শিশুদের অপরাধ যতই গুরুতর হোক না কেন, ১০ বছরের বেশি সাজা দেয়া যাবে না- উল্লেখ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্টের বৃহত্তর বিশেষ বেঞ্চ।
রায়ে শিশুর স্বার্থ সুরক্ষায় আরও ৫ দফা পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেন (ইতিমধ্যে অবসরে), বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মবিন সমন্বয়ে তিন সদস্যের বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষর শেষে বৃহস্পতিবার এ রায় প্রকাশ করা হয়।
রায়ের ৫ দফা পর্যবেক্ষণে বলা হয়- ১. শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ জুবেনাইল বিচার পদ্ধতির ধারণার পরিপন্থি। ২. নিউরোসাইন্স এবং সাইকোলজিকাল গবেষণা অনুযায়ী শিশুরা তাদের কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সম্পুর্ণ ওয়াকিবহাল নয়। ৩. শিশুরা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বস্তুত, ব্রেনের যে অংশ আবেগ ও যৌক্তিকতা নিয়ন্ত্রণ করে, শিশু অবস্থায় ব্রেনের ওই অংশ পরিপক্ক হয় না।
৪. শিশুরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পরিণতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে না। অনেক ক্ষেত্রে তারা অপরাধের দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নেয়। ৫. কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাওয়ার প্রলোভনে শিশুরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়ে যায়।
এর আলোকে হাইকোর্ট মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের একটি মামলার রায় পর্যালোচনাসহ বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাস্ট্রের উচ্চ আদালতের নজিরসমূহ তুলে ধরেন।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি কর্তৃক লিখিত আটিকেল, বই, সাইন্টিফিক রিসার্চের ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করে তিন দফা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ছেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। ১. শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোন সাক্ষ্যগত মূল্য নেই। ২.
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কোন শিশুকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। ৩. অপরাধ যাই হোক না কেন, একজন শিশুকে ১০ বছরের বেশি সাজা প্রদান করা যাবে না।
উল্লেখ্য, শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে দেশের ফৌজদারী কার্যবিধিতে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান নেই। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক গঠন বিবেচনায় ১৯৭৪ সালের শিশু আইন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালিত হত। পরে ২০১৩ সালে নতুন শিশু আইন প্রণয়ন করা হয়।
এই আইনে শিশুর বয়স, জবানবন্দি গ্রহণ, দণ্ড ও শিশু শোধনাগারসহ বিশেষ বিশেষ বিধান রাখা হলেও কিছু বিষয় নিয়ে দেশের উচ্চ আদালতে পক্ষে-বিপক্ষে রায় হয়েছে। এজন্য এসব বিষয় নিষ্পত্তির জন্য কয়েক বছর আগে বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে প্রধান বিচারপতির বরাবরে একটি আবেদন পাঠানো হয়। ওই আবেদনের ধারাবাহিকতায় বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টে ৩ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন।
হাইকোর্টে সাধারণত সর্বোচ্চ দুই বিচারপতির বেঞ্চই গঠন করা হয়ে থাকে। তবে শিশুদের বিষয়ে আইনের জটিল ব্যাখ্যা জড়িত তাই হাইকোর্টও আলোচিত এ বিষয়ে শুনানিতে তিনজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতে মতামত প্রদানকারী বিশেষ বন্ধু) নিয়োগ দেন।
তারা হলেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এমআই ফারুকী ও শাহদীন মালিক।
তাদের সবার মতামত এবং আইন ও বিধি পর্যালোচনার পর বিচারপতিদের স্বাক্ষর শেষে এই রায় প্রকাশ করা হয়।