ঢাকা: ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার বিচারকার্য শেষ হয়নি পাঁচ বছরেও। আদালতে সাক্ষী না আসায় ও করোনাভাইরাসের প্রভাবে আদালতে সাধারণ ছুটি থাকায় বিচার কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ ছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, মামলাটির এ বছর বিচার সম্পন্ন হবে। বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তাবেলা। ওই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের করা মামলায় বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। তবে এতোদিনে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে রায়ের পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল। ওই দিন মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জেহাদ হোসেন সাক্ষ্য দেন। তবে তার সাক্ষ্য শেষ হয়নি। আদালত আগামী ১৪ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। বিজ্ঞাপন
মামলাটির সম্পর্কে মহানগর দায়রা জজ আদালতের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল সারাবাংলাকে জানান, অনেক আগেই মামলার বিচারকাজ শেষ হতো। করোনাভাইরাসের কারণে মামলার বিচার শেষ হতে বিলম্ব হয়েছে। মূল তদন্ত কর্মকর্তা ও মামলার বাদীর সাক্ষ্য শেষ হলে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায় শেষ হবে। আশা করছি, এ বছরই মামলাটির বিচার শেষ হবে। মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন আদালত।
অন্যদিকে মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এ ঘটনার সঙ্গে আব্দুল মতিনের সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনার পর দীর্ঘদিন তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ বিষয়ে থানায় একটি জিডিও করা হয়। অনেক দিন পর তাকে মামলাটিতে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলমান রয়েছে। কোনো সাক্ষীই আদালতে মতিনের নাম বলেননি। আমরা আশাবাদী, তিনিসহ অন্যান্য আসামিরা এ মামলা থেকে খালাস পাবেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ৯০ নম্বর সড়কের পশ্চিম প্রান্তে গুলশান এভিনিউ সংলগ্ন গভর্নর হাউজের দক্ষিণের দেয়াল ঘেষা ফুটপাতে দুর্বৃত্তরা তাবেলা সিজারকে গুলি করে। ওই সময় স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়।
ওই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি হেলেন দার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়। বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালের ২৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী। একই বছরে ২৪ আগস্ট তৎকালীন মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করেন।
চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলেন কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ও সোহেল।
আসামিদের মধ্যে তামজিদ আহমেদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল, মতিন ও শাখাওয়াত আদালতে বিভিন্ন সময়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে কাইয়ুম ও সোহেল পলাতক। এছাড়া মতিন জামিনে এবং বাকি চার আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
মামলার চার্জশিট থেকে জানা যায়, হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করতে এই পরিকল্পনা করা হয়। আসামি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাবেলা সিজারকে হত্যা করে।
২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত আসামি মতিনের নির্দেশে শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউজের সীমানা প্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার জায়গায় তামজিদ গুলি করে তাভেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।