1. hmgrobbani@yahoo.com : admin :
  2. news@soroborno.com : Md. Rabbani : Md. Rabbani
  3. sayefrahman7@gmail.com : Sayef Rahman : Sayef Rahman
সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন

রোমাঞ্চকর ঐতিহাসিক জয়ে সিরিজ ভারতের

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২১

ব্রিসবেনে টেস্টের চতুর্থ দিনে ২৬০-এর বেশি করে জয়ের রেকর্ড-ই যেখানে নেই, সেখানে ভারতের দরকার ছিল ৩২৪ রান। এই ম্যাচে ভারত জিততে, এ নিয়ে বাজি ধরার লোকই হয়তো খুঁজে পাওয়া যেত না। জয় নয়, ব্রিসবেনের শেষ দিনের ভাঙাচোরা সবুজ উইকেটে প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জস হেজলউডদের গতি আর বাউন্সের বিপরীতে ভারত বড়জোর ড্রয়ের চেষ্টা চালাবে, এমনটাই মনে করেছিলেন সবাই। কিন্তু সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়ে ব্রিসবেনে জিতল সেই ভারতই!

ব্যাপারটা অনেকটা অবিশ্বাস্যই। তবে অবিশ্বাসটাকে বাস্তবেই রূপ দিয়েছে ভারত। চতৃর্থ ইনিংসে ৩২৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ভারত তুলে নিয়েছে ৩ উইকেটের রোমাঞ্চকর ঐতিহাসিক জয়। ৩২৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অজিঙ্কা রাহানের ভারত করেছে ৭ উইকেটে ৩২৯ রান। আসলেই ব্রিসবেনে ভারতের জয়টি ঐতিহাসিক এবং রোমাঞ্চকর। ব্রিসবেনের গ্যাবায় ৩২ বছর ধরে অপরাজিত ছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। মানে গত ৩২ বছরে গ্যাবায় কোনো টেস্ট হারেনি অসিরা। অসিদের সেই গর্ব চূর্ণ করার মধ্যদিয়ে ভারত ৪ ম্যাচের বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজটাও জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। ফলে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিটা থাকল ভারতের হাতেই।

৩২৮ রানের লক্ষ্যে ভারত চতুর্থ দিন শেষে করেছিল বিনা উইকেটে ৪ রান। ফলে আজ শেষ দিনে তাদের দরকার ছিল ৩২৪ রান। টেস্টের শেষ দিন বিবেচনায়, লক্ষ্যটা কঠিনই শুধু নয়, এক রকম অসম্ভবও। কিন্তু শুবমান গিল, চেতেশ্বর পুজারা, ঋষভ পান্তরা প্রমাণ করেছেন, লক্ষ্যে স্থির থাকলে কঠিন সমীকরণও মেলানো যায়।

শেষ দিনে ভারতের এই রোমাঞ্চকর জয়ের বড় নায়ক অবশ্যই উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান ঋষভ পান্ত। সতীর্থদের নিয়ে শেষ দিকে কঠিন হয়ে যাওয়া সমীকরণটা মিলিয়েছেন তিনিই।

তবে তার আগে ভারতের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন শুবমান গিল, চেতেশ্বর পুজারারা। ঐতিহাসিক এই জয় ছিনিয়ে আনতে ভারতীয়দের পরিকল্পনাটাও ছিল অসাধারণ। দিনের প্রথমভাগে পরিকল্পনা ছিল দেখে-শুনে খেলে ভিত্তি গড়া। এরপর সময়-সুযোগ হলে জয়ের চেষ্টা করা। সেই পরিকল্পনায় অবিশ্বাস্যভাবে সফল ভারত।

অবশ্য আগের দিনের বিনা উইকেটে ৪ রান নিয়ে শুরু করে আজ দিনের শুরুতেই রোহিত শর্মাকে হারিয়ে বসে ভারত। দলীয় ১৮ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৭ রান করে প্যাট কামিন্সের শিকার হন রোহিত। এরপর গিল ও পুজারা দ্বিতীয় উইকেটে ১১৪ রানের জুটি গড়ে গড়ে দেন ভিত্তি। দারুণ ভিত্তি গড়ে দেওয়া এই জুটির ব্যাটিংও ছিল পরিকল্পনা মতো। এক প্রান্ত দিয়ে পুজারা উইকেট আক্রে রেখে খেলেছেন। অন্য প্রান্তে তরুণ শুবমান গিল ঘুরিয়ে গেছেন রানের চাকা।

কিন্তু দলীয় ১৩২ রানের মাথায় তাদের এই জুটি ভেঙে দেন নাথান লায়ন। ১৪৬ বলে ৯১ রান করে আউট হন গিল। তার বিদায়ের পর অধিনায়ক রাহানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন পুজারা। এই জুটিতেও পরিকল্পনাটা একই থাকে। পুজারা দেখে-শুনে খেলে উইকেট আক্রে থাকেন। অন্য প্রান্ত দিয়ে অধিনায়ক রাহানে খেলতে থাকেন চালিয়ে। কিন্তু এই জুটি ৩৫ রানের বেশি তুলতে পারেনি। চালিয়ে খেলতে গিয়েই দলীয় ১৬৭ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ২৪ রান করে আউট হন রাহানে। ২৪ রানের ইনিংসটা তিনি খেলেছেন মাত্র ২২ বলে। মানে রাহানে শুরুটা করেছিলেন ওয়ানডে স্টাইলে।

