ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনা ছাড়াই চলছে রাজধানীর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে যা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
সংক্রামক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি মাসে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এক গবেষণায় জানিয়েছে, দেশের চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন উৎপন্ন হয় প্রায় ২৪৮ টন মেডিকেল বর্জ্য, যার প্রায় ৮৬ শতাংশই সঠিক ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্যকে ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে ২০০৮ সালে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিধিমালা করা হলেও এক যুগেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
২০১৮ সালের জাতীয় পরিবেশ নীতিতেও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে সব বর্জ্যের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে।
তবে নীতি ও বিধিমালার মাধ্যমে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাঠামো তৈরি করা হলেও বেশিরভাগ হাসপাতালেই তা মানা হচ্ছে না।
যেভাবে চলছে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
গত কয়েক বছরে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অনেক আধুনিকায়ন হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় দুই শ্রেণির অসংক্রামক ও নয় শ্রেণির সংক্রামক বর্জ্যের জন্য পৃথক ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা রয়েছে।
তবে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামো না থাকায় বেসরকারি সংস্থা প্রিজম বাংলাদেশ সংক্রামক বর্জ্য সংগ্রহ করে বিনষ্ট করছে। আর অসংক্রামক বর্জ্য অপসারণ করছে দুই সিটি করপোরেশন।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মাঠের পাশের এই কক্ষটিতেই রাখা হচ্ছে মেডিকেল বর্জ্য, যেখানে অসংক্রামক বর্জ্যের সাথে মিশে আছে সংক্রামক বর্জ্য।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছয়টি ভিন্ন রঙের কনটেইনারে বর্জ্য রাখার নির্দেশনা থাকলেও সব ধরনের কনটেইনার নেই অনেক হাসপাতালে।
আবার হলুদ কনটেইনারে ক্ষতিকারক, লাল কনটেইনারে ধারাল, নীল কনটেইনারে তরল, সিলভার কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়, সবুজ কনটেইনারে পুনঃব্যবহারযোগ্য সাধারণ বর্জ্য এবং কালো কনটেইনারে সাধারণ বর্জ্য রাখার নির্দেশনা থাকলেও একটির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে অন্যটিতে। মানা হচ্ছে না কনটেইনারে বর্জ্যের নাম ও সাংকেতিক চিহ্ন রাখার নির্দেশনাও।
বর্জ্য সংরক্ষণের কনটেইনার ঢাকনা আটকে রাখার কথা থাকলেও দেশের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধিকাংশ কনটেইনারই থাকে খোলা। অনেক স্থানে সংক্রামক বর্জ্যের কনটেইনারও পাওয়া যায়নি।
সংক্রামক বর্জ্যের খোলা কনটেইনারে যেমন সাধারণ বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে, তেমনি সাধারণ বর্জ্যের কনটেইনারে পিপিই, মাস্ক, ওষুধের বোতলসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যও রয়েছে।
কনটেইনারের সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় এভাবে অংসক্রামক বর্জ্যের সাথে যে সংক্রামক বর্জ্য মিশে যাচ্ছে, সে চিত্র দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে।
এসব হাসপাতালের সাধারণ বর্জ্যের স্তূপে ওষুধ, সিরিঞ্জ, টিকার বোতল, পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, রক্তমাখা প্লাস্টিকের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এর মধ্যে বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের বর্জ্যের স্তূপ থেকে কোনো রকম সুরক্ষা ছাড়াই বোতলসহ অন্যান্য বর্জ্য বিক্রির জন্য আলাদা করছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
সেখানকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী সুমন জানান, সাধারণ বর্জ্যের সাথে সংক্রামক বর্জ্য চলে আসায় তারাও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত।
“হাসপাতালের ভিতর থেকে সব সময় ঠিকঠাকভাবে বর্জ্য আসে না। সিরিঞ্জ, পাইপ, কাঁচি চলে আসে। তখন আর সেগুলো আলাদা করা হয় না, সিটি করপোরেশনের গাড়িতে তুলে দেই।
“আমাদের যাতে রোগ না হয় সেজন্য মাঝেমাঝে টিকা নেই। এখনও কোনো রোগ হয় নাই, টেস্ট করালে হয়ত ধরাও পড়তে পারে। এইডসও হইতে পারে।”
বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের অসংক্রামক বর্জ্যের সাথে মিশে আছে অনেক সংক্রামক বর্জ্য, যেগুলো থেকে সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদা করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
পুনঃব্যবহার রোধে রাবার বা প্লাস্টিক জাতীয় নল ও ব্যাগ কেটে নষ্ট করে ফেলার নির্দেশনা থাকলেও এসব হাসপাতালে তা মানা হচ্ছে না।
