শুক্রবার জামিয়া ইসলামিয়া ই্উনুছিয়া মাদ্রাসা থেকে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে গিয়ে হামলা করেছে রেল স্টেশন, সুপার কার্যালয়, জেলা মৎস্য অধিদপ্তর, আনসার ক্যাস্পে। আগুন নিভলেও পুড়ে গেছে বহু কিছু। শনিবারও বিক্ষোভের ঘোষণা দিলেও ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজনের পর আর বের হয়নি হেফাজত কর্মীরা।
আবার হেফাজত সমর্থক কওমি মাদ্রাসা ছাত্রদের হামলায় ক্ষত তৈরি হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। রেলে বিচ্ছিন্ন হয়েছে জেলা শহর, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় এখনও পোড়া ক্ষত। মানুষের মনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।
শুক্রবারের হামলার পর শনিবার আবার বিক্ষোভের ঘোষণায় আশঙ্কা থাকলেও নিরাপত্তার ব্যাপক আয়োজনের পর আর মাঠে নামেনি মাদ্রাসা ছাত্ররা।
গোটা শহরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন। পুলিশ- র্যাবের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি।
শুক্রবার রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হেফাজতের ১৪ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম।
শুক্রবার ঢাকার বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সরকারি ডাকবাংলো, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় ও থানায় হামলার পর পুলিশের গুলিতে কয়েকজনের প্রাণহানির পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসে।
গুলিতে চার জনের প্রাণহানির খবর জানানো হলেও ছড়ানো হয় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।
হেফাজত সমর্থকরা দল বেঁধে গিয়ে হামলা চালায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনে। তারা স্টেশনের বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি রেল লাইনে আগুন দেয়।
তাদের মারমুখী অবস্থানের কারণে রেলের কর্মীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসও ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। প্রস্তুতি না থাকায় পুলিশও সেভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
বিকালে যখন রেল স্টেশন জ্বলছিল, তখন হেফাজত কর্মীরা হামলে পড়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পরে পুলিশ গুলি চালিয়ে তাদের প্রতিহত করে।
এরপর রাতে বিজিবি মোতায়েনের পর ছাত্ররা মাদ্রাসায় ফিরে যায়। তবে নানা ধরনের গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি হুমকিও দেয়া হতে থাকে।
এর মধ্যে শনিবার বিক্ষোভ ও রোববার সারাদেশে হরতালের ঘোষণা দেয় হেফাজত। ফলে সকালের পরিস্থিতি কী হয়, তা নিয়ে কিছুটা হলেও উদ্বেগ তৈরি হয় শহরবাসীর মধ্যে।
তবে সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থান নেয়ার পর মাদ্রসা ছাত্ররা আর জড়ো হয়নি।
শহরের প্রধান সড়কগুলোতে টহল দিতে দেখা গেছে বিজিবির কয়েকটি দলকে।বিজিবির একজন কর্মকর্তা জানান, বিজিবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া ক্যাম্পের পাশাপাশি ঢাকা থেকেও আনা হয়েছে আরও সদস্য।
শুক্রবার যা যা করেছে হেফাজত
স্থানীয় জামিয়া ইসলামিয়া ই্উনুছিয়া মাদ্রাসা থেকে ছাত্রদের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। তারা শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এরপর সদর থানা ঘেরাও করে শহরের ঘোড়াট্টির দুটি সেতুতে আগুন দেয়া হয়। সার্কিট হাউজে দরজা-জানালাসহ ১০টি গাড়িও ভাঙচুর করে তারা।
ছাত্ররা তাণ্ডব চালায় শহরের রেল স্টেশনেও। সেখানে বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি আগুন দেয়া হয় রেল লাইনে। আট ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট লাইনে সাতটি ট্রেন আটকা পড়ে বিভিন্ন স্টেশনে।
মাদ্রাসা ছাত্রদের এই হটকারিতার ফল ভোগ করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী। সিগন্যালিং ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শহরে আর কোনো ট্রেন থামছে না। কবে চালু হবে, সেটাও অনিশ্চিত।
স্টেশনে হামলার পর সন্ধ্যায় মাদ্রাসার ছাত্ররা পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা মৎস্য অধিদপ্তর, আনসার ক্যাম্প গিয়ে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আগুনে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাঁচটি গাড়ির সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হয়।
মৎস্য অধিপ্তরের গ্যারেজের ভেতর আগুনের কারণে অফিসের আইটি কক্ষের তিনটি কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ যাবতীয় আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক আবদুন নুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার মাদ্রাসার ছাত্ররা যে বর্বরচিত ঘটনা দেখিয়েছে তা নিন্দাজনক। শহরের পরিস্থিত স্বাভাবিক মনে হলেও জনমনে রয়েছে আতঙ্ক। ভয় রয়েছে আবারও হয় এ রকম ঘটনা ঘটে যাবে।’