রাহানের বিদায়ের পর আসেন ঋষভ প্রান্ত। শুরুতে ঋষভ পান্তও কিছুটা সাবধানী ছিলেন। সেটা হয়তো দলীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই। কারণ, ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর একটু চাপ ছিলই। সেই চাপ সামলে উঠার সঙ্গে সঙ্গে ঋষভ পান্তের ব্যাটও ক্রমেই সচল হয়েছে। চতুর্থ উইকেটে পুজারা-ঋষভ পান্ত গড়েন ৬১ রানের জুটি। দলকে ২২৮ রানে নিয়ে এই জুটি ভাঙে পুজারার বিদায়ের মধ্যদিয়ে। দলীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুজারা ব্যাট হাতে কতটা ধৈর্যশীল ছিলেন সেটি একটি তথ্যেই স্পষ্ট। তিনি করেছেন মাত্র ৫৬ রান। এই রান করতে তিনি খরচ করেছেন ২১১ বল!

ভারতীয়দের ব্যাটিং দিনের শুরু থেকেই মনে করিয়ে দিয়েছে, তাদের পরিকল্পনায় জয়ও আছে। তবে তাদের জয়ের আকাঙ্খাটা বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠে চা বিরতির পর থেকে। ৩ উইকেটে ১৮৩ রান করে চা বিরতিতে যায় ভারত। জয়ের জন্য তখন দরকার ছিল ১৪৫ রান। ওভার বাকি ছিল ৩৭টি। কঠিন হলেও সম্ভব। ভারত চূড়ান্ত ঝুঁকিটা নিয়েছে তখন থেকেই। কারণ, তখনো তাদের হাতে উইকেট ছিল ৭টি। ফলে রান উঠাতে গিয়ে দ্রুত ২-৩ উইকেট পড়ে গেলেও ভারতের জন্য সুযোগ ছিল বাকি উইকেটে দিন পাড়ি দেওয়ার।

দিন শেষ ভাগের নতুন পরিকল্পনায় ৪৫ রান যোগ করার পর আউট হন পুজারা। তার আউটের পর ভারতের জন্য সমীকরণটা ছিল ২০ ওভারে ঠিক ১০০ রান। ওভার প্রতি ৫ করে। টেস্টের শেষ বিকেলে কাজটা অবশ্যই কঠিন। তবে উইকেট হাতে থাকায় এবং ঋষভ পান্তের ব্যাট ঝলসে উঠায় ভারত কাজটা করতে পেরেছে ৩ উইকেট হাতে রেখেই।

টেস্টে সাধারণত উইকেট আর রানের সমীকরণের কথাই বলা হয়। তবে এ দিন উইকেটের কথা বাদ দিয়ে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির মতো বল আর রানের সমীকরণ নিয়ে ঘাটাঘাটি হয়েছে। ১২০ বলে ১০০ থেকে ১০০ বলে ৮০, ৮১ বলে ৬৩-এভাবেই রান-বলের হিসাব কষা হয়েছে। মানে ভারতের জয়ের জন্য রান আর বলের হিসাবটাই যে মূখ্য হয়ে উঠেছিল।

পুজারার পর আউট হন মায়াঙ্ক আগারওয়াল, ১৫ বলে ৯ রান করে। ভারতের রান তখন ৫ উইকেটে ২৬৫। এরপর অভিষিক্ত ওয়াশিংটন সুন্দর এসে খেলেন ২৯ বলে ২২ রানের ইনিংস। যে ইনিংসটির পথে তিনি ঋষভ পান্তের সঙ্গে গড়েন ৫৩ রানের জুটি। তাদের এই জুটিতেই মূলত নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের জয়। কারণ, সুন্দর আউট হওয়ার সময় ভারত জয় থেকে মাত্র ১০ রান দূরে। হাতে তখনো ৪টি উইকেট। বল বাকি ২৭টি! ব্যাট হাতে ঝলসে উঠা ঋষভ পান্ত থাকতে ২৭ বলে ১০ রানের সমীকরণ মেলানো এ আর কঠিন কি! কঠিন হয়ওনি। ৩ বলে ২ রান করে শার্দুল ঠাকুর আউট হলেও নবদীপ সাইনিকে নিয়ে জুটি বেঁধে দলের জয় সঙ্গে নিয়েই ফেরেছেন ঋষভ পান্ত। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ১৩৮ বলে ৮৯ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে।

ঋষভ পান্ত ৫০ রান করেন কাটায় কাটায় ১০০ বলে। মানে পরের ৩৯ রান তিনি করেন মাত্র ৩৬ বলে। শেষ দিকের রান-বলের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে নিখাঁদ ওয়ানডে স্টাইলেই ব্যাটিং করেছেন তিনি। রোমাঞ্চকর ইনিংসটির জন্য ম্যাচসেরার পুরষ্কারটিও পেয়েছেন তিনিই।

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি