শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৭তম জন্মদিন আজ। ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
দেশে চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রসারে জয়নুলের প্রচেষ্টা ছিল আমৃত্যু। দেশের চিত্রকরদের মধ্যে তিনি শিল্পগুরু হিসেবে বিবেচিত।
১৯৭৪ সালে তার আঁকা ‘মনপুরা-৭০’দুর্ভিক্ষের চিত্রটি আজও সেরা। ধারণা করা হয় তার চিত্রকর্মের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। তার বিখ্যাত শিল্পকর্ম অনেক।
জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে তার ৮০৭টি শিল্পকর্ম। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে রয়েছে আরো প্রায় ৫০০ চিত্রকর্ম। ময়মনসিংহের সংগ্রহশালায় রয়েছে ৬২টি চিত্রকর্ম। আর তার পরিবারের কাছে সংরক্ষিত আছে চার শতাধিক চিত্রকর্ম।
জয়নুল খুব ছোট থেকেই ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এসব এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছবির প্রতি এই আগ্রহ কিশোর বয়সেই কলকাতা নিয়ে যায় তাকে। বাড়ি থেকে পালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতা চলে যান শুধু গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য।
আর্টস স্কুল দেখে আসার পর তার ভেতরে অস্থিরতা আরো বেড়ে যায়। ম্যাট্রিক পরীক্ষা ফেলে স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে ফের কলকাতায় চলে যান। অবশ্য এই নেশায় সমর্থন জুগিয়েছেন মা জয়নাবুন্নেছা। তিনি ছেলের আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেন।
বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ পুলিশের অল্প বেতনের কর্মচারী। কলকাতায় পড়ানোর মতো অর্থও ছিল না তার। এমন বিরূপ পরিস্থিতিতেও তার জেদ ছিলো অনমনীয়। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাখ করেন।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় জয়নুল তখন যুবক। দারিদ্র্যের লাঞ্ছনা তাকে প্রবলভাবে বিচলিত করেছিল। দরিদ্রপীড়িত মানুষদের নিয়ে তিনি ছবি আঁকলেন এবং সেগুলো প্রকাশিত হলো সংবাদপত্রে। যা ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। ওই আলোড়ন থেকেই লঙ্গরখানা খোলা হয়। যে লঙ্গরখানা লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিল। আর দুর্ভিক্ষের এই চিত্রই তাকে ভারতবর্ষে খ্যাতিমান শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়।
বলা যায়, জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বেই এদেশে শুরু হয় আর্টের যাত্রা। ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুলের একটি পুরনো বাড়িতে মাত্র ১৮ জন ছাত্র নিয়ে গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হয়। জয়নুল আবেদিন ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম শিক্ষক। ১৯৫১ সালে এটি সেগুনবাগিচায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৬ সালে শাহবাগে স্থানান্তর করার পর ১৯৬৩ সালে এটি প্রথম শ্রেণির সরকারি কলেজের স্বীকৃতি পায়। নামকরণ করা হয় পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। এটিই আজকের বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। জয়নুল আবেদিন ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই সরকারি কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এছাড়া জয়নুল আবেদীন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন। ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ঢাকায় পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন।