সিলেটের বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় হাজার খানেক মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলো সিলেট কোতোয়ালি থানা থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবুও মামলার পাহাড় মাথায় নিয়ে সিলেট বিএনপির নব জাগরণ ঘটতে যাচ্ছে। সিলেটের তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছাচ্ছে বিএনপি। এতে সিলেটে আগামীর বিএনপি হবে অনেকটা একতাবদ্ধ ও শক্তিশালী।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অধীনে প্রতিটি থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। সিলেটের অধিকাংশ থানায় বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নতুন কমিটি এসেছে। দলের কর্মীদের ওপর মামলা থাকারপরও সম্মেলন করে দলটি তার কমিটিগুলো গঠন করে যাচ্ছে। দলের দুঃসময়ে গ্রুপিংমুক্ত থেকে এই কমিটিগুলো একে একে প্রকাশ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সিলেটের কোনো থানায় বিএনপির অভ্যন্তরিণ কোন্দল প্রকাশ পায়নি। প্রথমে থানা কমিটি হচ্ছে। এরপর প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের গোপন ভোটে নির্বাচিত করা হচ্ছে ইউনিয়ন কমিটি। তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিগুলো গঠন করা হয়ে গেলে সিলেট জেলা কমিটি গঠন করা হবে।
বর্তমানে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নির্দেশে ও লন্ডনের সবুজ সংকেতে দল গোছানোর এই কাজ চলছে বলে জানায় দলটি। সিলেটে আগে বিএনপিতে একাধিক গ্রুপের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল। এখন মামলায় জর্জরিত বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে একাট্টা হয়ে সিলেটে কাজ করছে।
দলের কয়েকজন নেতা জানান, সিলেটের এসএমপিসহ জেলার বিভিন্ন থানা মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক মামলা বিএনপির কর্মীদের ওপর চলমান আছে। এই সব মামলার কারণে বিএনপির বিভিন্ন বলয়ের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জামিনের জন্য দৌঁড়ঝাপ দিচ্ছেন। এতে তাদের মধ্যে দলীয় কোন্দল মিটে যাচ্ছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। দলেরশীর্ষ পর্যায়ে বিভাজন থাকলেও থানা ও ইউনিয়নের কর্মীদের সুসংগঠিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে গোপনে দলটি সম্মেলন করে নিজেদের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাচ্ছে।
ওয়ার্ড কমিটির কমিটিগুলোতে দেখা যাচ্ছে মামলামুক্ত নতুন মুখ। কিছু জায়গায় ইউনিয়ন কমিটি গঠনে একটু বিলম্ব হতে পারে। কারণ, এসব ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থী। রয়েছে সুযোগ সন্ধ্যানী নেতাদের পকেট কমিটি গঠনের লবিং। দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়ন বিএনপিতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে ইউপি নির্বাচনে ধানের প্রতীক নিতে চান-এমন নেতারা এই লবিংয়ে রয়েছেন। তারা পকেট কমিটি করে পদ নিতে মরিয়া। তবে ত্যাগীরা বলছেন, পকেট কমিটি হলে বর্জন করে প্রতিবাদে নামবেন তারা।
লালাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাইমিনুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিল শিগগিরই শুরু হচ্ছে। আমাদের সকলের চাওয়া একটাই, ২৭ জন ভোটারের গোপন ভোটে নেতা নির্বাচন করা হোক। সমঝোতার নামে কোনো পকেট কমিটি কেউ চায়না।’
সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী আহমদ বলেন, ‘জনগণ বর্তমানে নির্যাতিত। বিএনপি এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়ছে। তাই আজ জনগণের পছন্দের দলও কিন্তু বিএনপি। জনগণের এই আস্থা নিয়েই আমরা সিলেটের বিএনপিকে শক্তিশালী করছি। নতুন রূপে গঠন করছি। প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়নে নেতা নির্বাচন করছি।’
সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, ‘সিলেটে আমরা গ্রাম পর্যায় থেকে বিএনপিকে গোছাচ্ছি। সব শেষে জেলা কমিটি করা হবে। এর আগে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গোছানো হবে। সম্মেলন ডেকে সামনাসামনি ভোটাররা তাদের নেতা নির্বাচন করবেন। একাধিক নেতা হলে ভোট হবে, পকেট কমিটি করার সুযোগ নেই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম বলেন, ‘আমাদের সকলের লক্ষ্য এক। তাই তিন খন্ডে বিভক্ত বিএনপিকে আমরা সিলেটে এক করেছি। আমার জন্মভূমি দক্ষিণ সুরমার বিএনপিতে আমরা দীর্ঘদিন পর একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে, জনগণের দরজায়-দরজায় পৌঁছাতে পারায়। বর্তমানে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। লালাবাজার ইউনিয়ন কমিটিতে যাতে কোনো পকেট কমিটি না হয়, সে ব্যাপারে আমরা খোঁজ-খবর নিব। সব কিছুর পরে আমরা সিলেট বিএনপি এক ও অভিন্ন হতে চাই।’