সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ট্রাফিক সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান এর পরিবহন সেক্টরে বেপরোয়া চাঁদাবাজি(১ম পর্ব)

হেলাল মুর্শেদ ::সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ট্রাফিক সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান এর পরিবহন সেক্টরে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান ফেঞ্চুগঞ্জে যোগদান করার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার অত্যচারে গাড়ীর মালিক, চালকসহ ট্রাফিক প্রশাসনের বেশ কিছু কর্মকর্তা অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন।তাকে প্রত্যক্ষ- পরোক্ষভাবে এই থানার আরেকজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি খাতে সহযোগিতা করেন।নাম প্রকাশ করতে অনিহা একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,মনিরুজ্জামান একজন রাগী ও বদমেজাজি লোক।তাকে আরেকজন ট্রাফিক সার্জেন্ট সহযোগিতা করে থাকেন।

চালক ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান পরিবহন সেক্টরে বেপরোয়া হারে চাঁদাবাজি,ঘুষ,দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে তার রামরাজত্ব কায়েম করেছেন।দীর্ঘদিন ধরে ফেঞ্চুগঞ্জের ব্রীজের পাশে ডিউটি করাকালীন সময়ে ওত পেতে থাকেন।সিএনজি গাড়ী,মোটরসাইকেল,লেগুনা,মিনিট্রাক ইত্যাদি গাড়ী দাড় করান ডিউটিতে থাকা কনস্টেবলরা এবং নিয়ে যান মনিরুজ্জামান এর কাছে।তখনি শুরু হয় দর কষাকষি,প্রতি গাড়ী থেকে ৫০০,১০০০ শুরু করে সিসটেম অনুযায়ী ২০০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকা গুনেন তিনি।টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয় গাড়ী নতুবা মামলার গ্লানি বয়ে বেড়াতে হয়।এভাবে তার ডিউটি করাকালিন সময়ে কোন কোন দিনপ্রতি ৫০০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকাও কামিয়ে নেন বিতর্কিত ট্রাফিক সার্জেন্ট মনিরুজ্জান।কখনও আটককৃত গাড়ীর রেকার করার ভয় দেখিয়ে প্রতি গাড়ী থেকে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করেন এই বিতর্কিত ট্রাফিক সার্জেন্ট।

বিভিন্ন স্পটে বেপরোয়া চাঁদাবাজি আর অনিয়ম করায় পরিবহন সেক্টরের মালিক,চালকরা তার অত্যাচারে এমনিতেই অতিষ্ঠ।তবে বর্তমান ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে এবং সরকারদলীয় উর্ধ্বমহলের আশীর্বাদে তিনি তার কর্মজীবনের স্বর্ণযুগ পার করছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,বর্তমানে সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান ঘুষের টাকা দিয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তার ক্ষমতার দাপট দেখান আর ফেঞ্চুগঞ্জে সেখানেই যেন সোনার হরিণ পেয়ে বসেন তিনি।স্হানীয় ফেঞ্চুগঞ্জ স্টেন্ডের পরিবহনগুলোকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে যখনি অন্য কোনও স্টেন্ডের গাড়ী থামান তখন তার কোনও রেহাই নেই,হাতে পায়ে ধরে অনেক গরীব-অসুস্হ চালকরা তার অসহায়ত্বের কথা বর্ণনা করিলে তিনি এর কোনও পাত্তা দেন না।ফেঞ্চুগঞ্জ স্টেন্ড শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি মাসিক দশ হাজার টাকা মাসোয়ারা আদায় করে তাদের গাড়ীগুলোকে বীরদর্পে রাস্তায় চলাচলের সুযোগ করে দেন তিনি।এতে আর দরকার পড়েনা ড্রাইভিং লাইসেন্স,গাড়ীর কাগজাদির।অনটেস্ট গাড়ীর প্রতি গাড়ী হিসেবে মাসিক কিস্তিতে তিনি তিন হাজার টাকা আদায় করেন।সব গুষের টাকার অর্ধেক চলে যায় ফেঞ্চুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সহ টি,আইর পকেটে।আর এভাবেই চলছে মনিরুজ্জামান এর নিরব ঘুষ-বাণিজ্য ও দূর্ণীতি।যেন দেখার কেউ নেই।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন পুলিশের সাথে কথা বললে তারা জানান, তার নির্দেশে বিভিন্ন পয়েন্টে আমরা দায়িত্বে আসলেও কিছু করার নেই কারণ তিনি টার্গেট দিয়ে দেন কোনদিন কতটি গাড়ি মামলা বা টোকন করতে হবে।কোনোদিন টার্গেট ফিলাপ করতে না পারলে তিনি আমাদের বিষয়ে মিথ্যে রিপোর্ট পেশ করেন উর্ধতন কর্মকর্তাকে যা আমাদের জন্য খুব কঠিন ও কষ্টদায়ক হয়ে পড়ে। ফলে তার ভয়ে আমরা অনেকেই তটস্থ।পুলিশের পোশাক পরা এই ট্রাফিক সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান একজন চিহ্নিত এবং নীরব চাঁদাবাজ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেঞ্চুগঞ্জ স্টেন্ডের একজন সিএনজি চাকক জানান,মনিরুজ্জামান শুধু মামলা দিয়ে ক্লান্ত না,তিনি কথা কাঠাকাটির জের ধরিয়া চালকদের বেদড়ক মারপিট পর্যন্তও করেন।যাহা অনেক ভুক্তভোগী আছেন সুযোগ পেলে প্রতিকার চেয়ে সবাই লিখিত অভিযোগ দিবে উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে।

