জাহাজের দুই পাশে এখন পর্যন্ত আটকা পড়েছে প্রায় ৯৬০ কোটি ডলারের পণ্যবাহী বিপুলসংখ্যক জাহাজ। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪০ কোটি ডলারের বাণিজ্য আটকে যাচ্ছে।
সুয়েজ খালে আটকে থাকা জাহাজটি সরাতে কয়েক দিন, এমনকি সপ্তাহও লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আলজাজিরা জানিয়েছে, বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই বাণিজ্যিক নৌপথ অচল হয়ে পড়ায় লোহিত ও ভূমধ্যসাগরে দীর্ঘ হচ্ছে অপেক্ষমান পণ্যবাহী জাহাজের সারি।
গত মঙ্গলবার সরু খালপথটি পার হওয়ার সময় তীরে আটকে যায় এভারগ্রিন নামের দুই লাখ টন ওজনের একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ। এটিকে সরাতে চার দিন ধরে কাজ করছে অনেকগুলো টাগবোট ও ড্রেজার।
সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত নড়ানো যায়নি এভারগ্রিনকে।
৪০০ মিটার লম্বা আর ৫৯ মিটার প্রশস্ত এভার গ্রিন ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ২০ হাজার কন্টেইনার বহনে সক্ষম।
বিবিসি জানিয়েছে, জাহাজের দুই পাশে এখন পর্যন্ত আটকা পড়েছে প্রায় ৯৬০ কোটি ডলারের পণ্যবাহী বিপুলসংখ্যক জাহাজ। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪০ কোটি ডলারের বাণিজ্য আটকে যাচ্ছে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রপথে জাহাজের জট এড়িয়ে পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখতে শুক্রবার থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানি সুয়েজ খাল বাদ দিয়ে ভিন্ন পথে যেতে জাহাজগুলোকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম তরল প্রাকৃতিক গ্যাসবাহী (এলএনজি) সাতটি ট্যাঙ্কার। এগুলোর মধ্যে অন্যতম তিনটি ট্যাঙ্কারকে কেপ অফ গুড হোপ হয়ে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে দীর্ঘতর পথ পাড়ি দিতে হবে।
মিসরের সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কমপক্ষে ২০ হাজার ঘনফুট বালি সরানোর পর আবারও এভারগ্রিনকে নড়ানোর চেষ্টা করা হবে। এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ শতাংশ ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে জাপানের সময় শনিবার রাত নাগাদ জাহাজটিকে সরানো যেতে পারে বলে এর জাপানি মালিক প্রতিষ্ঠান শোয়েই কিসেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। যদিও কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেও উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে বাড়ছে তেলের দাম। গন্তব্যে তেল পৌঁছাতে সপ্তাহ লেগে যেতে পারে, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানির সংকট তৈরি হতে পারে- এসব আশঙ্কায় শুক্রবার কমপক্ষে তিন শতাংশ দর হারিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তেল।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে নিম্নমুখী ছিল তেলের আন্তর্জাতিক বাজার।
সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ১০ শতাংশই পরিচালিত হয় দেড় শ বছরের পুরোনো সুয়েজ খালের মাধ্যমে। ২০২০ সালে এ পথ অতিক্রম করেছে ১০০ কোটি টনের বেশি ওজনের প্রায় ১৯ হাজার জাহাজ। অর্থাৎ দিনে খালটি পার হয়েছে ৫১টির বেশি জাহাজ।