মোহাম্মদপুরের কলেজ গেইটের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বর্জ্য সংরক্ষণ স্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙারি দোকানে বিক্রি করতে সাধারণ বর্জ্য থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদা করছেন এক কর্মী।
পাশেই মাস্ক, গ্লাভস, রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার টিউব, সিরিঞ্জ, স্যালাইনের খালি প্যাকেট পড়ে আছে সাধারণ বর্জ্যের সাথে।
ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য মিশে যাওয়ার বিষয়ে সেখানের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, এগুলো ভেতর থেকে যেভাবে আসে তারা সেভাবেই সংরক্ষণ করেন।
শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল, যেটি পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত; সেখানকার জরুরি বিভাগের সামনেই পড়ে থাকতে দেখা যায় রক্তমাখা ব্যান্ডেজ। হাসপাতালটির বিভিন্ন জায়গায়ও ব্যান্ডেজ, গজ, তুলা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
পাশের জাতীয় শিশু হাসপাতালেও সাধারণ বর্জ্যের সাথে মাস্ক, গ্লাভসের মতো ক্লিনিক্যাল বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য বিনষ্টের নিয়ম থাকলেও সপ্তাহ চলে গেলেও কোনো কোনো হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণ হয় না।
বারডেমে বিক্রির জন্য আলাদা করে রাখা প্লাস্টিক বর্জ্য।
মিরপুরের কিংস্টন হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী মো. সোহাগ জানান, সাধারণ বর্জ্য ১০ থেকে ১৫ দিন পর এবং সংক্রামক বর্জ্য ৭ থেকে ১০ দিন পর নিয়ে যায় সিটি করপোরেশনের আলাদা দুটি দল।
“কয়েক বার ফোন দিলেও ময়লার রুম ভরে উপচে পড়ার পর তারা এসে ভ্যানে নিয়ে যায়। সংক্রামক বর্জ্যের ড্রামগুলো ভরার পর হলুদ আরেকটি গাড়ি এসে নেয়।”
১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুযায়ী, লাল শ্রেণির স্থাপনা হওয়ায় হাসপাতালে বর্জ্য শোধনাগার ও তরল বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করে পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক।
কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতালেরই নেই ছাড়পত্র। তারা বর্জ্য অপসারণ করে তা শোধনের দায় এড়ালেও নেই তরল বর্জ্যের কোনো ব্যবস্থাপনা। ফলে পরিশোধন ছাড়াই এসব বর্জ্য মিশে যাচ্ছে জলাশয়ে।
অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে হাসপাতালগুলোর দায়িত্বশীলরা বলছেন, রোগী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ভুলে সাধারণ বর্জ্যের সাথে সংক্রামক বর্জ্য মিশে যাচ্ছে।
পুরো স্বাস্থ্য খাতেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে জানিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, “আমার জানা মতে, আমরা যখন প্রিজমকে এগুলো দেই, তখন ওই জায়গায় মিক্সিংটা হয়- এটা শুধু আমাদের নয়, সব হাসপাতালেই হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শতভাগ সঠিকভাবে হচ্ছে না।”
নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “সরকারের নীতি-নির্ধারণী বিষয় এটি। তারা লোকালি করতে বললে আমরা করব।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অব্যবহৃত দুটি ‘ইনসাইনেরেটর’ থাকলেও তা চালুর পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন সদ্য বিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, “মাইক্রোওয়েভ বেইজড যে ট্রিটমেন্টগুলো ওই প্রক্রিয়াটা আমাদের হাসপাতালে করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছিল। কোভিডের কারণে বন্ধ আছে, তবে এটা হবে।”
বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতলের সংক্রামক বর্জ্য সংরক্ষণস্থল।
ঢাকার হাসপাতালগুলোর সংক্রামক বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা একমাত্র প্রতিষ্ঠান প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আনিসুর রহমান অব্যবস্থাপনার জন্য হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা সচেতন না হলে হবে না। তারা কত আয় করবে সে বিষয়গুলোতেই তারা বেশি সচেতন। তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যত কম ব্যয় করতে পারে, ততই তাদের ভালো।
“আমরা সব ধরনের মেডিকেল বর্জ্য পাই না, প্লাস্টিক বর্জ্য পাই না। বেসরকারি অনেক হাসপাতালই এগুলো বাইরে বিক্রি করে ইনকাম করে।”
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের যে এক হাজার ৩০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বর্জ্য সংগ্রহ করছে প্রিজম, এর বাইরের হাসপাতালগুলোর মেডিকেল বর্জ্য সিটি করপোরেশনের সাধারণ বর্জ্যের সাথে চলে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আনিসুর রহমান বলেন, “কোটি কোটি লিটার তরল বর্জ্য কি নেওয়া সম্ভব? এগুলো ড্রেনেজের মাধ্যমে নদীতে চলে যাচ্ছে। এটা নিয়ে কেউ ভাবছে না।”
নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এক মন্ত্রণালয় আরেক মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপাচ্ছে কেন? তারাই তো নির্ধারণ করে নাই দায়িত্বটা কে নেবে? ফান না করে তাদের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হবে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সাধারণ বর্জ্যের কনটেইনারে ফেলা হয়েছে মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই।
কাঠামো অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক এবং নগর কর্তৃপক্ষের অসংক্রামক বর্জ্য তদারকির দায়িত্ব।
তবে এক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সক্ষমতার অভাবকে দায়ী করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান।
তিনি বলেন, “এর দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। কিন্তু তারা সক্ষম নয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া হাসপাতালগুলোকে তো অনুমতিই দেওয়ার কথা না। দিলেও নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা ইনসাইনেরেটরে বর্জ্য পুড়িয়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা করছে কি না। কিন্তু সেটাও তারা করছে না।”
‘দ্রুতই’ আধুনিক প্রক্রিয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন বলে জানান তিনি।
সমন্বয়হীনতার বিষয়টি তুলে ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর বদরুল আমিন বলেন, “কোনো একটা জায়গা থেকে তো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ আসতে হবে, সেটা আসছে না। যে বিভাগের যা কাজ তা করলে এ সমস্যা হত না।
“হাসপাতাল থেকে বর্জ্যগুলো মিশ্রিত অবস্থায় দেওয়া হলে তো আমাদের কিছু করার নেই। সেভাবেই সংগ্রহ করতে হবে। আমরা হাসপাতালগুলোকে কিছু বলতেও পারি না, সে এখতিয়ার আমাদের নেই।”
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে আছে। হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, অনেকে মানছে আবার অনেকে মানছে না। না মানলে আমরা তাদের পরামর্শ দেব, তারপরও না মানলে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব।”
বর্জ্যের কনটেইনার ঢেকে রাখার নির্দেশনা থাকলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনেক কনটেইনারই উন্মুক্ত, কনটেইনারের গায়ে নেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও।
এদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করেও হাসপাতালগুলো কীভাবে চলছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
“হাসপাতালগুলোর নিজেদের এটি ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া ও যন্ত্রপাতি থাকতে হবে। তাদেরই বর্জ্য জীবাণুমুক্ত ও ইনসেনারেশন করতে হবে। না করলে এর দায়ভার তাদের। আমরা তাদের চাপ দেব এটা করতে।
“আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বলে দিয়েছি যে, প্রতিটি চিকিৎসা কেন্দ্রে ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটা তো বাইরে থেকে আমাদের করার কোনো সুযোগ নেই।”
অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না জানিয়ে অন্য কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
পরে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহাম্মেদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
তবে সম্প্রতি এক আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, “২০০৮ সালের আইনটি বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো ডেভেলপ করেনি। ধীরে ধীরে সমস্যাটি প্রকট হয়েছে, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। তারা পৃথকভাবে হেঁটেছে।
“বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা না হওয়ায় তা ফুড চেইনে ঢুকে গেলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর প্রিজম এটা বার্ন করছে, এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। অন্য প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিভাগ- সবাই মিলে কাজ করলে সঠিক ব্যবস্থাপনা সম্ভব।”
এসব অব্যবস্থাপনায় যে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাধারণ বর্জ্যের কনটেইনারে ফেলে রাখা হয়েছে ওষুধের বোতল।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেনের আশঙ্কা, চিকিৎসা বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা এইডসের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তিনি বলেন, “শরীরের কোনো অংশে যদি বর্জ্য প্রবেশ করে বা সিরিঞ্জের মতো বর্জ্য বিক্রি হয় তাহলে সেই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করবে। মানুষ অসুস্থ হতে পারে, জীবন সংশয়ও হতে পারে। পশু-পাখির মাধ্যমেও রোগ ছড়াতে পারে।”
মেডিকেল বর্জ্যের বিষাক্ত উপাদানগুলো মাটি, পানি ও বায়ুকে দূষিত করতে পারে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডোর সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, “এসব বর্জ্য পরিবেশে গিয়ে খাদ্য চক্রে প্রবেশ করলে এবং মাছ-পশুপাখি সংক্রমিত হলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হতে পারে।”