চা বিরতির আগে-পরে মিলিয়ে মিনিট বিশেকের একটা ঘুর্ণি-ঝড় তুললেন বাংলাদেশ দলের তিন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান ও তাইজুল। যে ঘুর্ণিঝড়ে পড়ে বেসামাল হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের শেষ ৫ উইকেট হারায় মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে! তাতে ৫ উইকেটে ২৫৩ থেকে ২৫৯ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ১৭১ রানের লিড। দিন শেষে যে লিডটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৮। দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ যে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৪৭ রান নিয়ে।
শুধু মুমিনুল হকের দলই নয়, প্রথম ইনিংসে পাওয়া বড় লিডের দিকে তাকিয়ে মুখে চওড়া হাসি হাসছিল বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরাও। কিন্তু নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর পরই বাংলাদেশের সেই হাসি উধাও। ক্যারিবীয় যে ঝড়ের কবলে পড়ে শেষে সর্বশান্ত হয়েছে, বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ঠিক তেমন একটা ঝড়ের কবলেই পড়ে! তবে ভাগ্য ভলো যে, বাংলাদেশের ইনিংসে ক্যারিবীয় স্পিনার রাহকিম কর্নওয়ালের তোলা ঘুর্ণি-ঝড়টা ছিল মাত্র ৩ বলের! তাতেই ২ উইকেট হারিয়ে ভয়ে কাঁপতে থাকে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে পাওয়া ১৭১ রানের বিশাল লিডের দিকে তাকিয়েও সেই কাঁপন থামতে চাইছিল না। কর্নওয়ালের মিনিট দুয়েকের ঘুর্ণিঝড়ে বাংলাদেশ যে ২ উইকেট হারিয়ে বসে দলীয় ১ রানের মাথায়! দলকে ১ রানে রেখে তিন বলের মধ্যে প্যাভিলিয়নের বাসিন্দা বনে যান তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তামিম-নাজমুল, দুজনকেই দলকে এবার উপহার দেন ‘ডাক’। ১ রানের মাথায় পরপর
দুই উইকেট হারানোর পর পেছনের পুঁজির কথা ভেবে গাল ফুলিয়ে হাসির উপায় থাকে!
শুরুর ওই বিপদ সামলে দলকে তোলার চেষ্টায় নামেন সাদমান ইসলাম ও অধিনায়ক মুমিনুল হক। দুজনে মিলে ৩২ রানের জুটি গড়ে দলকে ৩৩ পর্যন্ত নিয়েও যান। কিন্তু তখনই আবার ঘনিয়ে আসে বিপদ। প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করা সাদমান ইসলাম আউট হয়ে যান মাত্র ৫ রান করে। ফলে চাপটা আবার বাড়ে বাংলাদেশের উপর।
দিন শেষেও চাপটা রয়েছেই। ফলে চতুর্থ উইকেটে ১৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ভয়-স্বস্তির মিশ্র অনুভূতি নিয়েই দিন শেষ করেছে টাইগাররা। অধিনায়ক মুমিনুল ৩১ এবং মুশফিকুর রহিম উইকেটে আছেন ১০ রান নিয়ে। প্রথম ইনিংসের বড় লিডটা থাকায় ভয়টা কম। নয়তো ৪৭ রানে ৩ উইকেটে দিন শেষ করার কাঁপনিটা যে কতটা তীব্র হতো, সেটা অনুমেয়ই!
এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২ উইকেটে ৭৫ রান শুরু করে তৃতীয় দিনের খেলা। বাংলাদেশ মাঠে নামে বড় একটা দুশ্চিন্তা কাঁধে করে। মাঠে নামার আগে ওয়ার্মআপ করার সময় কুঁচকির পুরোনো চোটেই নতুন করে চোট পেয়েছেন সাকিব। ফলে তাকে যেতে হয় স্ক্যান করাতে। বাংলাদেশকে তাই মাঠে নামতে হয় সাকিবকে ছাড়া। পুরোটা দিনা পাড় করতে হয়েছে সাকিবকে বাইরে রেখে। যতটুকু জানা গেছে চট্টগ্রাম টেস্টে হয়তো আর বোলিংই করতে পারবেন না সাকিব।
মানে দ্বিতীয় ইনিংসেও সাকিব দুশ্চিন্তাটা রয়েই গেছে। বোলার সাকিবকে আজও মিস করেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট নিখাঁদ স্পিন স্বর্গ। অথচ দলের সেরা স্পিনারের সেবাটাই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। তাকে ছাড়াই ক্যারিবীয়দের ২৫৯ রানে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলামরা। সাকিব থাকলে ক্যারিবীয়দের যে আরও কমে প্যাকেট করে ফেলা যেত, সেটি স্পষ্টই।
যাই হোক. সাকিবের অনুপস্থিতিতে দুর্দান্ত বোলিংই করেছেন মিরাজ, নাঈম. তাইজুলরা। তবে বাকি দুজনের তুলনায় বেশি সফলতা দেখিয়েছেন মিরাজ। ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করা মিরাজ বল হাতেও নিয়েছেন ৪ উইকেট। এছাড়া নাঈম ও তাইজুল নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। ২টি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজও। তবে তিনি দুটি উইকেটই নিয়েছিলেন দ্বিতীয় দিন বিকালে।
২উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিনের প্রথম বলেই এনক্রুমাহ বোনেরকে হারিয়ে বসে। বোনেরকে ফিরিয়ে দিয়ে দিনের শুরুতেই বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন তাইজুল। এরপর ক্যারিবীয় অধিনাায়ক ক্রেইগ ব্রাফেট কাইল মেয়ার্স মিলে গড়ে তোলেন ৫৫ রানের জুটি। ৭৬ রান করা ব্রাফেটকে বিদাায় করে এই জুটি ভাঙেন নাঈম হাসান। ব্রাফেটের বিদায়ের খানিকক্ষণ পর কাইল মেয়ার্সও প্যাভিলিয়েনে ফিরে যান। তাকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মানে প্রথম সেশনেই বাংলাদেশ পায় ৩ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় ৫ উইকেটে ১৮৯ রান নিয়ে।
১৫৪ থেকে দলকে ওই পর্যন্ত নিয়ে যান জারমেইন ব্ল্যাকউড ও জশুয়া ডি সিলভা জুটি। মধ্যাহ্ন বিরতির পর এই জুটি আরও ঝেকে বসে। মিরাজ, তাইজুল, নাঈমরা কিছুতেই জুটিটা ভাঙতে পারছিলেন না। বশেষে চা বিরতির ঠিক আগে আগে জশুয়া ডি সিলভাকে ফিরিয়ে জুটিটা ভাঙেন নাঈম হাসান। ঠিক পরের ওভারেই ব্ল্যাকউডকেও ফিরিয়ে দেন মিরাজ। ২৫৩ রানে দাঁড়িয়েই ডি সিলভা ও ব্ল্যাকউডকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্ল্যাকউডের বিদায়ের মধ্যদিয়েই চা বিরতির ঘোষণা দেন আম্পায়াররা। চা বিরতি থেকে ফিরে মাত্র ৩ ওভারে ক্যারিবীয়দের শেষ ৩ উইকেট তুলে নেন মিরাজ ও তাইজুল।