কুষ্টিয়ায় রাতের আঁধারে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে দুইজন মাদরাসাছাত্র এবং দুইজন মাদরাসা শিক্ষক।
তারা হলেন- কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাস্উদ (রা.) মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিংপুর মৃধাপাড়া এলাকার সমসের মৃধার ছেলে মো. আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯) এবং একই মাদরাসার ছাত্র দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গোলাবাড়ীয়া এলাকার সামছুল আলমের ছেলে সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০)।
ওই দুই ছাত্রকে মদদ দেয়ার অভিযোগে ওই মাদরাসার দুই শিক্ষক কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আল আমিন (২৭) এবং অপর শিক্ষক পাবনা জেলার আমিনপুর থানার দিয়াড় বামুন্দি গ্রামের আজিজুল মন্ডলের ছেলে ইউসুফ আলীকেও (২৬) গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই মাদ্রাসাছাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছেন।
আজ রোববার বিকেলে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার মহিউদ্দিন এসব তথ্য জানান।
এ সময় অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, স্পর্শকাতর এই ঘটনা ঘটার পর সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে পুলিশের সব ইউনিটকে কাজে লাগিয়ে ২৩ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ হামলায় অংশ নেয়া দুজন এবং তাদের মদদ দেয়া দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে।
তিনি বলেন, দেশের বিরুদ্ধে এবং দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর যে বা যারা আঘাত হানবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ ঘটনার পেছনে কারা আছে, কারা ইন্ধন দিয়েছে, নেপথ্যে কেউ জড়িত রয়েছে কিনা পুলিশ সে সব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাওলানা মামুনুল হক ও সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আবু বক্কর ও সবুজ ইসলাম গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছেন। ঘটনার রাতে তারা দুজন একসঙ্গে মাদ্রাসা থেকে হেঁটে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে পাঁচ রাস্তার মোড়ে যান। তারপর ভাস্কর্য নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বাঁশের মই দিয়ে উপরে উঠে নাহিদুল ইসলামের ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে আবু বকর মিঠুন ও মো. সবুজ ইসলাম দুজনে মিলে রাত ২টা ৫মিনিট থেকে রাত ২টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত নির্মাণাধীন ভাস্কর্যটির বিভিন্ন জায়গায় হাতুড়ি দিয়ে স্বজোরে আঘাত করে ভাস্কর্যটির ক্ষতি সাধন করে মাদরাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরের দিন সকালে মাদরাসার শিক্ষক মো. আল আমিন ও মো. ইউসুফ আলীকে ভাস্কর্য ভাঙচুরের বিষয়টি জানালে তাদেরকে মাদরাসা থেকে পালিয়ে যেতে বলে। আসামিদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পরে ওই শিক্ষকদ্বয়কে মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার উদ্যোগে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের মুখ ও হাতের অংশে ভাঙচুর করা হয়।
শনিবার রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দীন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।