শীতকালীন গোসল ও গ্রীষ্মকালীন গোসলের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। শীতকালে গোসল করার ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত বিষয় মেনে চলতে হবে, অন্যথায় আপনার ত্বকের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমরা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় গোসলের সময় কিছু ভুল করে থাকি, যা আমাদের ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এখানে শীতকালীন গোসলে ৯টি ভুল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- আপনার ত্বককে ড্যামেজ থেকে রক্ষা করতে এসব ভুল এড়িয়ে চলা উচিৎ।
দীর্ঘক্ষণ হট শাওয়ার নেওয়া: ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় নিজেকে উষ্ণ রাখার জন্য অন্যতম চমৎকার উপায় হচ্ছে, হট শাওয়ার। কিন্তু ‘দীর্ঘক্ষণ হট শাওয়ার নেওয়া আমাদের ত্বককে শুষ্ক করতে পারে এবং তা চুলকানির কারণ হতে পারে।’ আপনার শাওয়ারের সময় পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে রাখুন এবং তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রির নিচে রাখুন। উচ্চ তাপমাত্রা ত্বকের প্রয়োজনীয় ময়েশ্চার দূর করে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বেশি সময় গোসল করা: এটি গোপন নেই যে ঠাণ্ডা তাপমাত্রা ও ঠাণ্ডা বাতাস আপনার ত্বকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, কিন্তু বেশি সময় গোসল করাও আপনার ত্বকের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ‘অতিরিক্ত গোসল ত্বকে শুষ্কতা, লালতা ও ইরিটেশন সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি এমনকি একজিমার মতো কন্ডিশনেরও কারণ হতে পারে।’ আপনার কাজের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিন গোসল ত্বকের জন্য অত্যধিক ক্ষতিকর হতে পারে। গড় প্রাপ্তবয়স্কদের একদিন পরপর গোসল করা উচিত- এটি ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চার দূর করা ছাড়াই ত্বক পরিষ্কার করতে যথেষ্ট।
বার সাবান ব্যবহার করা: প্রচলিত বার সাবান ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন! ‘প্রচলিত বার সাবান ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দূর করতে পারে, যার ফলে শুষ্কতা বা রুক্ষতা সৃষ্টি হয়।’ এর পরিবর্তে আল্ট্রা ময়েশ্চার বডি ওয়াশ বা কনসেনট্রেটেড বডি ক্লিনজিং ক্রিমের মতো সাবানমুক্ত ফর্মুলা অর্থাৎ লিকুইড ব্যবহার করতে পারেন। অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজিং ডোজের জন্য ওয়েট স্কিন ময়েশ্চারাইজারের মতো ইনশাওয়ার লোশন ব্যবহার করুন যা আপনি গোসলের সময় প্রয়োগ করবেন ও ধুয়ে ফেলবেন।
যথাযথ শেভিং না করা: আপনি হয়তো শীতকালে কম শেভ করেন। কিন্তু যখন শেভ করবেন তখন প্রথমে হালকাভাবে এক্সপোলিয়েট (মৃত ত্বককোষ পরিষ্কার করা) করতে ভুলবেন না। ‘মৃত ত্বককোষ শুধু শুষ্ক ও অমসৃণ ত্বকই সৃষ্টি করে না, এটি ইনগ্রোন হেয়ার ও ইরিটেশনও সৃষ্টি করতে পারে। উষ্ণ পরিবেশে (যেমন- শাওয়ার) শেভ করুন, এতে মসৃণ ফলাফল পাবেন। আপনি এমোলিয়েন্ট শেভিং ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। সুখবর হচ্ছে, শেভিং ক্রিম প্রশান্তিদায়ক এবং শেভিং প্রক্রিয়ায় সহায়ক, ত্বক সেনসিটিভ হলে ওটমিল সমৃদ্ধ পুষ্টিকর ফর্মুলা ব্যবহার করুন যেমন- থেরাপিউটিক শেভ জেল। এছাড়া ব্যাকটেরিয়া দূর করতে এবং ভোঁতা ব্লেডজনিত ক্ষত প্রতিরোধ করতে রেজার ব্লেড কয়েক বার ব্যবহারের পর পরিবর্তন করুন।