চালক ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলা হলে তারা বলেন, ট্রাফিক সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান এর অন্যায় অবিচার কি দেখার কেউ নেই?তার এই নীরব চাঁদাবাজি থেকে আমরা পরিত্রান চাই।

পরিবহন মালিক,চালক ও শ্রমিকরা চাপা ক্ষোভ নিয়ে আরও বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী সিএনজি অটোরিক্সা আরপিএর শর্ত ভঙ্গ করে নির্দিষ্ট রেকার বিল হলেও আদায় করা হয় অতিরিক্ত ২৫০০ টাকা হতে ৩০০০ টাকা, আর বাস ও ট্রাক এর রেকার বিল আদায় হয় ২৫০০ টাকা,আর যদি কোনভাবে লাইসেন্স যাচাই মামলা দেওয়া হয় তাহলে তো কথাই নেই। নেওয়া হয় ১০০০০ টাকা,ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে বি.আর.টি.সি’তে যাওয়া হয়রানি,ঝামেলার ভয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যান। অনেকেই লাইসেন্স যাচাই ঝামেলা মনে করে তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যাচাই মামলাটিও মোটা অংকের বিনিময়ে তার অবৈধ ক্ষমতাবলে এখানেই নিস্পতি করে থাকেন। কিন্তু এটি বি.আর.টি.এ যাচাই-বাচাই না করার কারণে সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জে ২নং লাইসেন্স,ফিটনেসবিহীন গাড়ি প্রকাশ্যে চলছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে মারাত্বক দূর্ঘটনা আর সরকার হারাচ্ছে তার রাজস্ব। অতিরিক্ত যে টাকা আদায় করা হয় তার কোন রশিদ দেওয়া হয়না এবং এভাবেই চলছে ফেঞ্চুগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের বর্তমান কর্মকান্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, এভাবে নীরব চাঁদাবাজির মাধ্যমে ট্রাফিক সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান অবৈধ পন্থায় দৈনিক মেটা অংকের টাকা করে প্রতিমাসে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা আয় করেন। এসকল চিন্থিত দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তারা ট্রাফিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে নীরবে রাতারাতি অবৈধ উপায়ে টাকা আয় করে হয়ে যাচ্ছেন আঙুল ফুলে কলা গাছ।সরকার হারাচ্ছে তার দৈনিক লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয়।

গোপন খবরে আরো জানা যায়- বাস,মিনিবাস ও কোচ মালিকদের মাসিক কিস্তিতে থানা পুলিশের অধীনে আনার জন্যই তাদের এই প্রয়াস এবং এভাবেই প্রতিমাসে ট্রাক ড্রাইভার-মালিকদের থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। ফলে সেই পরিপ্রেক্ষিতে মালিক-শ্রমিকদের এখন একটাই দাবি, পুলিশ নামধারী এসব চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে যেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।

ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ট্রাফিক সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান,ভাই এসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি করবেন না প্লিজ,আমি আমার উর্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছি।টাকা কি শুধু আমি নেই?এই টাকার অনেক অংশ থানার অফিসার ইনচার্জ,টিআই সহ সঙ্গীয় ফোর্সদের দিতে হয়।প্রত্যেকদিন যেকোনও ভাবে প্রায় পঞ্চাশটি মামলা দিতে হয় এটা আমার চাপ আছে।মামলা না দিলে টার্গেট ফিলাপে ব্যর্থ হয়ে আমার সিনিয়রের বকাঝকা শুনতে হয়।

(দ্বিতীয় পর্বের জন্য চোখ রাখুন)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *