নোয়াখালীর হাতিয়ার মেঘনা নদীতে বরযাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ৭ জনের মধ্যে আরও এক নারী এবং এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে শিশু নিহা বেগমের (১) মরদেহ রামগতি উপজেলার টাংকির খাল সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে এবং জাকিয়া বেগমের (৫৫) মরদেহ ভোলার মনপুরার কলাতলী এলাকা থেকে হাতিয়া ও রামগতি কোস্টগার্ড স্টেশনের সদস্যরা উদ্ধার করেন।
জাকিয়া বেগম উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের নাসির উদ্দিনের স্ত্রী এবং নিহা পূর্ব আজিমপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে।
এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ৫ শিশু নিখোঁজ রয়েছে। এর আগে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার টাংকির ঘাট এলাকা থেকে নববধূ, ৩ নারী ও ৩ শিশু এবং শুক্রবার বেলা ৩টায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার টাংকিরচর সংলগ্ন নদী থেকে হাতিয়া উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের মো. কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ হাছান (৭)-সহ ৮ জনের লাশ এবং কয়েক জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৫ জন হলো হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের মো. কাদেরের মেয়ে নারগিস বেগম (৪), রুবেল হোসেনের মেয়ে হালিমা (৪), বয়ারচর গ্রামের ইলিয়াছ উদ্দিনের ছেলে আমির হোসেন (২), ভোলার মনপুরার কলাতলী গ্রামের মহিন উদ্দিনের মেয়ে লামিয়া বেগম (৩) এবং একই গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আলিফ উদ্দিন (১)।
সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ দলের নেতৃত্বে থাকা হাতিয়া কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট এস এম তাহসিন রহমান বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ ৫ শিশুকে উদ্ধারে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’
নিহতরা হলো—উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের ইব্রাহিম সওদাগরের মেয়ে ও কনে তাসলিমা বেগম (২১), নোয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের আকবর হোসেনের মেয়ে আফরিন আক্তার লামিয়া (২), একই গ্রামের আলমগীরের মেয়ে লিলি আক্তার (৮) ও আক্তার হোসেনের মেয়ে আছমা বেগম (১৯), হাতিয়ার কেরিংচরের নাছিরপুর গ্রামের কালাদুর বাজারের ফয়েজ উল্যাহর মেয়ে হোসনে আরা
বেগম রুপা (৫), পূর্ব আজিম নগর গ্রামের আলা উদ্দিনের স্ত্রী রাহেনা বেগম (৩০), একই গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী নূরজাহান (৬৫), চানন্দি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের মো. কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ হাছান (৭), উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের নাসির উদ্দিনের স্ত্রী জাকিয়া বেগম (৫৫) এবং পূর্ব আজিমপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে নিহা বেগম (১)।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ভোলার মনপুরা উপজেলার কলাতলী গ্রামের বেলাল মিস্ত্রীর ছেলে ফরিদ উদ্দিন বিয়ে করতে হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নে আসেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বর ও কনেসহ উভয় পক্ষের ৪০-৪৫ জন যাত্রী ট্রলারে শান্তির বাজার ঘাট থেকে বরের বাড়ি ভোলা জেলার মনপুরার উদ্দেশে যাত্রা করেন। পথে মেঘনা নদীর টাংকিরখাল-ঘাসিয়ারচরের মাঝামাঝি এলাকায় তীব্র স্রোতের কবলে পড়লে তাদের ট্রলারটি উল্টে যায়। এ সময় কয়েকজন সাঁতরে ও মাছ ধরার নৌকার জেলেদের সহায়তায় তীরে উঠে আসেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজন, পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা ট্রলার ও নৌকার মাধ্যমে রাত পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়ে বরসহ কয়েক জনকে জীবিত এবং নববধূ, ৩ নারী ও ৩ শিশুসহ ৭ জনের লাশ উদ্ধার করেন।