব্যাটসম্যানকে পরীক্ষা দিতে নামতেই হয়নি।

দুজনে মিলে ৪২.৩ ওভার কাটিয়ে দেওয়ার পর টিম পেইন বুঝে যান-অযথা বোলারদের খাটিয়ে লাভ নেই! তার চেয়ে ড্র মেনে নেওয়াই ভালো! অসীম এই ধৈর্যের পরীক্ষায় নেমে ভিহারি অপরাজিত ২৩ রান করতে খেলেছেন ১৬১ বল! অশ্বিন ৩৯ রান করতে কাটিয়েছেন ১২৮ বল!

তাদের দুজনের ৪২.৩ ওভারে ৬২ রানের জুটিতে ভঅরত শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে করেছে ৩৩৪ রান। হার দেখা ম্যাচে ধৈর্যের লড়াই করে ড্র-ভারত ড্র করেও পেয়েছে জয়ের সমান তৃপ্তি।
চূড়ান্ত স্কোর : অস্ট্রেলিয়া ৩৩৮ ও ৩১২/৬ (ডিক্লেয়ার)। ভারত ২৪৪ ও ৩৩৪/৫।
এই ড্রয়ে ৪ টেস্টের সিরিজে ১-১ সমতাই থাকল। সিরিজের চতুর্থ টেস্টটি শুরু হবে ব্রিসবেনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *