রোববার বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর ভিত্তি স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে শুরু হতে যাচ্ছে যমুনা নদীর উপর বহুল প্রতিক্ষিত সবচেয়ে বড় রেল সেতুর নির্মাণ কাজ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফরেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিফলক উন্মোচন করবেন।

জাপানের সহায়তায় ২০২৪ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের রেল যোগাযেগের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যাবে। এই রেলসেতু দেশের মানুষের কাছে আশীর্বাদ হিসেবে ধরা দেবে বলে মনে করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। সড়কের পাশাপাশি সেতুতে রেল সংযোগও রয়েছে। এই সেতুতে রেল চলে কচ্ছপ গতিতে।

এর আগে কয়েকবার সেতুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন যাত্রীরা। রেল চলাচল করায় বঙ্গবন্ধু সেতু রয়েছে হুমকির মুখে। সেতুর উপর ধীর গতিতে রেল চলায় ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।

বঙ্গবন্ধু সেতুকে রক্ষাকরণ, যাত্রীদের দুর্ভোগ দূর করতে ও দেশের রেল যোগাযোগ আরো উন্নত করার লক্ষ্যে সরকার যমুনা নদীর উপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

যমুনায় নতুন রেলসেতু নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে। সহজেই পার হতে পারবে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলো। যাত্রী ভোগান্তি কমার পাশাপাশি প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও।

জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। প্রথমে ৪টি ট্রেন দৈনিক ৮ বার পারাপারের পরিকল্পনা থাকলেও যাত্রী চাহিদায় পরে তা বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাঁটল দেখা দিলে কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন স্বল্পগতিতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আব্দুল মান্নান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন ১৬ জোড়া রেল পারাপার হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুতে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে রেল। এছাড়া সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, দীর্ঘ সময়। এতে দুর্ভোগের সীমা থাকে না রেল স্টেশনের কর্মী ও যাত্রীদের।

তিনি জানান, রেলসেতু নির্মাণ করা হলে কোনো ট্রেনেই কোনো প্রকার সিডিউল বিপর্যয় ঘটবে না। সময় অনেকটা সাশ্রয় হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই সেতু পারাপার হওয়া যাবে। একটি ট্রেন আরেকটি ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করবে না। এতে উপকৃত হবে সবাই।

টাঙ্গাইলে এক অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ২৯ নভেম্বর সকালে গনভবন থেকে ভিডিও কনফরেন্সের মাধ্যমে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিফলক উন্মোচন করবেন।

ইতোমধ্যে রেলমন্ত্রী ও রেলওয়ে বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রেল সেতু নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেছেন। অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রস্তুতি সভা। বন্ধুপ্রতিম দেশ জাপানের জাইকার সহযোগিতায় এ রেলসেতু নির্মাণ হবে।

সেতুটির নির্মাণকাজ দুটি ভাগে হবে। একটি টাঙ্গাইল অংশে, অন্যটি সিরাজগঞ্জ অংশে। রেলসেতু প্রকল্পের বাইরেও আরেকটি প্রকল্পে জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এর ফলে একটি লাইনে রেল ঢাকার দিকে যাবে, আরেকটি লাইন দিয়ে বিপরীত দিকে যাবে। একই সঙ্গে রেলপথের মাধ্যমে ভারি মালামাল পরিবহনে কন্টেইনার পরিবহন বাড়বে। বাংলাদেশ রেলওয়ের কন্টেইনারসমূহ দেশ-বিদেশে পরিবহন করা হবে। ১শ কিলোমিটার গতিতে সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচল করতে পারবে।

জাপানের আর্থিক সহায়তায় এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে রেলসেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

উদ্বোধনের সূচিতে জানা যায়, সকাল ১০টা ৩১ মিনিটে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা। এরপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হবে। ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বক্তব্য রাখবেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে ১০টা ৪২ মিনিটে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সভাপতির বক্তব্য দেবেন। পরে ভিডিও কনফরেন্সের মাধ্যমে ১০টা ৪৬ মিনেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *