স্বরবর্ণ ডেস্ক: ভারতে বসবাসরত কথিত বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে শনাক্তকরণ অভিযান শুরু হয়েছে। মুম্বই, মহারাষ্ট্র ও দিল্লিতে এই অভিযানে যাদেরকে বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী হিসেবে শনাক্ত করা হবে, তাদেরকে খুব দ্রুতই দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ওদিকে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি হিন্দু রোগী নন এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেয়ার বিরুদ্ধে কলকাতার একটি হাসপাতালের বাইরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এ খবর দিয়েছে অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমস ও বার্তা সংস্থা এএনআই। এতে বলা হয়, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিস শনিবার বলেছেন, মুম্বই ও মহারাষ্ট্রে বাংলাদেশি অবৈধ নাগরিকদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন শুরু হয়েছে। তাদেরকে দ্রুতই ফেরত পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেছেন, হিন্দু নন এমন সম্প্রদায়ের উপাসনালয়কে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি পর্যালোচনা করবে সরকার। রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের সমাপ্তির পর বিধান ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। ওদিকে হিন্দু নন এমন ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য উপাসনালয় হিসেবে যেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, তা রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন বিধানসভার স্পিকার রাহুল নারওয়েকার। তিনি বলেন, এ দাবি জনগণের। তিনি আরও বলেন, শুধু মন্দির নয়, অন্য সব ধর্মবিশ্বাসের উপসনালয়কে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। এ বিষয়ে ফডনবিসের মন্তব্য চান সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, মন্দিরসহ সব ধর্মীয় স্থান বিভিন্ন আইনের অধীনে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে মুসলিমদের উপাসনালয় চলে মুসলিমদের ওয়াক্ফ দিয়ে। কখনো কখনো তা ট্রাস্ট দিয়ে চলে। আলাদা আলাদা আইন আছে। তবু স্পিকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলে ধরেছেন। এর আইনগত দিক যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। ওদিকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বসবাসকারী বাংলাদেশি অভিবাসীদের শনাক্তকরণ, আটক ও তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ জোরালো করেছে দিল্লি পুলিশ। আউটার ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ এ বিষয়ে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। যারা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া দিল্লিতে বসবাস করছেন তাদেরকে বের করে দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়েছে। তাদের পরিধির মধ্যে সম্প্রতি এ ধরনের বেশ কিছু অভিযান/যৌথ চেকিং পরিচালনা করেছে পুলিশ। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই টিমে আছে পুলিশ স্টেশন এবং স্পেশাল ইউনিটের সদস্যরা। সঙ্গে আছে ডিস্ট্রিক্ট ফরেনার্স সেলের কর্মকর্তারা। তারা বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করতে তীব্র তল্লাশি ও তথ্য সংগ্রহ করছে। এ সময় ঘর থেকে ঘরে এই চেকিং করা হয়েছে। আউটার ডিস্ট্রিক্টের অধীনে সন্দেহজনকভাবে বসবাস করার অভিযোগে শনাক্ত করা হয়েছে ১৭৫ জনকে। পূর্ণাঙ্গ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ সময় সতর্কতার সঙ্গে তাদের ডকুমেন্ট চেক ও যাচাই করা হয়েছে। ওদিকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনো রকম পরামর্শ না করেই বিপুল পরিমাণ অবৈধ রোহিঙ্গা অভিবাসীকে বসবাস করার অনুমতি দেয়ার জন্য বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে অভিযুক্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’কে ১৫ই ডিসেম্বর চিঠি লিখেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী। অতিশী আরও দাবি করেন, এই অবস্থা চলছে বছরের পর বছর। এতে তিনি রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও তাদের ঠিকানা চেয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আহ্বান জানান ওই চিঠিতে। এমন অবস্থায় দিল্লি বিজেপি’র সভাপতি বীরেন্দ্র সাচদেব বলেন, দিল্লির নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিরা। ভোটব্যাংক হিসেবে তাদেরকে আম আদমি পার্টি আশ্রয় দিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বলেন, এসব অবৈধ অভিবাসীদের অবশ্যই সরিয়ে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দিল্লি এর অধিবাসী এবং ভারতের জনগণের। বিদেশিদের আশ্রয় দেয়ার কারণে আম আদমি পার্টির জবাবদিহি করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। ওদিকে কলকাতার মুকুন্দপুরে একটি হাসপাতালের বাইরে শনিবার বিক্ষোভ করেছেন বিজেপি’র একদল কর্মী। তাদের দাবি, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হিন্দু নন এমন কোনো মানুষকে চিকিৎসা দেয়া বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি স্বারকলিপি দিয়েছেন প্রতিবাদকারীরা। তাতে বলা হয়েছে- প্রথমে দেশ। এরপরই তাতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতনের দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশি হিন্দু নন- এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেয়া উচিত নয়। এই বিক্ষোভকারীরা ‘স্যালুট তিরঙ্গা’ ব্যানারে র্যালি করে। এদিন তারা অন্য একটি হাসপাতালেও একই দাবিতে বিক্ষোভ করে। তারা অন্য সব বেসরকারি হাসপাতালে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এ মাসের শুরুর দিকে কলকাতার একটি ১৪১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ঘোষণা দেয় যে, তারা আর কোনো বাংলাদেশি রোগী ভর্তি নেবে না। ভারতীয় পতাকার অসম্মান দেখানোর প্রতিবাদে তারা এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান। কলকাতার আরেকটি হাসপাতাল একই ঘোষণা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার হাসপাতালগুলো ছাড়াও কলকাতার বড় দুটি মেলা- কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা এবং বিধাননগর মেলা উৎসবে নেই বাংলাদেশি স্টল। এই মেলা দুটি আয়োজন করেছে বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন। এতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নেই। এ ছাড়া ভিসা জটিলতার কারণে কলকাতায় ৩০তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি। বিশ্ব ভারতীয় ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ভবনে দুই দিনের বাংলা সাহিত্য উৎসবে বাংলাদেশ থেকে নেই কোনো অংশগ্রহণ। এর কারণ, বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকজন কবি ও লেখককে ভিসা দেয়া হয়নি।