1. hmgrobbani@yahoo.com : admin :
  2. news@soroborno.com : Md. Rabbani : Md. Rabbani
  3. sayefrahman7@gmail.com : Sayef Rahman : Sayef Rahman
শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০১:৪৮ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা বাণিজ্যিক স্বার্থ!

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরোধী ছিল মিয়ানমারের বেশিরভাগ মানুষ, এমনকি গণহত্যায় সেনাদের বিচারের বিরুদ্ধে ছিল তারা। কিন্তু এবার নিজেদের ওপর সেনা নির্যাতন, হত্যা এবং গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার পর পাল্টে গেছে নাগরিকদের মনোভাব। তবে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর বাণিজ্যিক স্বার্থ দেশটির গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এমন ইঙ্গিত করে খোদ জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

টিকার ঘাটতি নিয়ে দেশে নানা সমালোচনার মুখে সরকার, এর মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে এই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা-তদ্বিরের পাশাপাশি ব্যস্ত রয়েছেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন সেনাবিরোধীদের পাঁচ দশক ধরে মিয়ানমারে অনেক রাজনৈতিক কোন্দল হলেও একটা বিষয়ে সবার ঐকমত্য ছিল, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দেওয়ার ক্ষেত্রে, তাদের সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ার অবস্থানে।

তবে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।

এই সমর্থন জানাতে ‘ব্ল্যাক৪রোহিঙ্গা’ নামে এক হ্যাশট্যাগ চালু করেছে। এতে কালো পোশাক পরে অনেকেই ছবি প্রকাশ করছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম উইয়ন নিউজ সম্প্রতি এ খবর জানিয়েছে।

মিয়ানমারে সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রাখাইনের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। ১ ফেব্রুয়ারি বেসামরিক নেতা অং সান সু চির সরকারকে উৎখাত ক্ষমতা দখল করা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে সংখ্যালঘু জাতির অধিকারের লড়াইও যুক্ত হয়েছে।

রোহিঙ্গা মুসলিমদের মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও অতীতের বেসামরিক সরকার বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দাবি করে। কয়েক দশক ধরে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি জরুরি সেবা ও যাতায়াতের স্বাধীনতাও নেই।

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয়ে রয়েছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিলেও এ নিয়ে গড়িমসি করে আসছে দেশটি।

সম্প্রতি অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত দেশটির জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) পাঁচটি নীতিকৌশল প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া বিপুলসংখ্যাক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে নিরাপদে ফিরিয়ে নিয়ে নাগিরকত্ব স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি।

এই প্রতিশ্রুতি প্রকাশের পর মিয়ানমার জান্তার এক মুখপাত্র রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে ঝাও মিন তুন বলেন, রোহিঙ্গা হলো একটি কাল্পনিক নাম। যারা নিজেদের এই নামে অভিহিত করে তারা আসলে ‘বাঙালি’। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের স্বীকৃতি জাতিগুলোর তালিকায় নাই। তালিকা ও আইন অনুসারেই মিয়ানমার নাগরিকত্ব দেবে।

জান্তা মুখপাত্র এই মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন জানানো শুরু করেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা। তারা ব্ল্যাক৪রোহিঙ্গা হ্যাশট্যাগে কালো পোশাক পরে প্রতিরোধের প্রতীক তিন আঙ্গুল দেখিয়ে ছবি প্রকাশ করছেন।

দেশটির প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী থিনজার শুনলেই ইয়ি টুইটারে লিখেছেন, আপনাদের প্রত্যেকের এবং মিয়ানমারে আমাদের সবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হতে হবে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে একটি ছোট প্রতিবাদের কথাও জানা গেছে। মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে এই বিক্ষোভ হয়। কালো চাদরে মোড়া বিক্ষোভকারীরা বার্মিজ ভাষায় স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হন। তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করছেন।

হ্যাশট্যাগটির উল্লেখ ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার বারের বেশি। এই সমর্থন জানানো মানুষের মধ্যে রয়েছে মূলত বৌদ্ধ, বামার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। এক বছর আগে এসব মানুষের অবস্থান ছিল বিপরীত মেরুতে। এমনকি ওই সময় রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করাই ছিল বিতর্ক উসকে দেওয়ার মতো।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানে সমর্থন ও পরে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগে সেনাবাহিনীর হয়ে আইনি লড়াই করেন সু চি। মিয়ানমারের বেশিরভাগ বৌদ্ধ ধর্মালম্বী জনগণ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসাতে কোনো সহমর্মিতা দেখাননি। যদিও যেসব অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক রোহিঙ্গা নিপীড়নের খবর প্রকাশ করছিলেন তাদের অনলাইনে হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে।

চীন-ভারত, ফ্রান্সসহ নানা দেশে বিনিয়োগের প্রভাব কূটনীতিতে : মিয়ানমারে শুধু চীন নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ব্যবসা করে থাকে অনেক বছর ধরে। রাশিয়াও মিলেমিশে কাজ করে সেখানে। সম্পূর্ণ সেনাবাহিনীর লাভজনক প্রকল্পে বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে অনেক দেশের তা বেরিয়ে আসছে সাম্প্রতিক সময়ে। সেগুলো পুরোপুরি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হয়। ভারতের জায়ান্ট একটি শিল্পগোষ্ঠী মিয়ানমারে বন্দর নির্মাণ করছে।

ফ্রান্সের একটি কোম্পানি সেখানে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ করছে। ডাচ কোম্পানি সেনাবাহিনীর একটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার। এমন অনেক কোম্পানির নামসহ তালিকা প্রকাশ এরই মধ্যে করছে জান্তাবিরোধীরা। জাপানের একজন সাংবাদিক কিছুদিন আগে আটক হলেও তা দেশটি প্রকাশ্য ভূমিকা নেয়নি। অভ্যুত্থানের প্রথম দিকে অনেক দেশের নীরব থাকার পেছনে এমন মোটা দাগের বিনিয়োগকে কারণ হিসেবে দেখছেন জান্তাবিরোধীরা।

যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষোভ ও হতাশা 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন তিন দিন ধরে বর্তমানের যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। টিকার জন্য তার এই সফর বলে অনেকে ধারণা করলেও তিন দিনের দুদিনই তিনি সরব ছিলেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ইস্যু নিয়ে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিবের একজন দূতের কাছে তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুস্পষ্ট রোড ম্যাপ চেয়েছেন। আর গতকাল শুক্রবার তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থকেই বড় করে দেখার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকাশ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরেও অনেক প্রভাবশালী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়িয়েছে, যা হতাশাজনক।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ায় বিশ্ব বাংলাদেশের উদারতা ভুলে যাবে না। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহাসচিবকে ভাসানচরের সুবিধাগুলি সম্পর্কেও অবহিত করেন এবং সেখানে জাতিসংঘের কার্যক্রমের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতা উল্লেখ করে মহাসচিব বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি