সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে জেলার বন্যা পরিস্থিতি। তবে এখনো ভোগান্তি শেষ নেই পানিবন্ধি মানুষের। এখনো বসতবাড়ি থেকে পানি না নামায় বাড়ি ফিরতে পারছে না বানভাসিরা। তাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকা।
শুক্রবার (২৪ জুন) সকালে সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ও কাওয়াকোলায় ছিল এমন দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
সরজমিনে গেলে পানিবন্ধিরা বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। এবং বাধের উপর পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছি। খুব কষ্টে গবাদিপশুর সাথে রাত কাটাই। বাড়ীঘরের খোজ খবর ঠিক মতো নিতে পারি না। ঘরবাড়ীতে যাওয়ার একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকা। কেউ কেউ ডিঙি নৌকা চালাতে পারে। আবার অনেক মেয়েরা চালাতে পারে না। অন্যের সাহায্য নিয়ে বাড়ীঘরের কোজ খবর নিতে হয়।
খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের পানিবন্ধি আলেয়া বেগম, হাসনা খাতুনসহ অনেকে বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাড়ীঘরে পানি প্রবেশ করেছে। তারপর থেকেই ওয়াপদা বাধে আশ্রয় নেওয়া হয়। এখানে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি। বিশুদ্ধ পানি, পয়নিস্কাশনসহ নানা জটিলতায় ভুগছি। শুধু তাই নয় গবাদি পশুর সাথে রাত কাটাতে হচ্ছে। একদিকে চোরের ভয়। অন্যদিকে পানি, সবমিলিয়ে খুব কষ্টে রাত্রি যাপন করছি।
তারা আরও বলেন, বাড়ীঘরে যেতে ডিঙি নৌকা ছাড়া কোন উপায় নেই। কারণ বাড়ী ঘরের চারপাশে বন্যার পানি থৈথৈ করছে। আবার সবাই বাড়ীতে নৌকা নেই অন্যের নৌকার সাহায্যে বাড়ীঘরের খোজ নিতে হচ্ছে।
এবিষয়ে খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম রশিদ মোল্লা বলেন, যমুনা নদী একটি ক্যানেল দিয়ে প্রতিবছর এই এলাকায় পানি প্রবেশ করে। আর পানি দীর্ঘ ছয় মাস থাকে। পানি নেমে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। বন্যা শেষে হলেও এখানে জলাবব্ধতা লেগেই থাকে। বাড়ীঘরের কোজ খবর নিতে হলে তাদের নৌকা ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেই। কাই সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় ১৫ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। পানি কমলেও এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি। চলতি বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার হাসানুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় শহরের হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার কমে বিদৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে পানি বিপৎসীমার নিচে চলে আসবে বলে তিনি জানান।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ৮ হাজার ৪০০ পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিতদের মাঝে ১৪০ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার স্ব-স্ব উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো দ্রুত বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মজুদ রয়েছে ৭৭১ মেট্রিক টন চাল ও ১৪ লাখ টাকা। সেই সাথে বিশেষ বরাদ্দের জন্য ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১ হাজার ব্যান্ডিল ডেউটিন বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
চলতি বন্যায় জেলায় প্রায় ৫৬৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে বন্যার্তদের জন্য ১৮৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্ধি মানুষদের চিকিৎসার জন্য ২৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সর্বক্ষনিক টিম কাজ করছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনায় পানি কমতে শুরু করেছে। দ্রুত কমবে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও । খুব দ্রুতই নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নেমে যাবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, বন্যার্ত মানুষের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চেয়ারম্যানদের নিয়মিত তাদের খোঁজ-খবর রাখছেন।