স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: একটা পর একটা অস্বাভাবিক চিত্র লেগেই থাকে নিত্যপ্রয়োজনী ও কাঁচাবাজারে। আলু ও পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কিছুটা কমলেও এবার দুশ্চিন্তার সবটুকু জায়গা দখল করে বসে আছে ভোজ্য তেল। সয়াবিন ও পাম তেলের বাজারে অস্থিরতা কমাতে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে এই দামেও সন্তুষ্ট নন ভোক্তারা।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি মার্কেটে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সয়াবিনের দাম সরকার যা নির্ধারণ করেছে সেটি এমনিতেই অনেক বেশি। এর উপর খুচরা বাজারে অনেক দোকানেই সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের।
তেল কিনতে আসা এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও ১০৫ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে এক লিটার বোতলজাত তেল কিনেছি। সেই তেল এখন ১৩৫ টাকা। এই দাম নির্ধারণের মাধ্যমে সরকার কার্যত ব্যবসায়ীদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। যেখানে করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষের আয়-রোজগার কমেছে, সেখানে তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক।
তেলের মূল্য নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও পেঁয়াজ ও সবজির দাম নিয়ে ক্রেতা সন্তুষ্টি বেড়েছে। সবজির দাম গত সপ্তাহের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। আর সরবরাহ বাড়ায় পেঁয়াজ, আলু ও টমেটোর দাম কিছুটা কমেছে।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়, আর আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি। শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তবে শিমের বিচি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। মটরশুটি বিজের দাম একই।
শীতকালীন সবজির মধ্যে মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, বেগুনের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজরের কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস।
গেল কয়েক সপ্তাহ ধরেই এসব সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে নতুন আসা সবজির মধ্যে ঢেঁড়স ও পটলের দাম এখনো ১০০ টাকার উপরে ওঠানামা করছে। তবে এই দুই সবজি এখনো রাজধানীর সব বাজারে সমানভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রেতারা বলছেন, যোগান বাড়লে এই দুটি সবজির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকায় নামবে।
এদিকে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ফলে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। খুচরার পাশাপাশি পাইকারিতেও সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমেছে। গত সপ্তাহে ১৭৫ টাকা পাল্লা বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে পাইকারিতে এক কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ২৫ থেকে ২৭ টাকা।
গত কয়েকদিনের মতো খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেল ১৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬৬০ টাকার ওপরে। কোম্পানি ভেদে ১৩৫-১৪০ টাকায় বোতলের এক লিটার সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ তেলের ব্যবসায়ীরা এখনো সরকার নির্ধারিত দামে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক নয়।
সয়াবিন ছাড়া অন্যান্য তেলের মধ্যে মেশিনে ভাঙানো সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। ঘানিতে বানানো সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি। প্যাকেটজাত সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল মানভেদে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে খুঁচরা দোকানে।
অন্যদিকে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে মুরগির দাম। প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আর প্রতিকেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়। এছাড়াও ব্রয়লার মুরগির এক ডজন ডিম পাওয়া যাচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়।
মাংসের মধ্যে গরুর মাংসের দাম হাড্ডি সহ কোথাও কোথাও ৬০০ ছাড়িয়েছে। হাড্ডি ছাড়া মাংস ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দামে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মাঝারি রুই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি, কাতলা ২০০ টাকা, শোল ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০, পাবদা ৪০০, ইলিশ ৮০০ টাকা জোড়া এবং বড় ইলিশ কেজি ১২০০ টাকা।
সামুদ্রিক মাছের মধ্যে টুনা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি আর বড়ো সাইজের দেশী স্যামন বা তাইল্লা বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে।