ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী এক সপ্তাহে। এরপর আগামী ১১ আগস্ট থেকেই খুলে যাচ্ছে অফিস-আদালত ও দোকানপাট। একইসঙ্গে ওই দিন থেকেই সব ধরনের গণপরিবহনও চলাচল করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি সবাইকে কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এসব তথ্য জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা জানি না করোনার সংক্রমণ কবে কমবে। তবে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। ১১ আগস্ট থেকে গণপরিবহন, অফিস-আদালত ও দোকানপাট খুলে দেওয়া হবে। তবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
মানুষের চলাচল সহজ করে দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে কঠোরতার কথা জানান মন্ত্রী। বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে আমরা অনেক বেশি কঠোর হব। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করাতে প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করা হবে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, যারা কাজ করছেন, তারা ভ্যাকসিন নেবেন এবং সনদ নিয়ে কাজে যোগ দেবেন। দেশে ১৮ বছরের বেশি সব নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সবাই ভ্যাকসিন নেবেন।
আগামী সাত দিনে ১ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রিসভার সিনিয়র এই সদস্য বলেন, ১৪ হাজার কেন্দ্রের মাধ্যমে মানুষকে ওয়ার্ড পর্যায়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রতিটি ইউনিয়নে দুইটি করে কেন্দ্র থাকবে, আর সিটিতে থাকবে পাঁচ-ছয়টি কেন্দ্র। এক্ষেত্রে আমরা বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেবো। আশা করি সবাই নিজ দায়িত্বে কেন্দ্রে গিয়ে ভ্যাকসিন নেবেন।
এর আগে, গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ জারি করে আসছে সরকার। গত বছরের শেষের দিকে সংক্রমণ কমে এলে জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল। তবে এ বছরের মার্চ থেকে ফের সংক্রমণ বাড়তে থাকলে সরকারকে ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়।
এর অংশ হিসেবে গত ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। পরে সেই বিধিনিষেধ আরও দুই দিনের জন্য বাড়ানো হয়। আর ১৪ এপ্রিল থেকে আট দিনের জন্য জারি করা হয় কঠোর বিধিনিষেধ। পরে দফায় দফায় সেই কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে অবশ্য ধীরে ধীরে বিধিনিষেধের আওতা কমতে থাকে। জুনের শেষ নাগাদ ফের প্রায় স্বাভাবিকতায় ফিরে আসে দেশ।
এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ ও করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু ফের নতুন করে রেকর্ড ছাড়াতে শুরু করে। এ অবস্থায় ১ জুলাই থেকে সাত দিনের জন্য ফের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। পরে ১৪ জুলাই পর্যন্ত সেই বিধিনিষেধ বাড়ানো হয়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত এসব বিধিনিষেধ শিথিল ঘোষণা করেছিল সরকার। তবে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধের আদেশ ছিল। সেটি এবার বাড়ানো হলো ১০ আগস্ট পর্যন্ত। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ১১ আগস্ট থেকে ফের বিধিনিষেধ শিথিল করে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে জোর দিচ্ছে সরকার।