সিলেটে হঠাৎ করে বেড়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশ। গত ৩ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে ৬ বিদেশী নাগরিক। এদের মধ্যে ৩ জন ভারতীয়, ২ জন নাইজেরিয়ান ও একজন নেপালের। ২০২০ সালের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর সিলেটে একদিনেই ধরা পড়েছে ভারতীয় ও নেপালের দুই নাগরিক। আটককৃতদের বেশিরভাগ সময় দেখা গেছে, তারা কোন না কোন ভাবে মাদক চোরাচালানের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। ভারত থেকে মাদকদ্রব্য, অবৈধ ঔষধসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে এনে দেশের চোরাকারবারিদের কাছে পৌঁছে দেয়।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর ২০২০) সিলেটের জৈন্তাপুরে ভারতীয় নাগরিকসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩৩শ’ পিস ইয়াবা ও ৫৫০ ভারতীয় রুপি উদ্ধার করা হয়। জৈন্তাপুরের চৈলাখেল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে স্থানীয় আব্দুল্লাহ মেম্বারের ফার্মের সামনে থেকে ভারতের শিলং জেলার মুক্তাপুরের আমজলং বস্তি গ্রামের রবীন্দ্রনাথ দাশের ছেলে রিকি দাশ (১৯), জৈন্তাপুরের আদর্শগ্রামের বদরুল ইসলামের ছেলে ফারুক ইসলাম(১৮) ও একই গ্রামের মৃত জয়নাল আহমেদের ছেলে শামীম আহমেদ (১৮)-কে আটক করে র্যাব।
একই দিন সিলেট শহরতলীর শাহপরাণ এলাকা থেকে এক নেপালি নাগরিককে আটক করা হয়। সিলেটের ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে ওই ব্যক্তিকে সেনাবাহিনী আটক করে। ঐদিন রাত ৮টার দিকে তাকে শাহপরাণ (র.) থানায় হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী। পুলিশী জিজ্ঞাসাবেদে সে জানায়, তার নাম সূর্যে তামাং। তার পিতার নাম মৃত সানতা তামাং ও মাতার নাম কৃষ্ণ তামাং। সে নেপালের সোমবাড়ী থানার জাভা জেলার বাসিন্দা।
পুলিশ আরো জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে তার আচরণ সন্দেহজনক প্রতীয়মান হয়। সে হিন্দি, নেপালি মিশ্র ভাষা অল্প জানে এবং নিজের নাম অস্পষ্টভাবে নেপালি ভাষায় লিখতে পারে। তার কাছ থেকে কোন বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা অন্যান্য কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। সীমান্তের কোন পথ দিয়ে, কার মাধ্যমে, কি কারণে? সে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তদন্তক্রমে বিষয়টি জানা যাবে। এই সংক্রান্তে শাহপরাণ (রহ:) থানায় বিদেশি নাগরিক সম্পর্কিত আইন ১৯৪৬ এর ১৪ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
শাহপরাণ থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম জানান, সেনাবাহিনী ওই ব্যক্তিকে আটক করে গতকাল শুক্রবার রাত ৮টার দিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। নেপালের সাথে বাংলাদেশের সীমানা নেই তারপরেও ওই ব্যক্তি কিভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করলো এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, হয়তো পার্শ্ববর্তী দেশের সীমানা দিয়ে প্রবেশ করেছে। তবে সবকিছু তদন্ত চলেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে গত ১০ ডিসেম্বর) জেলার সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার ঘরদোয়ার নামক স্থান হতে মো. সজীব উদ্দিন মাজার ভূঁইয়া (৩০) নামের এক ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়। সে ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচর জেলার কাঠিঘোড়া থানার গনিরগ্রামের মো. শামসুদ্দিন মাজার ভূঁইয়ার ছেলে। আটককালে তার কাছ থেকে ১ হাজার পিস ইয়াবা, ১ কেজি গাঁজা ও ১টি মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করে বিজিবি। যার আনুমানিক মূল্য ৩ লাখ ১৮ হাজার ৬ শ’ ৫৫ টাকা।
গত ২২ নভেম্বর ২ নাইজেরিয়ান নাগরিককে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। সিলেটের জাফলং সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে এ দু’জন। মধ্যরাতে শহরতলির বটেশ্বর থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ভূয়া ভিসাধারী একটি পাসপোর্ট, ১টি বিমান টিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ১টি, ৪৩২০ টাকার ভারতীয় রুপি, ১৩০০ বাংলাদেশি টাকা, ২টি মোবাইল ও ২টি সিম উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া গত ৪ অক্টোবর সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের পর অপহৃত ভারতীয় নাগরিক ওয়ানশিম্পার বিয়ামকে উদ্ধার করা হয়েছে। নগরীর একটি কলোনি থেকে মহানগর পুলিশের সিআরটি ও কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি যৌথ দল তাকে উদ্ধার করে। এসময় ওই ভারতীয় নাগরিককে অপহরণের দায়ে ৪ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। সে সময় পুলিশ জানায়, ভারতীয় ওই নাগরিক বাংলাদেশি নাগরিকের কাছে গরু কেনাবেচার উদ্দেশ্যে জৈন্তাপুরের কেন্ডি গ্রামের মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন দিলু (৩০), একই গ্রামের মৃত টিয়া বিশ্বাসের ছেলে রিপন বিশ্বাসের সাথে কথা বলে তামাবিল স্থলবন্দরের কাটাতার বিহীন সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ বিজিবি দেখার কথা। তবে জেলা পুলিশও সতর্ক রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিজিবি জকিগঞ্জ ব্যটেলিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় বিসএসএফ’র শিথীলতার কারণে এসব অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটে। তিনি আরো বলেন, ভারত সীমান্তের কিছু কিছু যায়গায় এখনো কাটাতার না থাকায় অনেকসময় মানুষ ঢুকে পড়ে।