গতকাল বেলা সোয়া ১১টা থেকে টানা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে মহানগরীসহ সিলেটের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে সিলেটের আখালিয়ার কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে এই অবস্থায় আছে সিলেট। আগুন লাগার এক ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী।
এ বিষয়ে আজ বুধবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, গতকাল রাত থেকে প্রায় ২০০ কর্মী কাজ করছেন। আজ দুপুরের আগে মেরামত করা কিছু পিলার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ বিকেলের দিকে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে বাকি এলাকায় কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।
আগুন লাগার পরপর সিলেট মহানগরী পুরোটাসহ বিভাগের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিকল্প ব্যবস্থায় সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
এদিকে সিলেট নগরীর ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নগরে পানি সরবরাহ করতে পারছে না। বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে চরম দুরবস্থার মধ্যে আছেন চিকিৎসাধীন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। অধিকাংশ বিপণিবিতান ও দোকানপাট অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। পাশাপাশি কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই পুরো নগরজুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। রাত বাড়ার সাথে সাথে অন্ধকার নগরী ফাঁকা হতে থাকে। রাস্তাঘাট ও বিপনীবিতানগুলো থেকে লোকজন কমতে শুরু করে। কমে যায় নগরীতে যানচলাচল।
টানা বিদ্যুতহীনতায় বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। বিদ্যুৎ না থাকায় দুপুর থেকেই বাসা-বাড়ি, মসজিদসহ নানা স্থানে পানিসহ নানা সংকট সৃষ্টি হয়। বিদ্যুতের অভাবে অনেক গৃহস্থালী কাজ ব্যাহত হয়।
অনেক ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকায় যানবাহন জ্বালানি সমস্যায় পড়েছে। বিশাল এলাকায় জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও মোবাইল চার্জ দেওয়া, ইন্টারনেট সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে সিলেটে। রাতে চড়া দামে মোমবাতি বিক্রয় হতে দেখা গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, নগরে প্রায় ৮ লাখ বাসিন্দার দৈনিক পানির চাহিদা রয়েছে ৮ কোটি লিটার। এর মধ্যে ৪ থেকে ৫ কোটি লিটার সিটি কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করতে পারে। যদিও নগরে সাড়ে ৫৪ হাজার হোল্ডিংয়ের মধ্যে পানির গ্রাহক রয়েছেন সাড়ে ১৬ হাজার। গতকাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন লাগার আগে প্রায় ১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা গেছে। এ অবস্থায় নগরবাসী হঠাৎ করে তীব্র পানির সংকটে পড়ে গেছেন। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না জানিয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গতকাল নগরে মাইকিং করা হয়েছে।
নগরের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতাদের উপস্থিতি কমে গেছে। একনাগাড়ে জেনারেটর চালিয়ে ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও সেবা দিতে পারছে না। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামত করা না গেলে ভোগান্তি সহজে দূর হবে না।
জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় শহরে মানুষ কমে গেছে। এরকম নগরী আমি কখনো দেখিনি। বাসায় দেখা দিয়েছে জানিয়েছে পানির সংকট। পানি বাইরে থেকে কিনে নিতে হচ্ছে।’