বেশি ঘনঘন চুল ধোয়া: প্রতিদিন চুল ধোয়ার প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে একদিন পরপর চুল ধোঁয়া উচিত এবং সপ্তাহে দুইবারের বেশি শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার না করাই ভালো। আপনার চুলের জন্য সর্বোত্তম শ্যাম্পু খোঁজ করুন। যদি আপনার তৈলাক্ত স্কাল্প থাকে, তাহলে সামান্য ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
খুব জোরে ঘষে শ্যাম্পু ব্যবহার করা: ‘আমাদের চুলের গোড়ার চারপাশে স্কাল্প থেকে তেল উৎপন্ন হয়, তাই শ্যাম্পু যেন মাথার স্কাল্প পর্যন্ত পৌঁছায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’ কিন্তু আপনার স্কাল্প এমনভাবে ঘষবেন না যেভাবে আপনি বাথটাব বা বেসিন থেকে দাগ তুলে ফেলার জন্য জোরে জোরে ঘষেন। স্কাল্পে অত্যধিক ঘষা স্কাল্পের জন্য ভালো নয়- এটি ইরিটেশন, প্রদাহ ও এমনকি রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করতে পারে, সেইসঙ্গে ইনফেকশনের ঝুঁকিও আছে।
কন্ডিশনার ব্যবহার না করা: শীতকালে আর্দ্রতার অভাব শুধু আপনার ত্বককে রুক্ষ করে না, এটি আপনার চুল থেকেও ময়েশ্চার দূর করতে পারে। ‘শীতকালে চুলের রুক্ষতা হ্রাস করতে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারে ময়েশ্চার বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ।’ আপনার চুলের প্রান্ত ন্যূনতম প্রাকৃতিক তেল গ্রহণ করে (যা স্কাল্প থেকে আসে), তাই তাদের সর্বাধিক হাইড্রেশন প্রয়োজন। চুলের এসব প্রান্তে কন্ডিশনার ব্যবহার ভালো। যদি আপনার চুল অতি শুষ্ক হয়, তাহলে সাপ্তাহিক পুষ্টির ট্রিটমেন্টের চেষ্টা করুন, যেমন- ডিপ কন্ডিশনিংয়ের জন্য ট্রিপল ময়েশ্চার ডিপ রিকভারি হেয়ার মাস্ক অথবা ইনটেন্স হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
খুব ঘষে শরীর মোছা : আবারও বলা হচ্ছে যে এটি আপনার শরীর, কোনো মলিন বাথটাব নয়, তাই আপনার শরীর শুকানোর জন্য ত্বক ড্যামেজ হতে পারে এমনভাবে তোয়ালে দিয়ে ঘষবেন না। আলতোভাবে শরীর মুছে নিন।, অন্যথায় ইরিটেশন ও ওভার-এক্সফোলিয়েশনের ঝুঁকি থাকে। শরীর মোছার পর ত্বককে হাইড্রেট রাখতে ময়েশ্চারাইজ করতে ভুলবেন না।
ভুলভাবে ময়েশ্চারাইজিং করা : শীতকালীন আবহাওয়ায় ঘনঘন গোসল করা শুষ্কতা বা জেরোসিসের কারণ হতে পারে, যা ত্বকের প্রতিরক্ষা ফাংশনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে- এর ফলে ত্বক অত্যধিক সেনসিটিভ হতে পারে এবং একজিমার মতো কন্ডিশনও বিকশিত হতে পারে। হচ্ছে সিরামাইড-বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা, যা ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা স্তরকে মেরামত করতে পারে। আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করার সর্বোত্তম সময় হচ্ছে গোসলের পর- যখন ত্বক আর্দ্র থাকে। ‘সারাদিন জুড়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর ময়েশ্চারাইজিংও সহায়ক হতে পারে, কিন্তু সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে ত্বক পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজ করা।